পাচারের টাকা উদ্ধারে দেশের আদালতের পাশাপাশি বিদেশেও মামলা করবে সরকার বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তবে কী ধরনের মামলা করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন আইনজীবীরা। সরকার চাইলে এখনই আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলেনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফর করে আসা আহসান মনসুর দেশটির বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পাচার করা অর্থ উদ্ধার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়ার কথাও তুলে ধরেন।
তিনি আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে আইনি সহায়তা দেয় এমন বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
তিনি বলেন, এসব আন্তর্জাতিক আইনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পাচার করা অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারে প্রস্তাবও দিয়েছে। তারা এজন্য ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তারা মনে করছে, এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে সেটা উঠে আসবে।
গভর্নর বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ধারকরা অর্থের ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পাবে। তবে চূড়ান্ত পরিমাণ আদায়ের অর্থের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, “পাচারের টাকা উদ্ধার ধাপে ধাপে এগোতে হবে। চূড়ান্ত রায় না পেলে সম্পদ উদ্ধার করা যাবে না। তাই যথাযথ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আদালতে দেওয়ার জন্য তৈরি করতে হবে যাতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় এসব সম্পদ আদায় করতে পারি। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে আমরা যেটা দাবি করছি তা সঠিক কি না।
”আরেকটি পদ্ধতিতে আদায় করা যায় তা হল এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) পদ্ধতি। সেখানেও একটা প্রক্রিয়া আছে তা নিয়ে আইনজীবীরা আলোচনা করবে।”
সরকার এডিআর পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, এরপর দুই পক্ষের আইনজীবীরা বসে তা ঠিক করবে। দেশের সম্পদ উদ্ধারে দেশি আদালত এবং বিদেশি সম্পদ উদ্ধার বিদেশি আদালতে মামলা হবে।
”আমাদের সবকিছু প্রস্তুত সরকার চাইলে সম্পদ উদ্ধারের আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে।”
অন্তর্র্বতী সরকার বলছে, গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে ২৩৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, দেশের কোন কোন ব্যাংক থেকে অর্থ লুট করা হয়েছে সে বিষয়ে বিদেশিদের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার চাইলে এসব ব্যক্তিরদের সম্পদ যেখানেই থাকুক না কেন জব্দ করতে পারবে বলেও দাবি করেন তিনি।
ব্যাংকিং খাতে সংস্কার ও অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ’ ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার (গভর্নর) বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে মনে করেন আহসান মনসুর।
তিনি বলেন, “যখনই আমি লন্ডনে যাই তখনই অ্যাটাক হয়। যারা অর্থপাচার করেছে তারা চাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এসব তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে দৃষ্টি তাদের দিক থেকে সরিয়ে আমার দিকে নিয়ে আসতে। আমার বক্তব্য হচ্ছে এটা পুরোপুরি বানোয়াট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করা এটার মূল উদ্দেশ্য। এখানে কোনো সত্যতা নেই।”
সম্প্রতি ফেইসবুকে গভর্নরের মেয়ে দুবাইতে ফ্লাট কিনেছেন বলে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন পোস্ট দিয়ে আহসান মনসুরের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের আভিযোগ তোলেন। অভিযোগ করা হয়, গভর্নরের মেয়ে মেহরিন সারা মনসুর ৪৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন।
এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, “আমার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েরা কোথায় থাকবে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। বাড়ি কিনবে না গাড়ি কিনবে কিংবা কোথায় বিয়ে করবে- এটা তাদের বিষয়, এটা আমার বিষয় না। আর যদি কোনো প্রমাণ থাকে আমি ডলার পাঠিয়েছি তাহলে তা নিয়ে আসেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি কেউ দেখাতে পারেন কি না।”
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক মার্জার বা একীভূত করার বিষয়েও কথা বলেন আহসান মনসুর। বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেও ব্যাংক একীভূতকরণ অব্যাহত থাকবে।
“আমরা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। কয়েক মাসের মধ্যে একীভূত করার কার্যক্রম আমরা শুরু করে দেব। পরেও এটা চলবে। এটা নিয়ে পুরো একটি বিভাগ থাকবে- ব্যাংক রেজুলেশন ডিপার্টমেন্ট। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।”
এসব ইসলামী ব্যাংক একীভূত করতে হলে পরে ব্যাংকগুলোর কর্মীরা চাকরি হারাবেন না বলেও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, কারণ একীভূত করলে আরো শাখা বাড়বে তখন কর্মী দরকার হবে।
তিনি বলেন, “ব্যাংক একীভূত করতে সরকারের অর্থ লাগে। আমরা আশা করি নতুন সরকার এল এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে এবং এটা চলমান রাখবে। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অর্থনীতিকে চলমান রাখতে হবে ও ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী রাখতে হবে। এটার সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই। যখন যেখানে হস্তক্ষেপ করা দরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেখানে হস্তক্ষেপ করবে।”