টানা
কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানে ভারত থেকে আসা ঢলে কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জে
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের অভাব মনোহরগঞ্জের
প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানভাসী মানুষের মাঝে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ডাকাতিয়া
নদীর পানি বৃদ্ধিতে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষ করে লাকসাম ও
মনোহরগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর পানি উপচে ও বিভিন্ন
এলাকায় বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে দুই উপজেলার ৪
লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। ১৮৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ইতিমধ্যে প্রায়
২৯ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি
বেড়েছে।
লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা অফিসের তথ্যমতে, সোমবার (২৬ আগস্ট)
দুপুর ২টা পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর পানি সব পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে আগের তুলনায় বেড়েছে।
লাকসাম-মনোহরগঞ্জ
উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর কয়েকটি স্থানে পাড় ভেঙে পানি ঢুকে
নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে লাকসাম পৌরসভা, লাকসাম উপজেলা ও
মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৪ লক্ষাধিক
মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। লাকসাম উপজেলার ৮৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১৭ হাজার
মানুষ এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১০৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১২ হাজারের অধিক মানুষ
আশ্রয় নিয়েছেন। তবে কিছু আশ্রয় কেন্দ্রের নিচতলা ডুবে যাওয়ায় আশ্রয়
গ্রহনকারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
এদিকে, উপজেলা দুটির পানিবন্দি ও
আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নেওয়া লোকদেরকে উপজেলা প্রশাসন, জামায়াতে ইসলামী,
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিএনপি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিভিন্নভাবে
সহযোগিতা করে আসছেন।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই
সিদ্দিকী বলেন, পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায় ৮৩টি আশ্রয়
শিবিরে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। এ
পর্যন্ত আমরা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ৪৫ মেট্রিক টন
চাল পেয়েছি। চাল-ডাল, চিড়া-মুড়ি, গুঁড়, চানাচুর -বিস্কুটসহ নানা খাদ্য
সামগ্রী বন্যার্তদের মাঝে পৌঁছাচ্ছি। প্রশাসন ছাড়াও জামায়াত-বিএনপিসহ
অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের
উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে
পড়ায় অনেক জায়গায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছেনা। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা
করছি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর।
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী
অফিসার উজালা রানী চাকমা বলেন, -আমার মনোহরগঞ্জ উপজেলাবাসী ভালো নেই।
তারপরও আমরা সকলকে নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করে আসছি
এবং এটা চলমান থাকবে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে উপজেলাটির ১০৫টি আশ্রয়
কেন্দ্রে প্রায় ১২ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার সবগুলো
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন
রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি পর্যায়সহ আমরা উপজেলা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো বন্যার্তদের সহযোগিতা করছি। আমরা এ পর্যন্ত
মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল পেয়েছি। তবে
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছানো যাচ্ছেনা।
দেখা
যাচ্ছে, আমরা একটি গ্রামে ৩০টি পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে গেছি। কিন্তু
ওখানে গিয়ে দেখা যায়, একশটি পরিবার অবস্থান করছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায়
ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
লাকসাম পৌরসভা জামায়াতের আমীর
মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী জানান, লাকসাম পৌরসভা ও উপজেলার বেশ কয়েকটি
আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নেয়া বন্যার্তদের মাঝে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রতিদিন
সাড়ে চার হাজার রান্না করা খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। এ সংখ্যা আরো
বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, বন্যার্তদের সহযোগিতায় আমাদের নেতা-কর্মীরা
দিনরাত পরিশ্রম করছেন। একমাত্র মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য আমরা এ কাজ
করছি। অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।
সেইভ দ্যা হিউমিনিটির চেয়ারম্যান ও
জামায়াত নেতা এডভোকেট বদিউল আলম সুজন জানান, লাকসাম উপজেলার ৮৩টি আশ্রয়
কেন্দ্রসহ লাকসাম পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি মানুষকে
নিরাপদ রাখতে লাকসাম পৌরসভা ও উপজেলা জামায়াত-শিবির এবং সেইভ দ্যা
হিউমিনিটি সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। তাদের প্রতিবেলা রান্না করা ও
শুকনো খাবারসহ সকল বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
মনোহরগঞ্জ
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম
আহবায়ক অধ্যাপক সরওয়ার জাহান ভূঁইয়া দোলন বলেন, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার
বিএনপির অভিভাবক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম
নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন। বন্যায় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে
আমরা বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা পৌঁছানো হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ
সামগ্রী বিতরণকালে মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা
মোহাম্মদ নুরন্নবী বলেন, আমরা হাতে হাত রেখে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
একটি সুন্দর সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা বন্যার্তদের পাশে
সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি।
এ সময় তিনি, নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে বন্যা দুর্গতদের পাশে থাকার আহ্বান জানান।