কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে দালালের উপদ্রবে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। রোগী ও রোগীর স্বজনরা নানা হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের হাতে। এবার দালালদের ধরতে র্যাব ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে। উক্ত অভিযানে ১০ জন দালালকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে পরিচালিত অভিযানে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযানে গণমাধ্যমের ফিতা ব্যবহার করে রোগী ধরার অভিযোগে মাহবুবুর রহমান হানিফ নামে এক ব্যক্তিকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ জনকেও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার নওরোজ কোরেশী দীপ্ত।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতলে আগত সেবাপ্রার্থী রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের হয়রানি রোধে জেলা প্রশাসন ও র্যাব যৌথভাবে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযান পরিচালনাকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দালাল চক্রের ১০ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। আটককৃতরা হলেন আদর্শ সদর উপজেলার কুচাইতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের পুত্র মো. ইমন (২১), মৃত আবুু মিয়ার পুত্র মো. সোহেল (৩০), খলিলুর রহমানের পুত্র মো. আবু নাছের (৩৬) ও এরশাদ মিয়ার পুত্র মো. তাজুল ইসলাম; চাপাপুর গ্রামের গাজী আ. মমিনের পুত্র মাহমুদ (৪০); তেতৌয়ারা গ্রামের গাজী আব্দুল লতিফের পুত্র মাহবুবুর রহমান হানিফ (২৮), সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজাপাড়ার মো. খোরশেদ আলমের পুত্র অপু (৩৪); চৌদ্দগ্রামের চিওড়া এলাকার আবুল কালামের পুত্র আলভিন; নোয়াখালীর চরপাত্তিগ্রামের মৃত শফিউল্লাহর পুত্র মো. জাকির (৪৩) এবং দাগনভূইয়ার উত্তর আজিজ ফাজিলপুর গ্রামের মো. রাজেস হোসেনের পুত্র আজিজ। এদের মধ্যে সর্বনিম্ন সাজা ১০ দিনের এবং সর্বোচ্চ ২০ দিনের। কেউ কেউ ১৫ দিনের সাজাও পেয়েছেন। অভিযান শেষে দালালদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
র্যাব আরো জানায়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিষেধাজ্ঞাজারীর পরও হাসপাতালে দালালি কার্যক্রম অব্যাহত রেখে গণ উপদ্রব সৃষ্টির দায়ে দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ এর ২৯১ ধারায় দোষীসাব্যস্ত করে আটককৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। আটককৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজ নিজ উপরোক্ত নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে। দালালের দৌরাত্ম্য ও হয়রানি নিরসনে ভবিষ্যতেও র্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত থাকবে। আটককৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমিল্লা জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
র্যাবের উপ পরিচালক মেজর সাদমান ইবনে আলম জানান, র্যাব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন অভিযানে চাঞ্চল্যকর অপরাধী ২শ ৩৯ জন গ্রেফতার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ আসামী এক জন গ্রেফতার, আরসা সদস্য-১৫ জন গ্রেফতার, জঙ্গি-দুই জন গ্রেফতার, হত্যা মামলায় ১শ ৮৬ জন গ্রেফতার, ধর্ষণ মামলায় ৯৩ জন গ্রেফতার, অস্ত্র মামলায় ২৯ জন গ্রেফতারসহ ১০৮ টি অস্ত্র, ১৩শ ৫৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার এবং ৪শ ৫০ জন এর অধিক মাদক কারবারি গ্রেফতারসহ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি ৭৮ জন অপহরণকারী গ্রেফতারসহ ৮৪ জন ভিকটিম উদ্ধার করেছে। ৮৬জন ছিনতাইকারী ও ডাকাত গ্রেফতার করেছে। জেল পলাতক ৩৯ জন, প্রতারণার আসামী ১৭ জনসহ অন্যান্য অপরাধী প্রায় ৫শ ৪০ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে।
