
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের প্রতীক হিসেবে চার দশক ধরে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। অথচ আজ সেই সিইপিজেডই এক ভয়াবহ মানবিক ও শিল্প বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পত্রিকান্তরে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১০ মাসে সেখানে ১৬টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন।
এই বিপর্যয়ের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বড় শিকার প্যাসিফিক জিন্স গ্রæপের সাতটি প্রতিষ্ঠান। সিইপিজেডে সংঘর্ষের জেরে হঠাৎ এই সাতটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং ৩৫ হাজার শ্রমিক বেকার হন। এর আগে সিইপিজেডের একটি আটতলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাÐের ঘটনায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক বেকার হন। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে কারখানা বন্ধ করা মালিকপক্ষের আইনি অধিকার হতে পারে, কিন্তু শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী কারখানা বন্ধের সময় শ্রমিকদের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি তাঁদের চরম সংকটে ফেলেছে।
প্রতিবেদনে শ্রমিকদের অসহায়ত্বের নানা দিক উঠে এসেছে।
শিল্প পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে অভ্যন্তরীণ দ্ব›েদ্বর পাশাপাশি বহিরাগত ইন্ধনের আশঙ্কা তদন্তের যে কথা বলছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরীও এই অস্থিরতার পেছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন।
সিইপিজেড ৪২ বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে এবং দুই লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু শিল্পাঞ্চলে বারবার সংঘর্ষ, ধর্মঘট ও অগ্নিকাÐ বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ করছে। একসময় চট্টগ্রামে বিজিএমইএর নিবন্ধিত কারখানা ছিল প্রায় ৭০০টি, এখন সক্রিয় রয়েছে অর্ধেকেরও কম। এভাবে কারখানা বন্ধ হতে থাকলে দেশের রপ্তানি আয়ে বড় ধস নামবে, বেকারত্ব বাড়বে আর সামাজিক অস্থিরতা তীব্র হবে, যা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রæত সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের মাধ্যমে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।
শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি শোনা ও সমাধানের জন্য একটি কার্যকর ত্রিপক্ষীয় সংলাপব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত, ইপিজেডের নিরাপত্তা অবকাঠামো আধুনিকায়ন এবং ফায়ার সেফটি মান নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। তৃতীয়ত, শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন কর্মসূচি নিতে হবে, যাতে হঠাৎ কারখানা বন্ধের আঘাতে তাঁরা মানবেতর জীবনে না পড়েন। অন্যথায় দেশের শিল্পভবিষ্যৎ ক্রমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে।
