আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এণ্ড কলেজের পাশে নির্মিত ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেছে দৃর্বৃত্তরা। তবে কখন বা কারা ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেছে এ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে পারছেন না।
বুধবার (২৬ জুন) ম্যুরাল ভাঙার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও ম্যুরালটি পুনস্থাপনের দাবি জানান। এদিকে এ বিষয়টি কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে জানানো হলে তিনি ম্যুরালটি পুনস্থাপন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের এবং দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করা জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে কুমিল্লা নগরীর রাজবাড়ি এলাকায় জেলা প্রশাসনের অধীন সরকারি জায়গায় কালেক্টরেট স্কুল এণ্ড কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের পরিবারের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে একটি শহীদ মিনার এবং ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ওই শহীদ মিনার ও ম্যুরাল উদ্বোধন করেন তৎকালীন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জমান কল্লোল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বুলি ইসলাম। ম্যুরালের পাশেই বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের পৈত্রিক বাড়ি।
কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এণ্ড কলেজের অধ্যক্ষ নারগিছ আক্তার বলেন, রফিকুল ইসলামের ভাগিনা মেরাজ আহমেদ রাজ উদ্যোগ নিয়ে এ শহীদ মিনার ও মুর্যাল স্থাপনে অর্থ সহায়তা করেন। উদ্বোধনের পর থেকে এ স্থাপনা আমরা দেখভাল করে আসছিলাম। কালেক্টরেট স্কুল এণ্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন ওই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিলেন।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেখা দেয় ননা সমালোচনা। তবে এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা কেউ মুখ খুলেননি। স্থানীয় বাসিন্দরাও ভয়ে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে রুপ দিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের অবদান অপরিসীম। তার স্মরণে স্থাপিত ম্যুরালটি ভেঙ্গে ফেলার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। তাই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ম্যুরালটি পুনস্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মৃতিরক্ষায় ও তার সম্মানে ম্যুরাল পুনস্থাপনসহ যা কিছু করণীয় সবকিছুই করা হবে।
১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রফিক তাঁর সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সংগঠন দাঁড় করান এবং অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রচেষ্টা শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এ গৌরবময় অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাঁদের সংগঠন একুশে পদক লাভ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর সকালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।