শনিবার ৩১ মে ২০২৫
১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
যে ৫ কারণে জিলহজের প্রথম দশক গুরুত্বপূর্ণ
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫, ১২:৪৩ এএম |


হিজরি বর্ষপঞ্জির শেষ মাস জিলহজের ফজিলত সম্পর্কে কমবেশি সবারই জানা। এই দিনগুলোতে আলেমরা বেশি বেশি নেক আমল করার প্রতি উৎসাহিত করেন। অনেকের আগ্রহ জাগে, জিলহজের প্রথম দশকের ইবাদতের প্রতি এতো উৎসাহ দেওয়া হয় কেন? এই দিনগুলো তো রমজানের অংশ নয়।
কিন্তু আলেমদের মতে জিলহজের প্রথম দশক রমজানের দিনের মতোই উত্তম। আলেমদের অনেকেই জিলহজের প্রথম দশ দিন এবং রমজানের শেষ দশকের রাতে মধ্যে তুলনা করতেন। কোরআন-হাদিসের আলোকে এই সময়টির ফজিলত নির্ধারণ এবং উপস্থাপন করতেন। অনেক আলেমের মতে, রমজানের রাতের মতো জিলহজের প্রথম দশকের দিনগুলোও ফজিলতপূর্ণ। জিলহজের প্রথম দশক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হলো:
১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দিনসমূহ
বিভিন্ন হাদিসে জিলহজের প্রথম দশককে পৃথিবীর সর্বোত্তম দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জিলহজের এই দশ দিন। (আল-আলবানি সহীহ বলেছেন)
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিনগুলো হলো জিলহজের এই দশ দিন। (আল-আলবানি সহীহ বলেছেন)
২. নেক আমলের শ্রেষ্ঠ সময়
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এমন কোনো দিবস নেই যার আমল জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় হবে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকেও কি অধিক প্রিয়? রাসূলুল্লাহ (সা.)বললেন, হাঁ জিহাদ করা থেকেও অধিক প্রিয় তবে যদি এমন হয় যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বের হল এবং এর কোনো কিছুই ফেরত নিয়ে এল না। (তিরমিজি)
৩. পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এই দিনগুলোর কসম করেছেন
সূরা ফজরের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, শপথ দশ রাতের’। বিখ্যাত সাহাবীগণ যেমন ইবনে আব্বাস ও ইবনে যুবাইর (রা.) বলেন, এখানে দশ রাত বলতে জিলহজের প্রথম দশ দিন বোঝানো হয়েছে।
৪.  শ্রেষ্ঠতম দিন
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে কুরত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিন (১০ জিলহজ) আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন।’ (আবু দাউদ)
৫. আরাফার দিনের বরকত
আরাফার দিন হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন। এ দিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন হাজিরা, এখানে হজের খুতবা শোনেন। আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন। মনে আকুতি ঢেলে দোয়া করেন। গুনাহ থেকে ক্ষমার জন্য তওবা করেন।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, আরাফার দিনে আল্লাহ যত মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন, তা অন্য কোনো দিনে করেন না। (মুসলিম)
হজ করতে যাননি এমন মানুষদের জন্য আরাফার দিনে রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ। এই রোজা আগের বছরের ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।


কোরবানির মাধ্যমে যেভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়
কোরবানি মুসলিম জাতির পিতা খ্যাত হজরত ইবরাহিম (আ.) এর সুন্নত। সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। রাসুল (সা.) এর হাদিস ও আমলের মাধ্যমে তা প্রমাণিত। কোরবানির বিধান পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়। একইসঙ্গে প্রতিবেশির হক আদায়, আত্মীয়তার সম্পর্কন্নোয়ন, দরিদ্রের সহায়তা করা হয়। কোরবানির মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সামাজিক সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ে। 
কোরবানির বিধান কীভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে দেয় তুলে ধরা হলো-
১. কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত দু’টি অমূল্য নেয়ামত অর্থাৎ, জীবন ও জীবিকার জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করা হয়।
২. ইসলামের অন্যতম বড় নিদর্শন হচ্ছে কোরবানি, এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় এবং রবের নির্দেশ প্রতিপালন করা হয়।
৩. কোরবানি ব্যক্তি, পরিবার ও দরিদ্রের প্রশস্ততা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, মেহমানের আতিথেয়তা, প্রতিবেশীর হক, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও গরীবদের জন্য সদকা হিসেবে বিবেচিত হয়।
৪. কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাতের পুনরুজ্জীবন লাভ করে।
৫. আল্লাহর প্রতি বান্দার ঈমানের সুস্পষ্ট প্রমাণ কোরবানি, এর মাধ্যমে মানুষ একমাত্র আপন রবের সন্তুষ্টিই কামনা করেন।
৬. কোরবানির মাধ্যমে মুমিন ধৈর্য ও সবরের শিক্ষা লাভ করে। কারণ, কোরবানি করার মাধ্যমে তাদের অন্তরে ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ.)-এর ধৈর্য ও আত্মত্যাগের দৃশ্য ভেসে ওঠে। আল্লাহর আনুগত্যে পিতা ইবরাহীম স্বীয় সন্তানকে ও ইসমাঈল (আ.) নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। 
৭. কোরবানির গোশত দরিদ্র ও অসহায়দের মাঝে বিতরণে মাধ্যমে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়। যা অন্যতম সদকাহ। এর মাধ্যমে সমাজের লোকদের মধ্যে সম্প্রীতি-সদ্ভাব ও পরস্পরের প্রতি দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত হয়।


