নিজস্ব
প্রতিবেদক : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে চলমান পরিস্থিতির মধ্যে
সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট দখলে নিতে দফায়-দফায় সাইবার হামলার
ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ দিনে দেশে ৫০ হাজারেরও বেশি সাইবার হামলা চালানো হয়েছে
বলে তথ্য দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ
আহমেদ পলক।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার
কাউন্সিলের (বিসিসি) সম্মেলন কক্ষে ‘চলমান সময়ে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক
জরুরি সভা’ শেষে ব্রিফিংয়ে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব তথ্য
দেন।
পলক বলেন, “আমাদের হাতে এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে, তাতে গত ১০ দিনে
৫০ হাজারের বেশি বার সাইবার হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের ৮টি সরকারি
ওয়েবসাইট ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে হ্যাকাররা।
“তবে কোনো ওয়েবসাইট পুরোপুরি হ্যাকড হয়নি। সরকারি কোনো ওয়েবসাইট থেকে তথ্য-উপাত্ত চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
তিনি
বলেন, “আমরা যেটাকে ডিএনএস সিস্টেম বলি, সেটা ডাইভার্ট করে যখন কেউ কোনো
ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে গেছেন, তখন তাকে সেখান থেকে অন্য একটা ওয়েবসাইটে নিয়ে
যাওয়া হয়েছে। সেখানে নেওয়ার পর ব্যবহারকারীকে শুধু ফ্রন্ট পেজটা দেখানো
হয়েছে যে, এই ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাইবার
হামলা বেড়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন,
“সাইবার হামলা প্রতিনিয়তই হয়। হামলাকারীরা প্রতিনিয়তই জাতীয় নিরাপত্তার
আওতায় থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করার চেষ্টা করে থাকে।
“তারা
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালায়, সেখান থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার
জন্য। তবে হ্যাঁ, সম্প্রতি আন্দোলনের মধ্যে সাইবার হামলা কিছুটা বেড়েছে,
এটাও সত্য।’
ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিসিসি সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার ‘চলমান
সময়ে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক জরুরি সভা’ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ডাক,
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ঢাকার
আগারগাঁওয়ে বিসিসি সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার ‘চলমান সময়ে সাইবার
নিরাপত্তাবিষয়ক জরুরি সভা’ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে যা বললেন পলক:
কোটা
সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার পর বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন হয়ে
যায়। পরে ধাপে-ধাপে ইন্টারনেট সেবা চালু হলেও ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ ও
ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এখনও বন্ধ রেখেছে সরকার।
ফলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করে এসব মাধ্যমে
সক্রিয় হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।
আর ভিপিএন ব্যবহারের কারণেই ইন্টারনেটে
ধীরগতি দাবি করে পলক বলেন, “টেকনিক্যাল পারসনরা আমাদের জানিয়েছেন, দেশে
সম্প্রতি ভিপিএন ব্যবহার বেড়েছে আগের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার শতাংশ।
“যখন
তারা ভিপিএন ব্যবহার করছেন; তখন তারা বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশের নেটওয়ার্ক
ব্যবহার করছেন। বিদেশের ব্যান্ডউইথের ট্র্যাফিক বেড়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের
গতি কমে যাওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ। এতে অনেক সময় মোবাইলে ফোরজি
ইন্টারনেট একটু স্লো পাওয়া যাচ্ছে। ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রেও ধীরগতি দেখা
যাচ্ছে।”
ইন্টারনেটের গতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা-নিষেধ নেই
জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ইন্টারনেটের গতি নিয়ে আমরা কোনো রেস্ট্রিকশন
(নিষেধাজ্ঞা) রাখিনি। বিটিআরসির পক্ষ থেকে সম্পূর্ণরূপে এটা অবাধ ও ছেড়ে
দেওয়া হয়েছে, কোথাও কোনো বাধা নেই। কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, কোনো গাইডলাইনও
(নির্দেশনা) নেই।’
সভায় অন্যদের মধ্যে টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো.
মুশফিকুর রহমান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের মহাপরিচালক
মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী
পরিচালক রণজিৎ কুমার, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব
বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা
এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
কোটা
সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট
শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই মোবাইল
ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে পরদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারের
পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেদিন মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন
দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ওপর থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের তার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ডেটা সেন্টারও। সে কারণেই
সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায় বলে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য।
মোবাইল ও
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোবাইলে আর্থিক লেনদেন,
বিদ্যুৎ-গ্যাসের প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন
গ্রাহকরা। কোথাও কোথাও ব্যাংকের এটিএম বুথও বন্ধ হয়ে যায়।
ইন্টারনেট না
থাকায় স্থবির হয়ে পড়ে ই-কমার্স, পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্ধ
থাকে বন্দরের কার্যক্রম। ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের সংবাদ সেবাও অচল হয়ে
পড়ে।
সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি
শান্ত হতে থাকে। ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন
ব্যবসায়ীরা। সেখানে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত
ইন্টারনেটা সেবা চালুর ব্যবস্থা করার অনুরোধ রাখেন।
এরপর ২৩ জুলাই রাতে
অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরে।
পরদিন রাতে সারা দেশে বাসাবাড়িতেও ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়,
যদিও স্বাভাবিক গতি না ফেরায় গ্রাহকরা সন্তুষ্ট নন।