দীর্ঘ
বিরতির পর আবার ফিরে এসেছে বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে করোনা
ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে প্রথম করোনাভাইরাসের সূচনা হয়। এরপর
এটি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীব্যাপী। বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর কথা আলোচনায় আসে ৮
মার্চ ২০২০ সালে। প্রথম মৃত্যু ঘটে ১৮ মার্চ ২০২০ সালে। প্রথম দিকে সংখ্যা
কম থাকলেও জুলাই মাসে তা সর্বোচ্চে পৌঁছে। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪০১৯ জনের
মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বর্তমানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতিকে বেশ উদ্বেগের
মধ্যে ফেলেছে। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য
অনুযায়ী, গত মাসে প্রতি সপ্তাহে সেখানে ৩৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ
হারিয়েছেন করোনায়। এবিসি নিউজ করোনার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘উচ্চ ঝুঁকির
পর্যায়ে’ বলে উল্লেখ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনের স্বল্প প্রয়োগ,
রোগ প্রতিরোধ শক্তির হ্রাস এবং এ চিকিৎসার অপ্রতুলতা মৃত্যু ডেকে আনছে।
সিডিসি সংক্রমণের জন্য নতুন ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করেছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এ
ভ্যারিয়েন্টটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এশিয়ার
দেশগুলোতে সংক্রমণের হারও বেশি।
বিশেষ করে হংকং, সিঙ্গাপুর ও
থাইল্যান্ডে এ সংখ্যা বাড়ছে। এসব দেশে সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতা
অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতে দ্রুত
ছড়িয়ে পড়ছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট। এটা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
ভারতে যদি নতুন ভ্যারিয়েন্টটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বাংলাদেশেও
চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের তিন দিক দিয়ে বেষ্টিত ভারতের দীর্ঘ
সীমান্ত। তাই সময় থাকতে নতুন ভ্যারিয়েন্টটি প্রতিরোধের বিষয়ে ব্যাপক
প্রস্তুতি নিতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও
ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, পাশের দেশ ভারতে যে হারে
করোনার নতুন ধরনটি সংক্রমিত হচ্ছে, তা উদ্বেগের বটে। এ ভ্যারিয়েন্ট
সম্পর্কে আমরা খুব বেশি তথ্য পাচ্ছি না। তাই বোঝা মুশকিল। আমরা ইতোমধ্যে
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি, আবার আমরা টিকা গ্রহণ করে সেরেও উঠেছি।
করোনার কিছু ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে আমাদের রক্তে একটা প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে
উঠেছে। তাই বলে হাল ছেড়ে বসে থাকলে হবে না। নতুন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট হয়তো
মারাত্মক হতে পারে।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের
হাসপাতালগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য
কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংস্পর্শে যেকোনো সময়
শরীরে নিষ্ক্রিয় ভ্যারিয়েন্ট সক্রিয় হয়ে অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করতে পারে।
তখন এটি আরও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। তাই এখন থেকে এ বিষয়টিকে অবহেলা না করে
সতর্ক হতে হবে এবং প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশের জাতীয় রোগ
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, জরুরি ওষুধ বিতরণ বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেল,
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করে পরিস্থিতি মোকাবিলায়
সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।