ইংলিশ
প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরি বাংলাদেশের
জার্সিতে খেলছেন। তিনি আসার পরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত/প্রবাসী ফুটবলাররা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন দেশের হয়ে
খেলতে। বাফুফে সেই আগ্রহীদের নিয়ে ২৮-৩০ জুন ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেছে। ১৪
দেশের ৫২ জন প্রবাসী ফুটবলার এই ট্রায়ালে অংশ নেবেন।
আসন্ন ট্রায়ালকে
‘বাফুফে নেক্সট গ্লোবাল স্টারস’ নামকরণ করেছে। আজ (বুধবার) আনুষ্ঠানিক
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন হয়। বাফুফে সহ-সভাপতি ও
ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী এই ব্যাখ্যায় বলেন,
‘আমরা প্রবাসী ও স্থানীয় উভয় ফুটবলারদের সমান গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছি।
প্রবাসীরা বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আগ্রহী। তারা নিজেদের খরচে দেশে আসছে।
আমাদের টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞরা তাদের ট্রায়াল নেবেন। আবার আমরা স্থানীয়দের
নিয়েও বিভিন্ন ট্রায়াল, ফেস্টিভ্যাল ও টুর্নামেন্ট করছি। আমরা চাই
আন্তজার্তিক মানের খেলোয়াড়দের তুলে আনতে। আমাদের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত।’
সবচেয়ে
বেশি সংখ্যক ২০ জন যুক্তরাজ্য, ১৪ জন আমেরিকা, সুইডেন ৫, কানাডা ২,
ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, ওয়েলস, ইতালি, মালয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, স্পেন,
অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া থেকে একজন করে আসছেন। এই ফুটবলারদের
প্রথম দুইদিন দুই সেশন করে ট্রায়াল নেওয়া হবে। ৩০ জুন তৃতীয় দিন বিকেলে ৯০
মিনিটের একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলানো হবে নিজেদের মধ্যে।
ট্রায়াল প্রক্রিয়া নিয়ে বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারী টিটু
বলেন, ‘তিন দিন ট্রায়ালের জন্য যথেষ্ট সময়। প্রত্যেক ফুটবলার অন্তত ৬০
মিনিট খেলার সুযোগ পাবে। দেশের শীর্ষ লেভেলের কোচ মারুফুল হক, মিন্টু,
আলফাজ, রক্সিসহ বাফুফের ডেভলপমন্টে কমিটির সদস্য সাবেক জাতীয় ফুটবলার ছাইদ
হাসান কানন পারফরম্যান্স ইভালুয়েশন প্যানেলে থাকবেন; আমিও থাকব সাথে। সবার
মতামতের প্রেক্ষিতে বাছাই প্রক্রিয়া হবে।’
এএফসি’র অর্থায়নে বাফুফের
দশের অধিক কোচ রয়েছেন। তারাই মূলত বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলোয়াড় বাছাই করে।
প্রবাসীদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাফুফে ক্লাব পর্যায়ে কোচিং করা দেশের শীর্ষ
কোচদের ওপর ভরসা রাখছেন। বাফুফে ডেভলপমেন্ট কমিটির সদস্য ছাইদ হাসান কাননকে
পারফরম্যান্স ইভালুয়েশন প্যানেলে রাখলেও এই কমিটির আরেক সদস্য সাবেক জাতীয়
ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য নেই। যিনি দেশের অন্যতম সিনিয়র
কোচ। বাফুফে নির্বাহী কমিটিতে থাকা সাবেক জাতীয় ফুটবলার সত্যজিৎ দাশ রুপু,
সাইফুর রহমান মনি যাদের কোচিং লাইসেন্স ও এখনো ক্লাব ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত
তারাও নেই মূল্যায়ন কমিটিতে। অথচ বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন
রক্সি যিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য সম্প্রতি শাস্তি পেয়েছিলেন, তিনিও আছেন এই
কমিটিতে। পারফরম্যান্স ইভালুয়েশন কমিটি যেন শীর্ষ তিন ক্লাব আবাহনী,
মোহামেডান ও বসুন্ধরা কিংসের কোচদের রেখে ভারসাম্য করা হয়েছে। ঘরোয়া
ফুটবলের এক অভিজ্ঞ কোচ রহমতগঞ্জের কামাল বাবুর নাম নেই তালিকায়।
