নিজস্ব
প্রতিবেদক: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক
নিয়োগে নিবন্ধিত প্রার্থীদের আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি ‘দু-একদিনের’ মধ্যে
জারি করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ-এনটিআরসিএ।
গণবিজ্ঞপ্তি জারির প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে এনটিআরসিএ। তার আগে শেষ
বারের মত শূন্য পদের তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
এনটিআরসিএ এর চেয়ারম্যান
পদে দায়িত্বরত সদস্য মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী রোববার বিকালে বলেন,
“বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি দু-একদিনের মধ্যেই জারি করা হবে।
আমরা ১ লাখ ১ হাজারের কিছু বেশি শূন্য পদের তথ্য পেয়েছি। তবে এগুলোর কিছু
কিছু তথ্যে ভুল আছে। তাই শূন্য পদের সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে।”
সোমবার এ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলেও আভাস দিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি
বলেন, “গত ৪ জুন এনটিআরসিএর বোর্ড সভায় গণবিজ্ঞপ্তিতে জারির চূড়ান্ত
অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সোমবারই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।”
বেসরকারি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন স্তরের শিক্ষক-প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে
প্রার্থীদের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। শিক্ষক
নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ হলে
প্রার্থীরা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ পান। আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে,
শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর।
এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ওই সনদ ব্যবহার করে প্রার্থীরা নিয়োগ পেতে অনলাইনে
আবেদন করতে পারেন। প্রার্থীরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ফি জমা দিয়ে একটি
নির্দিষ্ট সংখ্যক পদে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
বিভিন্ন পদের বিপরীতে
আবেদন করা প্রার্থীদের মধ্যে যে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর
পেয়েছেন, তাকেই ‘স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায়’ নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করবে
এনটিআরসিএ।
পরে পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর নির্বাচিত প্রার্থীরা চূড়ান্ত সুপারিশ পেলে শিক্ষক পদে যোগদান করতে পারবেন।
সরকারের
যুগ্মসচিব নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, “আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে
শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর। সে হিসাবে ১৭তম ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন।”
কোনো
প্রার্থীর সনদের মেয়াদ থাকলেও তার বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে তিনি
গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন না বলেও জানান এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পদে
দায়িত্বরত এ সদস্য।
রোববার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি
না পাওয়া সনদধারীরা বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির দাবিতে লং মার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি
পালন করেছেন।
আলাদাভাবে এ কর্মসূচি ডাকেন ১-১৭তম ও ১-১২তম শিক্ষক
নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরি না পাওয়া সনদধারীরা। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীরা আপিল বিভাগের রায় অনুসারে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ করে অন্তত একবার আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তাদের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
প্রায়
এক বছর এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌনে এক লাখ শিক্ষক
পদ শূন্য। ফলে সংকটে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো; অথচ দেশের বেশিরভাগ
শিক্ষার্থীই পড়াশোনা করে এসব প্রতিষ্ঠানে।
তবে, যোগ্য নিবন্ধিত প্রার্থী না থাকায় শূন্যপদের সবগুলো পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এনটিআরসিএর সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকী।
তিনি
বলেন, “কিছু কিছু পদে নিয়োগে জন্য প্রার্থী নেই। যেমন চারু ও কারুকলা
বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদ খালি আছে প্রায় ১০ হাজার, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে এ
পদের বিপরীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন কয়েকশ।
“আর ১৭তম নিবন্ধনে যারা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তারা ইতোমধ্যে শিক্ষকতা করছেন। এ বিষয়ের সবগুলো পদ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পূরণ হবে না।”
মাদ্রাসার
সহকারী মৌলভী, ভৌতবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), কলেজের
আইসিটি বিষয়ে প্রভাষকসহ কয়েকটি বিষয়ের শূন্যপদ পূরণ হবে না বলেও আশঙ্কা
প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
দেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
সংখ্যা ৩০ হাজার ৮২৬। এরমধ্যে স্কুল ১৭ হাজার ৬৩৪টি, কলেজ ২ হাজার ৮৬৮টি,
মাদ্রাসা ৮ হাজার ২২৯টি এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২ হাজার ২২২টি।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক বা সমপর্যায়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব এনটিআরসিএ এর।