মানুষ সৃষ্টিগতভাবে দুর্বলচিত্তের। তাই সে দুনিয়ার মোহে আসক্ত থাকে। ধনী হতে চায়। দুঃখ-দরিদ্রকে ভয় পায়।
কোনো মানুষই এ দুর্বলতা থেকে মুক্ত নয়। দুনিয়ার আধিক্যতা কামনা করে। অথচ দুনিয়ার মোহ, আধিক্য মানুষের অন্তরকে বক্র করে দেয়।
হাদিসে
বর্ণিত আছে, আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ
(সা.) আমাদের কাছে এসে দেখেন আমরা দরিদ্রতা সম্পর্কে আলোচনা করছি এবং সে
ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করছি।
আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা দরিদ্রতাকে
ভয় পাচ্ছো? যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! দুনিয়ায় এমনভাবে
তোমাদের ওপর ঢেলে দেওয়া হবে যে দুনিয়ার আধিক্য কামনাই তোমাদের অন্তরকে বক্র
করে দেবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫)
মানুষ দরিদ্রতাকে ভয় পায়, অথচ
দরিদ্রতা ভয়ের কিছু নয়; বরং অর্থবিত্ত ও বিপুল ঐশ্বর্যই হলো আশঙ্কার বিষয়।
কেননা এর মাধ্যমে মানুষকে পরীক্ষা করা হয়। দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও প্রাচুর্যের
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজন পবিত্র ধর্মের এবং নিষ্কলুষ অন্তরের।
আল্লাহ
তাআলা বলেন, ‘সেদিন দুনিয়ার ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না।
সেদিন ভাগ্যবান হবে কেবল সে, যে আল্লাহর কাছে আসবে বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে।’
(সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)
দুনিয়ায় প্রাচুর্য-সম্পদ বাড়াতে গিয়ে
মানুষ প্রতিনিয়ত গুনাহ ও পাপ করতে দ্বিধা করে না। যার ফলে সমাজে ঘুষ,
দুর্নীতি, সুদ চরম আকারে বৃদ্ধি পায়। মানুষ আত্মভোলা হয়ে যায়।
মানুষের
মধ্যে বেড়ে যায় ধন-সম্পদের হিংসা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘পরস্পর
ধন-সম্পদের অহংকার তোমাদের আত্মভোলা করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহে
উপস্থিত হচ্ছো। এটা কখনো ঠিক নয়, শিগগির তোমরা জানতে পারবে; অতঃপর, এটা
কখনো ঠিক নয়, শিগগির তোমরা এটা জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত
জ্ঞান দ্বারা অবহিত হতে (তবে এমন কাজ করতে না)। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম
দেখবে। এটা কখনো নয়, তোমরা এটা চাক্ষুষ প্রত্যয়ে দেখবেই, এরপর অবশ্যই সেদিন
তোমাদেরকে সুখ ও সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সুরা : তাকাসুর, আয়াত :
১-৮)
মানুষ দুনিয়াকে বহু মূল্যবান সম্পদ মনে করে। অথচ দুনিয়া ও তার
সম্পদ-প্রাচুর্য হলো অতি তুচ্ছ ও মূল্যহীন বস্তুর মতো। এক হাদিসে বর্ণিত
আছে, জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কান কাটা মৃত
বকরির বাচ্চার কাছ দিয়ে অতিক্রমকালে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে
এটাকে এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পছন্দ করবে? তাঁরা বলেন, আমরা তো এটাকে
কোনো কিছুর বিনিময়েই নিতে পছন্দ করব না। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এটা
তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া (এবং তার সম্পদ) এর
চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট।’ (মিশকাত, হাদিস : ৫১৫৭)
দরিদ্রতা মূলত ভয়ের কারণ
নয়, বরং ভয়ের কারণ হলো দুনিয়ার মোহ ও প্রাচুর্যতা। এক হাদিসে এসেছে, আমর
ইবনে আওফ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের
সম্পর্কে দরিদ্রতার ভয় করি না; কিন্তু আমি ভয় করি যে তোমাদের ওপর দুনিয়াকে
প্রশস্ত করে দেওয়া হবে, যেমন প্রশস্ত করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের
ওপর। আর তোমরা তা লাভ করার জন্য ঐরূপ প্রতিযোগিতা করবে, যেরূপ তারা
প্রতিযোগিতা করেছিল। ফলে তা তোমাদের ধ্বংস করবে যেরূপ তাদের ধ্বংস করেছিল।
(মিশকাত, হাদিস : ৫১৬৩)