রাজনৈতিক
নেতাদের তোষামুদী না করে নিজেদের মেরুদণ্ড শক্ত করে কাজ করার নির্দেশ
দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
শুক্রবার
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক সম্মেলন পক্ষে জেলার চলমান উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের
উন্নয়ন অগ্রগতি সম্পর্কে পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রশাসন ও
বিভিন্ন দপ্তর প্রধানদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের টপ
সয়েল কাটা ও বিক্রি এবং ভূমিদস্যুদের কঠোরহস্তে দমন করতে হবে। ভূমির
উপরিভাগের টপ সয়েল তৈরি হতে ২৫ থেকে ৩০ বছর সময় লাগে। এ মাটি ইটভাটায়
যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে মাটিকাটা বন্ধে পুলিশ প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন
উদ্যোগ নিয়ে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কাজ করতে গিয়ে কোন
রাজনৈতিক চাপ আসলে সেটি মোকাবেলা করতে হবে, তোষামদী করা যাবেনা। শক্ত ও
কঠিন পদক্ষেপের বিষয়ে সরকার সহযোগিতা করবেন। আপনাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা
মেরুদণ্ড শক্ত করে কাজ করবেন।
বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সতর্ক
করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, অফিসের ভিতরে কোন রাজনৈতিক বা
গুষ্টিগত পরিচয়কে এলাও করবেন না এবং নিজেও সেটি এড়িয়ে চলবেন। যদি রাজনৈতিক
পরিচয় দিতে চান সেটি বাহিরে দিবেন। নির্দেশনা মানতে চাইলে ঢুকবেন, তা না হয়
অফিসে ঢুকবেন না।
এদিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও
কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কে বাজার অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট যানজট নিরসনের
নির্দেশ দেন তিনি।
অন্যদিকে, চলমান উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের উন্নয়ন
অগ্রগতি সম্পর্কে পর্যালোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। পর্যালোচনা
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে
গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে পুরনো কাঠামো পরিবর্তন করা না গেলে আবারও
স্বৈরাচার ফিরবে। চেষ্টা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করে
মতোপার্থক্য দূর করে একটা জাতীয় সনদ প্রণয়নে। যার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও
নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হবে।
তিনি বলেন, দেশের নির্বাচনী অঙ্গন,
রাজনৈতিক অঙ্গন চরমভাবে দুর্বিত্তায়নের কবলে পড়েছে। এ দুর্বিত্তায়নের অবসান
ঘটানো দরকার। রাজনৈতিক ও নির্বাচনে অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করা দরকার। টাকার
খেলার অবসার করে জনগণকে সচেতন করা দরকার। এগুলো হলেই আমরা একটা সুষ্ঠু ও
নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হবে। যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটতে
পারে। এজন্যই সরকারের উদ্যোগে ১১ টি সংস্কার কমিশন সৃষ্টি করা হয়েছে। ছয়টি
সংস্কার কমিশন তাদের রিপোর্ট দিয়েছেন। এ রিপোর্টগুলোর ভিত্তিতে তারা যে
সুপারিশগুলো করেছে, এ সুপারিশগুলো যাতে বাস্তবায়িত হয় সেই জন্য বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ আলোচনা করা জন্য ঐক্যমত কমিশন গড়তে হয়। প্রধান
উপদেষ্টা গঠিত ঐক্যমত কমিশনের প্রধান। আমরা চেষ্টা করছি রাজনৈতিক দলগুলোর
সাথে আলাপ আলোচনা করে এ সংস্কার গুলো সম্পর্কে তাদের সঙ্গে একটি ঐক্যমত
সৃষ্টি করতে।
তিনি আরো বলেন, সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ
নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের প্রস্তাবগুলো মেনে নিলেই সরকার
সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। যার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু
নির্বাচনের পথ সুগম হবে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটবে।
পর্যালোচনা সভায়
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছারের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়াসহ পুলিশ ও উপজেলা
প্রশাসনসহ কুমিল্লার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।