কোন শর্তে কবুল হবে কোরবানি
ইসলামের বিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান নরনারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে, অবশ্যই কোরবানি দিতে হবে। কোরবানি হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, অন্য কোনো উদ্দেশ্য যেন মুখ্য না হয় সে ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে যদি কোরবানি করা হয়, তাহলে তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না।
মনে রাখতে হবে, কোরবানি কোনো লোক দেখানো বিষয় না। নিজের সম্পদ প্রদর্শন ও বিত্তের মহড়া দেওয়ার জন্য কোরবানি দিলে কোরবানি আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না। কোরবানি করার আগে তাই মাথায় রাখতে হবে কোন শর্তগুলো মাথায় রাখলে কোরবানি খোদার দরবারে কবুল হবে।
কোরবানির অন্যতম প্রধান শর্ত হলো বিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়ত হলো- কাজের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ, যা কোরবানির পূর্ণতার জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। কিন্তু পৌঁছে তাঁর নিকট তোমাদের মনের তাকওয়া।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)
কোরবানি করতে হবে হালাল সম্পদ থেকে। হারাম মিশ্রিত সম্পদের বিনিময়ে ক্রয়কৃত পশুর কোরবানি আল্লাহর নিকট কবুল হবে না।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবুল করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩৯৩)
সেইসঙ্গে কোরবানির অংশীদার নির্বাচন করার সময় অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। যদি কারো ব্যাপারে নিশ্চিত জানা যায় যে, সে হারাম সম্পদ থেকে কোরবানি করছে, তাহলে এমন ব্যক্তির সঙ্গে এক পশুতে কোরবানি করা যাবে না। শরিয়তের দৃষ্টিতে এমন লোকের কোরবানি এবং তার সঙ্গে অন্যান্য শরিকদের কোরবানিও কবুল হবে না।
যে কোনো পশু দিয়ে কোরবানি করলেই তা গ্রহণযোগ্য হবে, তা না। কোরবানির পশু হতে হবে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানি নির্ধারণ করেছি, যেন তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৪)
চতুষ্পদ জন্তুর অন্তর্ভুক্ত হলো উট, গরু, মহিষ, বকরি, ভেড়া ও দুম্বা। এগুলো ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার পশু দ্বারা কুরবানি বৈধ হবে না। (কাজিখান: ৩/৩৪৮)
নির্ধারিত পশুর পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোরবানি করা আবশ্যক। কোরবানির সময় শুরু হয় ঈদুল আজহার নামাজের পর থেকে এবং তা অবশিষ্ট থাকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। (হিন্দিয়া: ৫/২৯৫) এর আগে বা পরে কুরবানির পশু জবাই করলে তা দ্বারা কুরবানি আদায় হবে না।
কুরবানির পশু অবশ্যই ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী জবাই করতে হবে। জবাইকারীর মুসলমান হওয়া এবং আল্লাহর নামে জবাই করা আবশ্যক।
এছাড়া ব্যবহৃত ছুরি বা যন্ত্রপাতি ধারালো হতে হবে, যাতে পশুর কষ্ট কম হয়। কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা উত্তম। তবে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানিদাতা পুরুষ হলে জবাইয়ের সময় সেখানে উপস্থিত থাকা উত্তম। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২২৬৫৭)













সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় ধান্দাবাজ গুলো মিথ্যা মামলা দিয়ে বাণিজ্য করছে
নগরীর অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে ডুবে গেল নারী
জামায়াত একটি মানবিক সমাজ গঠনে কাজ করছে: আব্দুর রব
কুমিল্লায় অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতামাসুদ গ্রেপ্তার
৮২ কেজি গাঁজাসহ ছাত্রদলের আহ্বায়ক আটক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতা মাসুদ গ্রেপ্তার
কুমিল্লায় মডার্ন ক্যাফে রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি সেন্টারের শুভ উদ্বোধন
টানা বৃষ্টি হলেই মন খারাপ হয় গোমতী পাড়ের মানুষের
কুমিল্লায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড
চান্দিনায় পুলিশের অভিযানে ডাকাত চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২