৫২ জন
ফুটবলারের মধ্যে সর্বনিম্ম বয়স ১৪ ও সর্বোচ্চ বয়স ২৭। বাফুফে এই ট্রায়ালের
মাধ্যমে আসন্ন এএফসি অ-১৭ ও ২৩ টুর্নামেন্টের বাছাই খেলোয়াড় সংগ্রহ করতে
চায়। খুব মেধাবী খেলোয়াড় পেলে ও কোচ যোগ্য মনে করলে সরাসরি জাতীয় দলেও
ডাকতে পারেন। বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এ নিয়ে বলেন, ‘আমরা মূলত দু’টি
বয়স গ্রুপ নিয়ে কাজ করব। যোগ্য ও মেধাবী খেলোয়াড় পেলে আমরা এই দলে বিবেচনা
করব। বাকিদের তথ্যও আমাদের সংরক্ষণে থাকবে।’
বাফুফের কাছে খেলোয়াড়দের
জাতীয় দলে (বয়সভিত্তিক) যোগ্য মনে না হলেও প্রবাসী ফুটবলারদের বাংলাদেশ
প্রিমিয়ার লিগে খেলার পথ থাকছে। ‘ট্রায়ালের শেষ দিনে আমরা সব ক্লাবকে
আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা প্রবাসী খেলোয়াড়দের খেলা দেখে প্রয়োজনবোধে তাদের
দলভুক্ত করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ সংশ্লিষ্ট ক্লাব ও খেলোয়াড়ের বিষয়। এখানে
বাফুফের কোনো এখতিয়ার বা অনুমতির প্রয়োজন নেই’, বলেন ডেভলপমেন্ট কমিটির
সদস্য ছাইদ হাসান কানন।
৫২ জন প্রবাসী ফুটবলার কোন পর্যায় থেকে
এসেছেন, সেটার বিস্তারিত তথ্য বাফুফে প্রদান করেনি। তবে টেকনিক্যাল
ডিরেক্টর প্রাথমিক ধারণা দিয়ে বলেন, ‘অন্তত একাডেমি পর্যায়ে খেলছে কিংবা
রয়েছে এ রকম ফুটবলার হতে হবে। যারা এসেছে কেউ একাডেমির ফুটবলার আবার অনেকে
সেই দেশের কোনো স্তরে খেলছে। অনেকেই আমাদের ছবি, ভিডিও এবং সিভি দিয়েছে।
কয়েকজন অবশ্য সিভি দেয়নি।’
বাফুফের সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম এই ট্রায়ালে
আসা খেলোয়াড়দের সমন্বয়ক ডেনমার্ক প্রবাসী সাকিব মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ
করছিলেন সভাপতির নির্দেশনায়। সেই ফাহাদ করিম আজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে
উপস্থিত ছিলেন না। আজ সম্মেলনে যে সকল তথ্য প্রদান করা হয়েছে বাফুফের পক্ষ
থেকে এর প্রায় সব তথ্যই বাফুফের আরেক সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম নানা সময়
বিভিন্ন মিডিয়ায় দিয়েছেন। এতে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের যৌক্তিকতা ও
ফেডারেশনের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে ডেভলপমেন্ট কমিটির
চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ‘ফাহাদ ভাই আজ উপস্থিত না থাকলেও
তিনি এতে সম্পৃক্ত রয়েছেন। গতকাল রাতেও তিনি আমাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন।’
বাফুফের
এই ট্রায়াল সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে লিড কমিটি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে
ডেভলপমেন্ট কমিটির ওপর দায়িত্ব বর্তেছে সম্প্রতি। গতকাল সন্ধ্যায় এই
ট্রায়াল নিয়ে কমিটির কর্মকর্তারা সভা করেছিলেন। বিগত সময়ে এএফসি’র অর্থায়নে
কোচরা ডেভলপমেন্ট কমিটির অধীনে থাকতেন। এবার টেকনিক্যাল কমিটির অধীনে সেই
কোচদের নিয়োগ হয়েছে। কমিটির আওতা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি
জাহেদী বলেন, ‘আমরা সম্মিলিতভাবেই ফুটবল নিয়ে কাজ করছি। এই ট্রায়াল
প্রক্রিয়ায় ডেভলপমেন্ট ও টেকনিক্যাল কমিটি যৌথভাবে সম্পৃক্ত। আমাদের
সভাপতিও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট কমিটি ও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করেই
নেন। আগে একক সিদ্ধান্তের রেওয়াজ থাকলেও এখন আমরা আলোচনা করেই নিই। অনেক
সময় ইসি মিটিং করা সম্ভব না হলেও ইমারজেন্সি কমিটিতে (সভাপতি, সিনিয়র
সহ-সভাপতি ও চার সহ-সভাপতি) আলোচনা হয়।’