প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৪:৫১ পিএম |
যে প্যান্ডেলে বর সেজে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠার কথা, সেখানেই পড়ে আছে বিয়ের ঠিক হওয়া সুমন ও তার বড় ভাই মমিনের নিথর দেহ। একদিনের ব্যবধানে অনুষ্ঠিতব্য দুই ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে টানানো হয়েছে সামিয়ানা। প্রস্তুত বরাসনও। চারপাশে উৎসবের আমেজ। হঠাৎ খবর এলো একটি দুর্ঘটনার। মুহূর্তেই আনন্দ ম্লান করে নেমে এলো বিষাদের ছায়া। একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে দুই ভাইয়ের তাজা প্রাণ। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম।স্থানীয়রা কালবেলাকে জানায়, বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল রাজবাড়ী সদরের কদমতলা গ্রামের শামিউল ইসলাম শামীমের আর শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিয়ের দিন ধার্য ছিল ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সুমনের। ছোট দুই ভাইয়ের বিয়েতে যোগ দিতে বুধবার রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বড় ভাই মনিরুল ইসলাম মমিন। ভাইকে মোটরসাইকেল নিয়ে এগিয়ে আনতে দৌলতদিয়া ঘাটে যান সুমন। সেখান থেকে ফেরার পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মকবুলের দোকান এলাকায় মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকের চাপায় নিহত হন মমিন ও সুমন।
ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন বড় ভাই মমিন। সেখান থেকে ছোট ভাই সুমনের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। রাতে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে বড় ভাইকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় সুমন। পথে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মকবুলের দোকান এলাকায় পৌঁছালে ট্রাকচাপায় দুই ভাই নিহত হন।
পুলিশ জানায়, নিহত মনিরুল ইসলাম মমিন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের মোকছেদ আলী সরদারের ছেলে। আর গুরুতর আহতাবস্থায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যাওয়া সাইফুল ইসলাম সুমন নিহত মমিনের ছোট ভাই।
নিহত দুই ভাইয়ের চাচা জালাল সরদার কালবেলাকে বলেন, বিয়ের প্যান্ডেলে লাশ হয়ে শুয়ে আছে আমার দুই ভাতিজা। এ কষ্ট কীভাবে সইবো। মাটিবাহী ড্রামট্রাক চাপায় আমার দুই ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত চালক ও হেলপারের কঠিন শাস্তি চাই।
নিহতের ফুফাতো ভাই বিল্লাল শেখ কালবেলাকে বলেন, আমার ভাইয়ের হলুদের অনুষ্ঠান হয়েছে। আজ এক ভাইয়ের বিয়ে, আগামীকাল আরেক ভাইয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দোষী চালকের কঠোর শাস্তি কামনা করি।
স্থানীয় গণ্যমাধ্যমকর্মী শফিকুল ইসলাম শামীম কালবেলাকে বলেন, বেপরোয়া গতিতে মহাসড়কে মাটির ট্রাকগুলো চলে। বিশেষ করে ড্রামট্রাকগুলো তাদের বেপরোয়া গতির কারণেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ইতোমধ্যে রাজবাড়ীতে মাটিবাহী ড্রামট্রাকচাপায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বিষয়ে আরও নজর দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার এসআই আল মামুদ কালবেলাকে জানান, এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে এবং ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। তবে ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।