মঙ্গলবার ২ ডিসেম্বর ২০২৫
১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অনিহা;
বিভাজনের গ্রিল ভেঙে মহাসড়ক পারাপার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৩ এএম আপডেট: ০২.১২.২০২৫ ১:১৮ এএম |




বিভাজনের গ্রিল ভেঙে  মহাসড়ক পারাপাররণবীর ঘোষ কিংকর। 
ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পথচারীদের নিরাপদ পারাপারে প্রতিটি স্টেশন এলাকা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজই ফাঁকা পড়ে আছে। পথচারীরা ওই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে পারাপার করছে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ব্যস্ততম মহাসড়কটি। 
শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত, চাকরিজীবী বা বেকার সহ সকল শ্রেণীপেশার অধিকাংশ মানুষই মহাসড়কে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছে না। মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও মহাসড়কের বিভাজন অতিক্রম করে পারাপার হচ্ছে। অনেক স্টেশন এলাকায় যাত্রী পারাপারের কারণে দ্রুতগামী দূরপাল্লার যানবাহনগুলো ব্রেক কষতে হচ্ছে। যারফলে দীর্ঘ সময় যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। 
পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিচু বিভাজনের উপর কোথাও এক থেকে দুইশ মিটার জুড়ে লোহার গ্রিল দেয়। কিন্তু স্থানীয়রা রাতের অন্ধকারে ওই গ্রিল ভেঙে যাতায়াতের পথ নিশ্চিত করে। আর অসচেতন পথচারী দিন-রাত ওই ভাঙা গ্রিল দিয়েই মহাসড়ক পারাপার করে। 
কুমিল্লা সড়ক বিভাগ বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকায় ৫৪টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। প্রতিটি ব্রিজ নির্মাণে সরকারের কোটি কোটি খরচ হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে প্রাণ হারানোর ভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বিভাজনের উপর দিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে। এতে প্রায়ই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ, কেউ বা চিরতরে হচ্ছেন পঙ্গু।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, গত ৯ মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪৬৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে নিহত হয়েছেন ২৮৪ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ৫০৯ জন। রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির চাপায় প্রাণ গেছে অনেকের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাস স্টেশন রয়েছে একটি ফুটওভার ব্রিজ। কোটি টাকা ব্যয়ে ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। কিন্তু এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে একজনকেও পারাপার হতে দেখা যায়নি। ফুটওভার ব্রিজটি মাত্র ১শ ফুটের মধ্যে নিচু বিভাজন ও বিভাজনের কাটা অংশ থাকায় সব বয়সের নারী-পুরুষ ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছেন। 
চান্দিনা-বাগুর বাস স্টেশনটি জেলার অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। চান্দিনা-দেবীদ্বার, বরুড়া উপজেলার এবং বুড়িচং উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা ওই স্টেশনটি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। স্টেশনে থাকা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ উভয় পাশে অন্তত ২শ মিটার লোহার উঁচু গ্রিল স্থাপন করেন। কিন্তু রাতের অন্ধকারে ওই গ্রিলের লোহা ভেঙে ফেলে স্থানীয়রা। আর ওই ভাঙা অংশেই প্রতিদিন যাতায়াতা করছে হাজার হাজার পথচারী। যারফলে ওই স্টেশনটিতে যানজট নিত্য সঙ্গী। 
এছাড়া মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, কুটুম্বপুর, গোবিন্দপুর, নিমসার অংশের ফুটওভার ব্রিজগুলো ব্যবহারই হচ্ছে না। 
গত ১৯ নভেম্বর মহাসড়কের কুটুম্বপুর স্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্বেও নিচ দিয়ে পারাপারের সময় দ্রুতগতির বাসের ধাক্কায় ড্রাম ট্রাক চালকের মৃত্যু ঘটে। মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ডে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অথচ পাশেই ফুটওভার ব্রিজ। 
জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে সড়ক পারাপার করা এসব মানুষদের কেউ অসুস্থতার অজুহাতে, কেউ সময় বাঁচাতে, কেউ আবার অভ্যাস থেকেই দ্রুতগতির গাড়ির সামনেই সড়কে পার হতে দেখা গেছে।
স্কুল ছাত্র হৃদয় হোসেন জানায়- ফুটওভার ব্রিজে ওঠানামা করা অনেক কষ্টের। তাই লোহার গ্রিলের ভাঙা অংশ দিয়ে যাতায়াত করি। 
বিল্লাল হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, আমরা সবসময় মহাসড়কের অতিক্রম করে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। প্রতিদিন ৪-৫ বার মহাসড়ক অতিক্রম করে বাজারে বাড়িতে আসা যাওয়া করতে হয়। প্রতিবার এতো উঁচু ব্রিজে উঠবো কিভাবে?
সচেতন মহল বলছেন, মানুষকে একটি নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করতে হবে সব ক্ষেত্রে। এর জন্য প্রয়োজন সবার সদিচ্ছা। মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে মহাসড়কে।
চান্দিনার মহিচাইল শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, সম্ভবত আমরাই একমাত্র জাতি যারা মৃত্যুর তোয়াক্কা না করেই মহাসড়কে নিজেকে বিলিয়ে দেই। সড়ক পারাপারের জন্য সরকার ফুটওভার ব্রিজ করে দিয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার না হয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কে রাস্তা পারাপারে মানুষের সচেতন হতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। পুলিশের হাতে যে ক্ষমতা রয়েছে আমরা সেটাকে ব্যবহার করে মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পারাপারে উদ্বুদ্ধ করছি। কিন্তু পথ যারা ব্যবহার করেন প্রত্যেককে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে অধিকাংশ জায়গার নিচু বিভাজনে লোহার গ্রিল দিয়েছি। তারপরও অসচেতন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভাজন অতিক্রম করে বা লোহার গ্রিল ভেঙে যাতায়াত করছে। জনগণ সচেতন না হলে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার বন্ধ হবে না। 

















http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
হাসিনার সাথে সাজা রেহানা-টিউলিপের
যে কারণে টিউলিপের সাজা
লাকসামে রেললাইনের পাশ থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯
কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় হাজী ইয়াছিনের উদ্যোগে ধারাবাহিক দোয়া
কুমিল্লা নগরী যানজটমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
চুরির ঘটনা রূপ নিলো বিএনপি এলডিপির রাজনৈতিক সংঘর্ষে পরিস্থিতি
সরকারি মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে সংশয়
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ শিক্ষক পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন
১ লাখ ছাড়ালো প্রবাসী ভোটার, নিবন্ধনে জেলাভিত্তিক দ্বিতীয় স্থানে কুমিল্লা
কুমিল্লায় যোগ দিলেন নতুন পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২