শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
আসামি ধরতে গিয়ে নারীর দিকে পিস্তল, ফাঁকা গুলি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তোলপাড়, আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি॥
প্রকাশ: সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪, ১২:৫৩ এএম |


 আসামি ধরতে গিয়ে নারীর দিকে পিস্তল, ফাঁকা গুলি


ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি ধরতে গিয়ে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে নারীর কপালে ঠেকানোর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে প্রবাসীকে ধরতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের মারধর থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ-শিশু, এমনকি নারীরাও। আতংক ছড়াতে ছোঁড়া হয় ফাঁকা কয়েক রাউন্ড গুলি। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ৩ কার্য দিবসে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের থলিয়ারা গ্রামের সৌদি প্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে সদর থানায় ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ আত্মসাতের মামলা হয়। এতে অভিযোগ আনা হয়, নুরুল ইসলাম সৌদি আরব থেকে আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির স্বর্ণ এনে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি। এ ঘটনায় আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এনামুল হক বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলায় গত শুক্রবার বিকেল ৫টার প্রবাসী নুরুল ইসলাম বাড়িতে আছেন- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে ধরতে সাদা পোশাকে অভিযানে যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল করিমসহ আরো কয়েকজন। এসময় নুরুল ইসলামের বাড়িতে তার ভাতিজার সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান চলছিল।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে একদল লোক নুরুলকে খুঁজতে বাসায় আসে। তারা তাকে না পেয়ে আক্রমানাত্মক হয়ে উঠে। এসময় অনুষ্ঠানে আসা বাড়িতে উপস্থিত নারীসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশে ধস্তাধস্তি হয়। তারা নুরুল ইসলামের স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ পিতাসহ পরিবারের অন্যান্য লোকজনকে মারধর ও শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করে। এক পর্যায়ে প্রবাসীর স্ত্রী বন্যার কপালের দিকে প্রকাশ্যে পিস্তল তাক করতে দেখা যায় সাদা পোশাকে আসা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল করিম। সে সাথে ঘরে থানা নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। তারা গোয়েন্দা পুলিশ নাকি ডাকাত বুঝে উঠতে পারিনি।
ঘটনার সময় উপস্থিত নুরুল আলমের ভাই সারোয়ার আলম অভিযোগ করেন, সাদা পোশাকে যাওয়া লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করেই তার ভাইকে খোঁজ শুরু করে। ভাই বাড়িতে নেই বলা হলেও তারা মানতে নারাজ। এ সময় সাদা পোশাকে আসা লোকজন নুরুল ইসলামের স্ত্রী বন্যা বেগমসহ কয়েকজনকে মারধর করে। নিশাত নামে নয় বছরের এক মেয়ে শিশুও তাদের মারধর থেকে রক্ষা পায়নি। এমনকি আমার উপরও হামলা হয়। এ সময় মোবাইল ফোনে করা কিছু ভিডিও তারা কেটে দিয়ে যায়। আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্বর্ণ নিয়ে মামলা হয়েছে। স্বর্ণ আমার ভাই আনেনি। অন্যের মাধ্যমে আমার ভাইয়ের কাছে দেওয়া হয় বলছে তারা। আমার ভাইকে ধরতে হলে কেন আমাদের বাড়িতে এভাবে হামলা হবে। বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করা হবে বলে জানান। সাদা পোশাকে আসা লোকজন পিস্তল তাক করার পাশাপাশি গুলিও করেছে। গুলির খোসাও আমাদের কাছে আছে। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে খোসা কার।
নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বলেন, প্রবাসে আব্দুল কুদ্দুসকে ব্যবসায়ীক অংশীদার না করায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খাৎনার অনুষ্ঠান চলছিল। এমন সময় ৫/৬ জন সাদা পোশাকে এসে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছ থেকে আলমারির চাবি নেয়। এ সময় তারা তল্লাশি করে কিছু পায়নি। কিন্তু আমাদের ঘরে থাকা প্রায় ৫ লাখ টাকাসহ গলায় থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয় এবং সুন্নতে খাৎনা করা ভাতিজাকে থাপ্পড় মারে। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
ডিবি পুলিশের এস. আই রেজাউল করিম বলেন, বাদী পক্ষ বিষয়টি আমাদেরকে জানালে প্রথমে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোফাজ্জল আলী একজন কনস্টেবলকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আমি যাই। দূর থেকেই ওই বাড়ির চিল্লাফাল্লা শুনছিলাম। আমি যাওয়ার পর তারা খারাপ আচরণ করে। আসামীকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। আমার হাতে পিস্তল ছিলো। তবে কারো দিকে তাক করিনি। কাউকে মারধর করা হয়নি। আমাদের টার্গেট যেহেতু আসামী ধরা সেহেতু সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। যে কারণে তখন আমরা অ্যাকশানে যাইনি। সদর উপজেলা বিশ্বরোড এলাকার বাদী এসে বাড়িতে আসামীর অবস্থানের কথা জানালে সেখানে যাওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন বলেন, পোশাক ছাড়া অভিযানে যাওয়া আইনসম্মত নয়।
পুলিশ সুপার মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোনো অফিসার যদি আসামী ধরতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা বিষয়টির গভীরভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।














সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আন্দালিভ রহমান পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft