
দুপুর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টিতেই ভিজেই কৃতি শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয় কুমিল্লা টাউন হল মাঠ। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতেছিল এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লার স্বনামধন্য ডেভেলপারস কোম্পানী সিলভার ডেভেলপারস লি., পাঠকপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক কুমিল্লার কাগজ এবং মানবিক সংগঠন বিবেক এর আয়োজনে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চোখে পড়েছে এ দৃশ্য।
সংবর্ধনায় অংশ নিতে মঙ্গলবার (২০ মে) বিকাল ৩টায় বৃষ্টির মধ্যেই টাউন হল মাঠে প্রবেশ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টির জন্য নির্ধারিত সময়ের ১ ঘন্টা পর বিকাল ৪টার দিকে শুরু হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে থাকেন অতিথিরা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কুমিল্লার প্রায় ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেজিপিএ-৫ পাওয়া ২ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অনলাইন ও অফলাইনে নিবন্ধন করেছিল।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজনের মূল পর্ব। কুমিল্লার কাগজের উপসম্পাদক জহির শান্ত’র উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য দেন মানবিক সংগঠন বিবেকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু।
এছাড়াও অন্যান্য অতিথির মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার, কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ সামছুল ইসলাম, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঁইয়া, সিলভার ডেভেলপারস লি. এর চেয়ারম্যান আলহাজ¦ অধ্যাপক ফারুক আহমেদ, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু, আয়োজনের একডাডেমিক পার্টনার সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের লিবারেল আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর ড. আলী হোসেন চৌধুরী, ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মু. শফিকুল আলম হেলাল, নবাব ফয়জুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার, স্টাডি পার্টনার ওভারসিস স্ট্যাডি এন্ড মাইগ্রেশন কান্ট্রি ম্যানেজার সার্ভিসের সালেহ আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সভায় ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন দৈনিক কুমিল্লার কাগজের সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ডেপুটি কন্ট্রোলার কাজী আপন তিবরানী, এবি পার্টির কুমিল্লা জেলা আহবায়ক মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শওকত আলী বকুল, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারী কামরুজ্জমান সোহেল, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাসুক আলতাফ চৌধুরী, সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সফিউল আলম রায়হান, কুমিল্লা টাউন হলে সদস্য সচিব সাজ্জাদুল কবির সাজ্জাদ, নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ, ইস্টার্ন ইয়াকুব ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মঞ্জুর আলম ভূইয়াসহ আমন্ত্রিত অতিথিগণ।
অতিথিদের বক্তব্যের পর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ক্রেস্ট, সনদ ও উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সবার মুখে ছিল হাসির ঝিলিক। দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। কেউ কেউ মুহূর্তটি ধরে রাখে সেলফিতে।
বক্তব্যে কুমিল্লা জেলাপ্রশাসক বলেন, এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত হয়েছো তোমরা নি:সন্দেহে অনেক মেধাবী। তোমাদের সামনে লম্বা পথ অপেক্ষা করছে, সে পথ তোমাদের পাড়ি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, তোমাদের মেধার পাশাপাশি দুটি জিনিস অর্জন করতে হবে আর তা হলো, সততা ও সাহস। তোমাদেরকে সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে হবে, এর জন্য মেধার পাশাপাশি সততা এবং সাহসের প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে তোমরা দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারবে। হাজী আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,আজকে যারা সম্মাননা পেয়েছো তোমরা তোমাদের যোগ্যতার কারণে এই সম্মাননা পেয়েছো। এই বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে চেয়ারে বসেছিল, এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি আরও বলেন, অতীতে যারা এই পৃথিবীতে এসে এই পৃথিবী সুন্দর করে গেছে তোমাদের মত মেধাবী যারা আছো তোমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এবং কর্তব্য হলো, এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে যাওয়া যাতে আগামীতে যারা এই পৃথিবীতে আসবে তাঁরা উপভোগ করবে।
সংবর্ধনায় অংশ নেওয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, বড় হয়ে স্থপতি হতে চাই। দাদুর ইচ্ছা গ্রামে নিজেই ডিজাইন করে একটি মসজিদ বানানোর। আমার বাবা একজন সাংবাদিক। আমার এত দূর এগিয়ে আসার পিছনে যিনি অর্থের যোগান দিয়েছেন তিনি হলেন আমার বাবা। আমার মা’ও আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। আজকে যারা এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অনুষ্ঠানে শেষে অতিথিদের সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়।