
৪৩
তম জাতীয় মহিলা দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফিদে মাস্টার
নোশিন আনজুম। এগারো খেলায় সাড়ে আট পয়েন্ট নিয়ে তিনি শ্রেষ্ঠত্ব বজায়
রেখেছেন। মহিলা দাবায় এটি তার হ্যাটট্রিক শিরোপা। আজ শেষ রাউন্ডে নোশিনের
প্রয়োজন ছিল ড্র। প্রতিপক্ষ ওয়ারসিয়া খুশবুর সঙ্গে ছয় চালেই ড্র হয়েছে।
দাবা বোর্ডে দুই জনের সমঝোতায় ড্র বৈধ। শেষ রাউন্ডে লড়াই ছাড়া ড্র নিয়ে
নোশিন বলেন, 'আমি ড্র অফার করেছিলাম, খুশবু রাজি হয়েছে কারণ ড্র’তে খুশবুও
অলিম্পিয়াডে দলে থাকবে। বোর্ডে আলোচনার ভিত্তিতে ড্র দাবাতে হয়েই থাকে।’
গত
বারের চ্যাম্পিয়ন নোশিন এবার ছয় রাউন্ড পর্যন্ত পিছিয়ে ছিলেন কুমিল্লা
জেলার নুসরাত জাহান আলোর কাছে। এরপর আবার শীর্ষ স্থানে ফিরে পেয়ে টানা শেষ
রাউন্ড পর্যন্ত বজায় রেখেছেন। জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের উত্থান-পতন নিয়ে
নোশিন বলেন, 'আলোর কাছে হারের পর খুব আপসেট ছিলাম। খেলায় মনোযোগ হারিয়ে
ফেলছিলাম। আম্মু উৎসাহ দিয়ে বলছিল বাকি খেলাগুলো জিতলে আলো একটা হারলে প্লে
অফ হবে। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে বাকি খেলাগুলো জিতি। সব মিলিয়ে ১১
রাউন্ডের মধ্যে তিনটি ড্র, একটি হার ও সাতটি জয়।'
২০১৬ সাল থেকে জাতীয়
মহিলা দাবা খেলছেন নোশিন। ২০২২ সালে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন। পরের বছর খেলা
হয়নি। গত বছরের পর এবারও চ্যাম্পিয়ন। এবারের প্রতিযোগিতার মানকে বিগত
সময়গুলোর চেয়ে এগিয়ে রাখলেন তিনি, 'যখন জাতীয় মহিলা দাবা শুরু করেছিলাম,
তখন অনেক বয়স্ক নারীরা খেলতেন। এখন রাণী আন্টি ছাড়া সবাই খুব কম বয়স। যে
কেউ যে কাউকে হারানোর মত অবস্থা রয়েছে। এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মান অবশ্যই
বেশি।'
নোশিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে
স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার সঙ্গে খেলাধূলার ভারসাম্যতা নিয়ে
বলেন, 'জাতীয় দাবার জন্য দু’টি মিডটার্ম মিস করেছি। সেগুলো এখন পরে দিতে
হবে। দু’টোই চালিয়ে যাচ্ছি সমানভাবে।' টানা তিন বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হলেও
নোশিন এখনো ফিদে মাস্টার। দু’টি আন্তর্জাতিক মাস্টার নর্ম রয়েছে। মহিলা
আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে এখনো আরেকটি নর্ম ও ২২০০ রেটিং প্রয়োজন। তার
বর্তমান রেটিং ১৯৯০। এ নিয়ে খানিকটা আফসোস ঝরল তার কন্ঠে, 'এটা একটা
অতৃপ্তি। জোনালে চ্যাম্পিয়ন হলে আমিও সরাসরি মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে
পারতাম কিন্তু ওয়াদিফার কাছে হারায় হতে পারিনি। ওয়াদিফা আমাদের নৌবাহিনীরই
সে হয়েছে, আমারও সুযোগ ছিল হওয়ার।'
রেটিং কম ও টাইটেল নিম্ন হলেও
নোশিনই বাংলাদেশের সেরা নারী দাবাড়ু। তার স্বপ্ন মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার
নয়, গ্র্যান্ডমাস্টারই হওয়া। সেই গ্র্যান্ডমাস্টার হতে নর্ম, রেটিং উভয়
বৃদ্ধি প্রয়োজন। এজন্য দেশের বাইরে বেশি খেলতে হয়। আর্থিক সীমাবদ্ধতায় সেটা
হয় না। তাই খানিকটা শঙ্কিতই এই চ্যাম্পিয়ন, 'আমার যখন সেরা ফর্ম ছিল তখন
২১০০ প্লাস রেটিং ছিল। বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে দাবার কে ফ্যাক্টর ৪০ থেকে
কমে ২০ হয়। আমাদের দেশে টুর্নামেন্ট তেমন হয় না। ইউরোপে হাঙেরী, স্পেনে
খেলতে পারলে রেটিং বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। সেখানে খেলতে অনেক খরচ। আমি
নৌবাহিনী থেকে যা পাই তা দিয়ে পরিবার নির্বাহ হয়। বাইরে থেকে স্পন্সর আমার
খুবই প্রয়োজন।'
জাতীয় মহিলা দাবায় মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার রাণী হামিদ
২০ বার চ্যাম্পিয়ন। ৮২ বছর বয়সী রাণী হামিদ গত বছর হাঙেরীতে দাবা
অলিম্পিয়াডে টানা ৬ রাউন্ড জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এবার জাতীয় দাবায়
তার অবস্থান শেষ রাউন্ড পর্যন্ত ১১ তম। প্রথম পাচ জন অলিম্পিায়াডে খেলার
সুযোগ পান। ফলে আগামী বছর উজবেকিস্তানের অলিম্পিয়াডে রাণী হামিদের খেলার
কথা নয়।
