নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের
প্রথম দিনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এরশাদ নামে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে
হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে জেলার দেবিদ্বারে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ
ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবদ্ধ হয়ে রুবেল নামে এক
গাড়ি চালকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আন্দোলন চলাকালে
হামলায় আহত এক যুবক কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
মৃত্যুবরণ করেছেন। রাত ১০টা পর্যন্ত তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা
যায়, পুলিশ কনস্টেবল এরশাদ ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় কর্মরত ছিলেন। রবিবার
দুপুরে হঠাৎ আন্দোলনকারীরা ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় আক্রমণ করেন। এ সময়
পুলিশ সদস্যরা ছাদে উঠে যান। কিন্তু এরশাদ আর উঠতে পারেননি। তাকে একা পেয়ে
পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাইওয়ে কুমিল্লা
রিজিওনের পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম। এছাড়াও এদিন দাউদকান্দিতে বেশ কয়েকটি
গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরা করা হয়। আন্দোলন ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠে
দাউদান্দি।
পুলিশ জানায়, আন্দোলনরতরা মিছিল নিয়ে দুপুরে ইলিয়টগঞ্জ
হাইওয়ে থানায় ঢুকে প্রথমে নিচতলা ভাঙচুর করে এবং পরে দ্বিতীয় তলায় ভাঙচুর
চালায়। এক পর্যায়ে থানায় অগ্নিসংযোগ করে কনস্টেবল এরশাদকে টেনেহিঁচড়ে
বাহিরে নিয়ে আসে এবং পরে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে। খবর পেয়ে
সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
অপরদিকে
কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ,
আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে
গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন বাস চালক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম মো. আবদুর রাজ্জাক
রুবেল (৩৩)। তিনি পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত মো.রফিকুল ইসলামের ছেলে।
সে বিএনপির সমর্থক বলে জানা গেছে। রুবেলের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা.আলী এহসান। তিনি বলেন,
রুবেল নামে একজনের মরদেহ দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে।
আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি তার মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর
১টার দিকে পৌরসভার বানিয়াপাড়া আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ
ঘটনা ঘটে। দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪জন চিকিৎসা
নিয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা
জানান, সকাল ১০টার দিকে দেবিদ্বার নিউ মার্কেট স্বাধীনতা চত্বরে অবস্থা
নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক
নেতাকর্মী। অপরদিকে, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা ছোটআলমপুর, ভিরাল্লা,
বারেরা, চরবাকর ও এসএ সরকারি কলেজ গেইট সংলগ্নসহ কয়েকটি এলাকায় অবস্থান
নেয়। পরে ছোট আলমপর এলাকা থেকে দৌড়ে এসে আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদের
দেয়াল ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে উপজেলা পরিষদ হলরুম, ইউএনওর বাসভবন,
পৌরপাঠাগার, ভাঙচুর চালায়। এছাড়াও উপজেলা গেইটের সামনে পার্কিং করে রাখা
একটি ‘পাঠাও’ প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা।
পরে
বিকাল ৩টার দিকে স্থানীয় এমপি মো. আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও
ভাঙচুর বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল শেষে এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন,
বিএনপি-জামাত চক্র দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষের জানমাল
নিরাপত্তা দিতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে আছি থাকব।
উপজেলা নির্বাহী
অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, দুবৃর্ত্তরা আমার বাসভবনসহ, উপজেলা
পরিষদ হলরুম ভাঙচুর করেছে। উপজেলা গেইটের সামনে পার্কিং করে রাখা একটি
প্রাইভেট কারেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)
মো. নয়ন মিয়া বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় রুবেল নামে একজন নিহত হয়েছেন। ভাঙচুর ও
প্রাইভেটকার পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থতরা থানায় অভিযোগ দিলে ঘটনা তদন্ত
করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে আন্দোলন চলাকালে আহত হয়ে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তবে
নিহত যুবকের কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
পরিচালক ডাঃ শেখ ফজলে রাব্বি জানান, রোববার বিকাল তিনটায় আহতবস্থায়
ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে কয়েকজন যুবক ভর্তি হয়। ওই সময় তাদের সাথে
আহতবস্থায় ওই যুবককেও নিয়ে আসা হয়। গুরুতর আহত ওই যুবককে আইসিউতে নিয়ে
যাওয়া হয়। পরে বিকাল সাড়ে তিনটায় মারা যায়। নিহত যুবকের কোন পরিচয় আমরা
সনাক্ত করতে পারিনি। নিহতের মাথায় ও পায়ে কোপের আঘাত রয়েছে। তিনি আরো
জানান, সোমবার বিকাল পযন্ত এ হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৩২ জন
রোগি ভর্তি হয়।