ইসরায়েল ও ইরানের
মধ্যে সরাসরি পাল্টাপাল্টি বিমান হামলার ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ
তৈরি হয়েছে। ফলে শুক্রবার (১৩ জুন) একদিনেই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত
তেলের দাম ৭ শতাংশ বেড়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিশ্ববাজারে তেলের রফতানি
ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ
খবর জানিয়েছে।
শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুড প্রতি ব্যারেল ৭৪.২৩ ডলারে
লেনদেন শেষ করে, যা আগের দিনের তুলনায় ৪.৮৭ ডলার বা ৭.০২ শতাংশ বেশি। দিনের
এক পর্যায়ে এটি ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮.৫০ ডলারে, যা ২৭
জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। সপ্তাহের হিসেবে ব্রেন্টের দাম ১২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি
পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই)
ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি ৭২.৯৮ ডলারে পৌঁছেছে, যা ৪.৯৪ ডলার বা ৭.৬২
শতাংশ বেড়েছে। সেশন চলাকালীন সময়ে এর দাম ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে ৭৭.৬২
ডলারে পৌঁছেছে যা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ
করার পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বেড়ে গিয়েছিল। এরপর শুক্রবার প্রথমবারের
মতো একদিনে বিশ্ববাজারে আবারও জ্বালানির দাম বাড়লো।
ইসরায়েল দাবি করেছে,
তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ও সামরিক
কমান্ডারদের লক্ষ্য করে ‘দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযান’ শুরু করেছে।
তবে
ইরানও পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়,
শুক্রবার বাজার বন্ধ হওয়ার পরপরই ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবে একাধিক ভবনে
আঘাত হানে। দক্ষিণ ইসরায়েলেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে আহ্বান জানিয়েছেন তাদের পারমাণবিক
কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে, যাতে ‘পরবর্তী পরিকল্পিত হামলাগুলো’
বন্ধ করা যায়।
ইরানের জাতীয় তেল শোধন ও বিতরণ কোম্পানি জানিয়েছে,
দেশটির তেল শোধনাগার ও মজুদ সুবিধাগুলো কোনও ক্ষতির শিকার হয়নি এবং সেগুলো
স্বাভাবিকভাবে চালু রয়েছে।
তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের
সদস্য ইরান বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। এর
মধ্যে ২০ লাখ ব্যারেল তেল ও জ্বালানি রপ্তানি করে থাকে। বিশ্লেষক ও ওপেক
পর্যবেক্ষকদের মতে, ওপেক ও এর মিত্রদের (যেমন: রাশিয়া) অতিরিক্ত উৎপাদন
সক্ষমতা, যেটি যেকোনও রপ্তানি বিঘ্ন কাটিয়ে উঠতে ব্যবহার করা যেতে পারে,
সেটি ইরানের বর্তমান উৎপাদনের প্রায় সমান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি
আরও খারাপ হলে হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্বের
মোট তেল ব্যবহার্যের এক-পঞ্চমাংশ প্রায় ১৮-১৯ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন এই
প্রণালি দিয়ে যাতায়াত করে।
র্যাবোব্যাংক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সৌদি
আরব, কুয়েত, ইরাক এবং ইরান—চারটি দেশই তাদের রপ্তানির জন্য এই ছোট্ট একটি
প্রণালীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।’
সোসিয়েতে জেনারেলের বিশ্লেষক বেন হফ
জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ইরানের মূল জ্বালানি স্থাপনা খার্গ দ্বীপকে
লক্ষ্য করে আঘাত হানেনি, যেখান থেকে ইরানের আনুমানিক ৯০ শতাংশ অপরিশোধিত
তেল রপ্তানি হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি এমন একটি পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়
যেখানে ‘জ্বালানি-প্রতিবর্তী জ্বালানি’ নীতির ভিত্তিতে একপক্ষের তেল
অবকাঠামোর ওপর হামলা হলে অপর পক্ষও পাল্টা হামলা চালাতে পারে।’
বিশ্লেষকরা শুক্রবার বলেছেন, হরমুজ প্রণালি অবরোধের চেষ্টা করলে ইরানকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।
জেপি
মর্গানের বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, ইরানের অর্থনীতি পুরোপুরি সমুদ্রপথে
তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তাই পণ্য ও জাহাজ চলাচলের জন্য হরমুজ প্রণালীর
মুক্ত প্রবেশ অতি জরুরি।
তারা আরও বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে ইরানের একমাত্র প্রধান তেল ক্রেতা চীনের সঙ্গে সম্পর্কের জন্যও বিপরীত ফল বয়ে আনবে।’
এদিকে
তেলের বাজারের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য বাজারেও। শেয়ারবাজারে বড় পতন
দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়িয়ে ছুটছেন সোনার মতো নিরাপদ সম্পদের
দিকে। যুক্তরাষ্ট্রে তেল ও গ্যাস রিগের সংখ্যা টানা সপ্তম সপ্তাহে কমেছে।
বর্তমানে তেল রিগ ৪৩৯টি, যা অক্টোবর ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন।