কুমিল্লার
দাউদকান্দির রায়পুর গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ২৩ মে রায়পুর গ্রামে
হিন্দু সম্প্রদায়ের ৯ জন নারী-পুরুষকে রায়পুর খালপাড়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই গণহত্যায় সহযোগিতা করে হানাদার বাহিনীর
এদেশীয় দোসর- রাজাকাররা।
রায়পুর গণহত্যায় শহীদরা হলেন, শহীদ ডাক্তার
পাণ্ডব দেবনাথ, শহীদ শীতল চন্দ্র সরকার, শহীদ পা-ব সাহা, শহীদ বিদিশীনী
সাহা, শহীদ ফেলান সরকার, শহীদ শরৎ চন্দ্র সরকার, শহীদ সুধির বণিক, শহীদ
কামিনী সুন্দরী দেবনাথ এবং শহীদ উমেশ সরকার (হারাই মিস্ত্রী)। সূত্র : মো.
আল- আমিন ও বাশার খান রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে দাউদকান্দি’ গ্রন্থ, পৃষ্ঠা- ৪৬।
উল্লেখ্য
যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই বর্বর গণহত্যার কথা অনেক বছর আলোচনার বাইরে
ছিল। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর ২০১৪ সালে একদল মাঠ গবেষককে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাস
গবেষক বাশার খান রায়পুর গণহত্যা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। স্থানীয়
স্বাধীনতাবিরোধীদের থেকে বিভিন্ন বাধা আসলেও কাজটি এগিয়ে নিতে তৎকালীন
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল- আমিন,
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবু বাছেত, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ এবং
বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম আন্তরিক সহযোগিতা করেন। এতে মাঠ গবেষক হিসেবে
কাজ করেন বর্তমানে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম,
জামালপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ইলিয়াস সানি, মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক
সৌরভ আহমেদ এবং দাউদকান্দি প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক
আলমগীর হোসেন সহ আরো কয়েকজন।
পরে ২০১৬ সালে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ ও
উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং বাশার খানের সম্পাদনায় "কুমিল্লা ১৯৭১-
রায়পুর গণহত্যা" শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থে ভূমিকা লিখেন তৎকালীন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
এবং প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সহযোগী সম্পাদক ছিলেন
কথাসাহিত্যিক মোজাফ্ফর হোসেন। গ্রন্থটির প্রকাশের পর এলাকায় আলোড়ন তৈরী হয়।
কারণ এর আগে রায়পুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা নিয়ে তরুণ
প্রজন্মের কোনো ধারণা ছিল না। কেউ কোনো কাজও করেনি। ছিল না কোনো লিখিত
ডকুমেন্টস।
এরপর দীর্ঘদিন ধরে ৯ জন শহীদের স্বজন, স্থানীয় বীর
মুক্তিযোদ্ধা, রায়পুর গণহত্যার গবেষক বাশার খান এবং মুক্তিযুদ্ধপ্রেমীরা এই
বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের লাগাতার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর
পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে তৎকালীন দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.
আল-আমিন প্রাথমিকভাবে সেখানে একটি অস্থায়ী পিলার স্থাপন করে বধ্যভূমি
চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করেন। কিন্তু দুর্বৃত্তকারীরা সেবছরের ডিসেম্বর মাসে এক
গভীর রাতে বধ্যভূমির পিলার ভেঙ্গে খালে ফেলে দেয়। এ ঘটনার পর আবার সেখানে
পিলার স্থাপন করা হয়।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ২০২১ সালে সেসময়ের স্থানীয়
সংসদ সদস্য, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের
প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার
কামরুল ইসলাম খানের তত্ত্বাবধানের বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়।
তবে
রায়পুর স্মৃতিস্তম্ভটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। সেখানে ৯ জন শহীদের নামফলক
স্থাপিত হয়নি। অপরদিকে, স্মৃতিস্তম্ভের কোথাও রায়পুর গণহত্যার সংক্ষিপ্ত
ইতিহাস লিপিবদ্ধ বা খোদাই করা নেই। ফলে এ পথে যাতায়াকারী স্কুল-কলেজের
শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্ম রায়পুর গণহত্যার ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।