সারা দেশে মাদক ব্যবসা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ। মাদক ব্যবসায়ীরা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর চড়াও হতেও পিছপা হচ্ছে না। মাদকের টাকা জোগাড়ে মাদকাসক্তরা হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে।
‘মাদক অপরাধীরা বেপরোয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত পত্রিকান্তরে প্রতিবেদনটি এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে সাফল্য থাকলেও মাদকের ব্যাপকতা যে একটি গভীর সামাজিক ব্যাধি, তা অনস্বীকার্য।
সম্প্রতি অভিযানে যাওয়া পুলিশের ওপর মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। গত ৭ এপ্রিল পরোয়ানাভুক্ত আসামি ধরতে মিরপুর ১১ নম্বরে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হাতকড়াসহ এক আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশের এক সদস্যকে মারধর করে মাদক বিক্রেতারা। তারা পুলিশকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সহযোগীদের ছিনিয়ে নেয়। মাদকের টাকা জোগাড় করতে মাদকাসক্তরা খুন, ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো; যেমন—পল্লবীতে দম্পতি খুন, দক্ষিণখানে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা বা মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ঘটনার সঙ্গে মাদকের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
শুধু শহর নয়, গ্রামগঞ্জেও মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৩ মে মাদকসংশ্লিষ্ট ঘটনায় ফেনীর ছাগলনাইয়ায় এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১২ মে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় মাদক কেনার টাকা না পেয়ে বৃদ্ধ মা-বাবাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠে ছেলের বিরুদ্ধে।
মাদকাসক্তদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এক কোটির বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্য বলছে, দেশে প্রায় দেড় কোটি মাদকসেবীর ৮০ শতাংশই কিশোর-তরুণ।
এর মধ্যে ৬০ শতাংশই বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত, ৩০ শতাংশ শুধু নেশার খরচ জোগাতে অপরাধে জড়াচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ মাদকসংক্রান্ত মামলা হয়েছে, যা মাদকের ভয়াবহ বিস্তার প্রমাণ করে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জব্দ করা মাদকের বিশাল পরিমাণও ইঙ্গিত দেয় যে সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদকের প্রবেশ অব্যাহত আছে।
কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষে মাদকের বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। অতীতে মাদকবিরোধী অভিযান ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। দেখা যেত, মাদক কারবারিরা ক্ষমতাসীন দলের লোক। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের সেই সংকট নেই। দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সক্ষম করে তোলার পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।