রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কারও দোষ
অনুসন্ধান করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না।’ এখানে গোয়েন্দাগিরির অর্থ হলো
কারও দোষ সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করা। সে সম্পর্কে জানার জন্য যেকোনো
উপায় অবলম্বন করা। আর দোষ অনুসন্ধানের অর্থ হচ্ছে, কান পেতে শোনা। কেউ যখন
গোপনে আলাপ করে, এক কোণে আত্মগোপন করে তা শোনার চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ
(সা.) দোষ অনুসন্ধান ও গোয়েন্দাগিরি উভয়টাকেই হারাম ঘোষণা করেছেন।
তবে
কেন হারাম ঘোষণা করলেন? কেননা, অন্যের দোষ অনুসন্ধান ও গোয়েন্দাগিরিতে
প্রবৃত্ত হওয়া এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, এসবে লিপ্ত ব্যক্তি নিজের
দোষত্রুটির ব্যাপারে বেখবর। যদি সে নিজের দোষত্রুটি নিয়ে চিন্তিত থাকত,
তাহলে কখনোই অন্যের দোষত্রুটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারত না।
যে নিজের
পেটের ব্যথায় অস্থির এবং দিশেহারা তার কি এই চিন্তা হয়, কার সর্দি-কাশি
হলো, আর কার জ্বর-ঠান্ডা লাগল। সে তো নিজের ব্যথায়ই অস্থির। যতক্ষণ সে
নিজের ব্যথা থেকে মুক্ত হতে না পারবে, ততক্ষণ সে কী করে অন্যের ব্যথা-বেদনা
নিয়ে ভাববে।
যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খোঁজে আল্লাহ তার দোষ খোঁজেন।
মহানবী (সা.) মানুষের দোষ-ত্রুটি খুঁজতে নিষেধ করেছেন এবং এর মন্দ পরিণতি
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা দোষ-ত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা
তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজবেন। আর
আল্লাহ কারও দোষ-ত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে
ছাড়বেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০৩২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে
ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন
তার গোপনীয় বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় বিষয়
ফাঁস করে দেবে, আল্লাহ তার গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেবেন। এমনকি এই কারণে
তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৪৬)
যখন
আমরা নিজেদের দোষত্রুটির চিন্তায় বিভোর থাকব, আল্লাহর দরবারে পরকালে
আমাদের কী পরিণতি হবে তা নিয়ে চিন্তিত থাকব। তখন আর অন্যের দোষত্রুটির দিকে
দৃষ্টি পড়তেই পারে না। বাহাদুর শাহ জাফর (রহ.) বলতেন, ‘যতক্ষণ তুমি নিজের
দোষত্রুটি নিয়ে বেখবর ছিলে, ততক্ষণ অন্যের দোষত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলে। আর
যখনই নিজের দোষত্রুটির ওপর নজর পড়ল, নিমিষেই অন্যের সকল দোষত্রুটি দৃষ্টি
থেকে উধাও হয়ে গেল। (ইসলাহি মজলিস, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২১৮; (যুগজিজ্ঞাসার
ইসলামি সমাধান, আল্লামা মুফতি তকি উসমানি, অনুবাদ, মহিউদ্দিন কাসেমী,
মাকতাবাতুল খিদমাহ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৯৬-২৯৭)