ছয়
শতাধিক চবিয়ানের উপস্থিতিতে একটি সর্বজনীন, চমৎকার ও সফল মিলনমেলা শনিবার
(৫ জুলাই ২০২৫) কুমিল্লার ফান টাউনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি
উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. এনায়েত
উল্যা পাটওয়ারী, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের প্রভোস্ট জনাব এ.জি.এম নিয়াজ
উদ্দিন, রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মোশারেফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক
ছাত্রনেতা অধ্যাপক রেজাউল করিম এবং সিডনি, অস্ট্রেলিয়া; ক্যাম্বেলটাউন সিটি
কাউন্সিলের কাউন্সিলর জনাব আশিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ
আব্দুল হান্নানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক ও
মোহাম্মদ হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। সার্বিক ব্যবস্থাপনায়
ছিলেন আহমেদ শিহাব উল্লাহ, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির গ্রন্থাগার ও বিনোদন
সম্পাদক এডভোকেট জহিরুল ইসলাম এবং ফেরদৌস সায়েম ভূঁইয়া।
প্রধান অতিথির
বক্তব্যে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, প্রথমেই আমি কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করছি এ প্রাণবন্ত এবং হৃদয়স্পর্শী মিলনমেলার আয়োজকদের প্রতি। তিনি
বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মিলনমেলা কুমিল্লা ২০২৫’ শুধু একটি
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান নয়; এটি আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের
অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে এক দৃঢ়সেতুবন্ধন।
তিনি আরও বলেন,
আপনাদের সফলতা, নেতৃত্ব এবং সমাজে অবদান আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমি
বিশ্বাস করি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু পুঁথিগত জ্ঞানে
নয়, মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং দেশপ্রেমেও সমৃদ্ধ।
উপাচার্য বলেন,
আমাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ রকম আত্মিক সংযোগ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশাসনের জন্য প্রেরণার উৎস। এ সম্পর্ক আরও গভীর হোক-গবেষণা, স্কলারশিপ,
ক্যারিয়ার গাইডেন্স এবং নানা একাডেমিক সহায়তায় আপনারা আমাদের পাশে
থাকবেন—এটাই প্রত্যাশিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ
শামীম উদ্দিন খান বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের
মাঝে এসে নিজেকে ধন্য মনে করছি। একাডেমিক উন্নয়ন কেবল পাঠ্যপুস্তক বা
শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ নয়—এটি বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন দেখে বোঝা যায়।
আজকের এ অনুষ্ঠানে সেই প্রতিফলন স্পষ্ট।
তিনি আরও বলেন, আপনারা সমাজের
বিভিন্ন পর্যায়ে যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা নতুন প্রজন্মের জন্য এক
অসাধারণ উদাহরণ। আমি আশা করি, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণা
কার্যক্রমে আপনার মেধা, অভিজ্ঞতা ও সম্পদ দিয়ে অবদান রাখবেন।
উপ-উপাচার্য
প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এখন গুণগত শিক্ষা ও
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এ যাত্রায় প্রাক্তনদের
সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত কাম্য।
তিনি আরও বলেন, আজকের এ পুনর্মিলনী
আমাদের সকলের জন্য এক আনন্দঘন ও আবেগপূর্ণ মুহূর্ত। প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ
থেকে আমি জানি, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন
কর্মকাণ্ডে নীরবে-নিভৃতে সহায়তা করে চলেছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়
শুধু একটি ভবন নয়, এটি একটি স্মৃতি, এক আত্মিক বন্ধন। সে বন্ধন আজ এখানে
দৃশ্যমান-কুমিল্লায় যেন আমরা চবি ক্যাম্পাসেরই একটি পুনঃসৃষ্টি দেখছি। তিনি
প্রত্যাশা করেন, এ মিলনমেলা থেকে একটি সক্রিয় অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক গড়ে
উঠবে, যা প্রশাসনিক, অবকাঠামোগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদে অবদান
রাখবে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বয়সের মানদণ্ডে যুবক, মধ্যবয়স্ক এবং প্রবীণ
সকল শ্রেণির সাবেক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। আয়োজনে ছিল
সকালের নাস্তা, দুপুরে কাচ্চি বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, ফিরনি, বোরহানি,
কোল্ড ড্রিংকস এবং পর্যাপ্ত পানি; বিকেলে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, জিলাপি ও
আইসক্রিম। সারাদিন পর্যাপ্ত কফির ব্যবস্থাও ছিল।
এছাড়াও স্মৃতিচারণ করেন
কুমিল্লায় অবস্থানরত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের সাবেক
শিক্ষার্থীবৃন্দ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশনা করেন বাংলা গানের যুবরাজ
খ্যাত কুমিল্লার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর, চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত কাওয়ালী শিল্পীগোষ্ঠী আজাদী মঞ্চ এবং কুমিল্লা
মহানগরীর ইতিবৃত্ত সংসদ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় সাহিত্যিক ও শৈল্পিক
মানদণ্ডের কোনো ঘাটতি ছিল না; বরং প্রতিটি উপস্থাপনায় ছিল এক আলাদা আবেদন।
ডেলিগেটদের জন্য উপহার হিসেবে ছিল চমৎকার একটি ব্যাগ, গেঞ্জি, মগ ও সুভেনির
(স্মারক)।
আলোচনার পাশাপাশি পুরো সময় জুড়ে দীর্ঘদিনের পুরোনো বন্ধুদের
সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা, জুনিয়র-সিনিয়র কুশলাদি, মতবিনিময়,
আড্ডা-গল্প ও ছবি তোলার মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত সময় কেটেছে চবিয়ানদের। অনেকেই
ছিলেন যাদের নাম শোনা ছিল, কিন্তু কখনো দেখা হয়নি-সেই আক্ষেপও পূরণ হয়েছে
গতকাল।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত, কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা এই মিলনমেলায়
সদ্বস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রকৃত অর্থেই এটি ছিল একটি সফল
মিলনমেলা।