শিক্ষা প্রকৃত মানুষ হওয়ার প্রধান মাধ্যম বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
শুক্রবার
(১৩ জুন) বিকেলে কাজীর দেউড়ির একটি কনভেনশন হলে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির
বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে বৈকালিক ভৈষজ্য সংঘদান, ধর্মসভা, গুণীজন
সংবর্ধনা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টিবৃন্দ ও কৃতী শিক্ষার্থী
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি
বলেছেন, গুণীজনরা দেশ ও সমাজের অগ্রণী প্রদর্শক আর শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন সেই
পথের পথিক। প্রকৃত শিক্ষা যে অর্জন করেছে সে কখনো অহংকারী হবে না , সে
কখনো দাম্ভিক হবে না। সে বিনয়ী হবে। শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করা যাবে না।
তিনি
বলেন, আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি হতে হবে আনন্দমুখর। যেখানে মানবিক মূল্যবোধ
ধারণ করে সমাজে একজন ভালো মানুষ হওয়ার পথে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
অনুষ্ঠানে
আশীর্বাণী দেন বাংলাদেশি বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু, একুশে
পদকপ্রাপ্ত, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ, ভদন্ত ড. জ্ঞানশ্রী
মহাস্থবির। তিন পর্বে সভাপতিত্ব করেন উপসংঘরাজ শাসনভাস্কর শাসনপ্রিয়
মহাস্থবির, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রঞ্জন বড়ুয়া ও বৌদ্ধ
সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন আদর্শ কুমার বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের
উদ্বোধনকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ছয়
মাস আগে মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আমার মধ্যে যে চিন্তা ছিল গ্রিন, ক্লিন,
হেলদি ও সেফ সিটি গড়ে তোলা। এখানে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি এক ও অভিন্ন
হবো। একসঙ্গে সবাই মিলে নিরাপদ শহর গড়ে তুলবো। এখানে কোনো হানাহানি,
হিংসা, বিদ্বেষ, বৈষম্য থাকবে না। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করবো। এ অঙ্গীকার
আমরা করছি। এ শহরকে ভালোবাসুন। আমরা কিন্তু যত্রতত্র ময়লা, প্লাস্টিক,
পলিথিন ফেলবো না। নালা ও খালে বর্জ্য ফেলবো না, অপরিষ্কার করবো না।
করোনার
নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। অলরেডি সাতজন শনাক্ত
হয়েছে। কাজেই সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে
শক্তিশালী, মারাত্মক। এটা ছোঁয়াছে রোগ। মাস্ক পরতে হবে। ভিড় এড়িয়ে চলতে
হবে। যে সচেতনামূলক কাজগুলো করোনার সময় করেছি সেগুলো করতে হবে। ভিটামিন-এ
সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে যাতে শরীরে রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার গ্রো
করে। চিকিৎসক হিসেবে বলছি, ভয় পাবেন না। ভয়ের কারণে নেই। আমাদের পর্যাপ্ত
টেস্ট কিট রয়েছে। কেউ যদি মনে করেন ফুসফুসে সমস্যা হচ্ছে, করোনার নতুন
ভ্যারিয়েন্ট নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুসে আঘাত করবে। তাৎক্ষণিক রেডিড এন্টিজেন্ট
পরীক্ষা যেকোনো হাসপাতালে হবে। চমেক, বিআইটিআইডি, সিভাসু, চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়- এ চারটি বড় কেন্দ্রের পাশাপাশি অনেক ক্লিনিকে পিসিআর টেস্ট
হচ্ছে। করোনা রোগীদের জন্য আন্দরকিল্লার জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। চসিকের মেমন-২ হাসপাতালে ২০
শয্যার কর্নার প্রস্তুত করছি। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করোনা প্রতিরোধ করতে
চাই।
বিশেষ অতিথির ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো.
জিয়াউদ্দীন। বক্তব্য দেন উপসংঘরাজ সদ্ধর্মবারিধি প্রিয়দর্শী মহাস্থবির,
সদ্ধর্মনিধি উপসংঘরাজ ধর্মদর্শী মহাস্থবির। অনুষ্ঠানে দেশ ও সম্প্রদায়ে
নানাবিধ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৬ গুণীজনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তারা হলেন-
স্বাধীনতা ও একুশে পদকে ভূষিত টাঙ্গাইল কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের
পরিচালক ও ভাষাসংগ্রামী প্রতিভা মুৎসুদ্দী, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পদকে
ভূষিত বরেণ্য ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক-সাহিত্যিক
সুব্রত বড়ুয়া, সাহিত্যিক-গবেষক, সংগঠক অধ্যাপক বাদল বরণ বড়ুয়া, একুশে
পদকপ্রাপ্ত, লেখক প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া ও শিল্পপতি স্বপন কুমার চৌধুরী।
সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ
চাকমা, মেজর (অব.) ডা. অজয় প্রকাশ চাকমা, ব্যাংকার (অব.) মং হলা চিং,
রাজনীতিবিদ সুশীল চন্দ্র বড়ুয়া, রাজীব কান্তি বড়ুয়া, রুবেল বড়ুয়া ও অধ্যাপক
ববি বড়ুয়া।
ধর্মদূত ভদন্ত তিলোকাবংশ মহাস্থবির, ড. সৌমেন বড়ুয়া ও
রুমিলা বড়ুয়ার সঞ্চালনায় গুণীজনদের পক্ষ থেকে অনুভূতি প্রকাশ করেন বিএনপি
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, দানশীল
ব্যক্তিত্ব স্বপন বড়ুয়া চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির
যুগ্ম মহাসচিব (অব.) ফরেস্ট রিসার্চ অফিসার অরুন কুমার বড়ুয়া দেবু , বুদ্ধ
পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদের সভাপতি, প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসার (অব.) রিটন
কুমার বড়ুয়া ও উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী, চট্টগ্রাম সিটি
কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অব.) ইঞ্জিনিয়ার অসীম কুমার বড়ুয়া।
বক্তব্য
দেন ভদন্ত বসুমিত্র মহাস্থবির, প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির, শাসনানন্দ
মহাস্থবির, পরমানন্দ মহাস্থবির, শীলভদ্র মহাস্থবির, প্রজ্ঞাজ্যোতি
মহাস্থবির, ড. ধর্মকীর্তি মহাস্থবির, শাসনশ্রী মহাস্থবির. ডবনয়পাল
মহাস্থবির, বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান সপু
বড়ুয়া।
শিল্পী তাপস বড়ুয়ার পরিচালনায় ছিল উদ্বোধন সংগীত। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন সত্যপ্রিয় বড়ুয়া।
বুদ্ধ
পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমিতির বার্ষিক প্রকাশনা সংগঠনের
প্রকাশনা সম্পাদক রাঙামাটি সরকারি কলেজের (অব.) অধ্যক্ষ প্রফেসর তুষার
কান্তি বড়ুয়ার সম্পাদনায় ‘বিশ্বমৈত্রী’ প্রকাশিত হয়।