মে মাসে কুমিল্লায় নয়টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।ধর্ষণের ঘটনায় ১২ টি এবং
নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৩৯ টি মামলা হয়েছে জেলার বিভিন্ন থানায়।
গতকাল রবিবার জেলা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপিত অপরাধ বিবরণী
থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এছাড়াও মে মাসের তিনটি ডাকাতের ঘটনা, দুইটি
দস্যুতা, তিনটি চাঁদাবাজি, ২৫টি চুরি, আটটি অস্ত্র উদ্ধার, তিনটি চোরা
চালান এবং ১৮৬ টি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন
অপরাধে মোট মামলা হয়েছে ৪৮৯ টি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিরুল কায়সারের সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অংশ
নেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ, বিজিবি দশ
ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ, সিভিল সার্জন
মোহাম্মদ আলী নূর বশির আহমেদ, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোহাম্মদ
মামুন, কুমিল্লা আদালতের পিপি কাইমুল হক রিঙ্কু, বিএনপি'র কুমিল্লা বিভাগীয়
সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, জামায়েত ইসলামী কুমিল্লা মহানগর কাজী
দ্বীন মোহাম্মদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব
মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তাগণ, রাজনৈতিক প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ।
আইনশৃঙ্খলা
কমিটির সভায় কুমিল্লা জেলায় করোনা পরিস্থিতি, সীমান্ত পরিস্থিতি,
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের যানজট নিরসন এবং বাণিজ্য মেলা, নিরবিচ্ছিন্ন
বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।
সভায়
জানানো হয়, মে মাসে জেলায় ১২৯ টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমান আদালতে মোট মামলার সংখ্যা ১৯৬ টি এবং এসব মামলায় জরিমানার
অর্থের পরিমাণ ২৫ লাখ ৫১ হাজার ৪০ টাকা। ভ্রাম্যমান আদালতে ১৪২টি
অর্থদণ্ড, তিনজনকে কারাদণ্ড, ৫১ জনকে উভয় দন্ড দেয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমান
আদালতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ২৪ টি মোবাইল কোর্টে ৪৬ টি মামলা দায়ের
করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৪০ টাকা। উভয়দণ্ড দেয়া হয়েছে ৪৬
জনকে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে আদালত পরিচালনা করা হয়েছে ৩০ টি। এতে
মামলা করা হয়েছে ৪২ টি তে। মোট ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা
হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ১৪ টি মোবাইল
কোর্টে ৩৪ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে ছয় লাখ সাত
হাজার টাকা। বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা
করা হয়েছে ১৮টি। এসব আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে আটটি এবং জরিমানা আদায় করা
হয়েছে আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার। ঔষধ ও কসমেটিক আইনে তিনটি মোবাইল কোর্টে
মামলা দায়ের হয়েছে সাতটি মানা আদায় করা হয়েছে ৫৮ হাজার টাকা। ওজন ও মানদন্ড
পরিমাপ আইনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে আটটি এবং মামলা দায়ের
হয়েছে আটটি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার। বাল্যবিবাহ নিরোধ
আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে একটি।
জরিমানা করা হয়েছে দশ হাজার টাকা। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে দুইটি এবং মামলা দায়ের হয়েছে পাঁচটি।
জরিমানা আদায় করা হয়েছে আট হাজার টাকা। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে দুইটি এবং
জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৫ হাজার ৫শ টাকা। ঈদ প্রস্তুত ভাটা স্থাপনা
নিয়ন্ত্রণ আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে দুইটি, মামলা দায়ের করা
হচ্ছে চারটি এবং ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পাঁচজনকে
দেয়া হয়েছে কারাদন্ড। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন
আইনে মোবাইল কোট করা হয়েছে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে চারটি। জরিমানা
আদায় করা হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে একজনকে এবং উভয়দণ্ড
দেয়া হয়েছে একজনকে।
আরো জানানো হয়েছে, মে মাসে জেলায় সাতটি সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক
সময়ে কুমিল্লার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতালে কোভিড
ডেডিকেটেড আই সি ইউ ইউনিটের বেহাল দশা প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ
আমিরুল কায়সার বলেন, কুমেক ও কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ বহাল ও সচল
রাখতে সরকারকে জানানো হবে। আশা করি, সরকারের এতটা দুর্দশা হয় নি যে এই
সম্পদ নষ্ট হবে। আমি সিভিল সার্জন সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনে
অর্থায়ন এবং জনবল নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জেলা প্রশাসক মোঃ
আমিরুল কায়সার।