
কুমিল্লার
চৌদ্দগ্রামে সরকারি ও জাতীয়করণসহ ১৭৫ বিদ্যালয়ের ৬৪ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান
শিক্ষক। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসেও রয়েছে জনবল সঙ্কট। এছাড়া অভিভাবকদের
অসচেতনতা, শিশুশ্রমের প্রচলন, যত্রতত্র অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে
উঠা, মোবাইল আসক্তিতে সামাজিক অবক্ষয় ও পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতার
ঘাটতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এ অবস্থার উত্তরণে
জনবল সঙ্কট নিরসন ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নেয়া প্রয়োজন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা
অফিস ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জনবল সঙ্কট রয়েছে। সঙ্কট নিরসনে উর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সহকারী উপজেলা
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের ৬টি পদ, অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটরের ৩টি
পদ, উচ্চমান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক ও অফিস সহায়কের পদ খালি রয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে ১৭৫ জনের মধ্যে শূণ্যপদ ৬৪, সহকারি
শিক্ষক পদে ১০৯৫ জনের মধ্যে শূণ্যপদ ৭২, দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে ১১৪
জনের মধ্যে শূন্যপদ ১৫।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৬৪ প্রাথমিক
বিদ্যালয় চলছে ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক’ দিয়ে। অর্থ্যাৎ বিদ্যালয়ের
সহকারি শিক্ষকদের একজনই ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। ফলে
এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। শিশুদের শিক্ষার
প্রাতিষ্ঠানিক ধাপ প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে অভিভাবকের
অসচেতনতা, শিশুশ্রমের প্রচলন, ধর্মীয় বিশ^াস, যত্রতত্র অনুমোদনহীন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা, বারংবার শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন, সামাজিক অবক্ষয়-মোবাইল
আসক্তি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান বাস্তবায়নে অনীহা, সকল বিদ্যালয়কে
এক শিফটে চালু করতে না পারা, শিক্ষকদের শ্রেণি পাঠদানে আন্তরিকতার ঘাটতি,
শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে প্র্রাথমিক শিক্ষার
কাঙ্খিত উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটছে।
প্রধান শিক্ষক নেই এমন বিদ্যালয় হলো;
যুগিরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অশ^দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
সামুকসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নালঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
পোটকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুপুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাদৈর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উনকোট
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফকিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুভপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাশাকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নায়ারনপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধনুসাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসন্তপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খিরনশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাসকরা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মরকটা সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, পন্নারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জঙ্গলপুর সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিঙ্গুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটানন্দী সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৬নং বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুলিয়ারা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লুদিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সারপটি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোষতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেতড়া সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাঙ্গিশ^র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আতাকরা সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিজয়করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরিকোট সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজবল্লবপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলের নাওড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকদিয়া
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাটিতলা
রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বিজয়করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
কাতালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজনকরা রেজিস্ট্রার প্রাথমিক
বিদ্যালয়, কিশালয় ধোপাখিলা রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, নগর শরীফ সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, কনকাপৈত বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খিল্লাপাড়া
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরপাড়া হাজী সফর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
এম এ করিম রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর হাজারী পাড়া সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাটিয়ার খিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আগুনশাইল সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, আতাকরা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূর্গাপুর
উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাকজুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেলীহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝিকড্ডা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেছকিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বান্দেরজলা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আঠারবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চৌদ্দগ্রাম
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক কাজী কবির হোসেন বলেন,
‘প্রধান শিক্ষক না থাকলে বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
সরকারের উচিত-শিগগিরই বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক নিয়োগ
দেয়া। শিক্ষক সঙ্কট নিরসন হলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে’।
এ
ব্যাপারে গতকাল সোমবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল
হুদা তালুকদার বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক সঙ্কট থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
হচ্ছে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। এছাড়া প্রধান শিক্ষক
পদোন্নতির বিষয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। মামলাটির রায় হলেই প্রধান
শিক্ষক সঙ্কট নিরসন হবে’।