কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক সমিতি দ্বিতীয় দফায় ৭ দিনের শ্রেণি
কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিলো গত ১৮ মার্চ। তবে তাদের এ সিদ্ধান্তে
শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
১৮ মার্চ থেকে আজ ২৪
মার্চ (রবিবার) পর্যন্ত চলমান তাদের ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত, যা আগামী ২৭
মার্চ পর্যন্তই চলবে বলে জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। তাছাড়া, গত ১৩ এবং ১৪ই
মার্চেও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষার্থীদের
সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের ফলে
ক্লাসগুলো হচ্ছে না। কিছু কিছু বিভাগের ঈদের আগে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট
প্রেজেন্টেশন এবং মিডটার্ম পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের
ক্লাস বর্জনের ফলে এগুলো ঈদের আগে শেষ হচ্ছে না। এতে তাদের সেমিস্টার
ফাইনালে বসতে দেরি হতে পারে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাহফুজুর
রহমান বলেন, 'শিক্ষক সমিতি ক্লাস বর্জন করেছেন নিজেদের স্বার্থের জন্য।
তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবেন না, নিজ ভাবনাতেই ব্যস্ত থাকেন। তারা আমাদের
রেগুলার শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন করে ইভেনিং ক্লাস নিচ্ছেন, কারণ ওটায়
লাভ আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষকদের ঝামেলায় কেন শিক্ষার্থীরা
ভুক্তভোগী হবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার চেয়ে শিক্ষকদের রাজনীতির চর্চাই
বেশি হচ্ছে। এই সিস্টেম, এই রেষারেষি বন্ধ করা উচিত।'
শ্রেণি কার্যক্রম
বন্ধের এ সিদ্ধান্তে কিছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা
দিয়েছে। কেন না শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পরও ১৯ এবং ২০ই মার্চ বেশ
কয়েকটি বিভাগে ক্লাস এবং পরিক্ষা চলমান থাকতে দেখা গেছে। তাছাড়া ইভিনিং
কোর্সগুলোও চলমান আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাস্টার্স পড়ুয়া কলা
অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমাদের অ্যাকাডেমিক রুটিন অনুযায়ী ঈদের পরে
সেমিস্টার হওয়ার কথা এবং ইনকোর্স ঈদের আগে হওয়ার কথা। ক্লাস না হওয়ায় আমরা
এখন পিছিয়ে গেছি। যার ফলে আমাদের শিক্ষাজীবনে লস হয়ে যাচ্ছে কিছুদিন।'
এ
ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, 'শিক্ষক
এবং শিক্ষার্থী দুই মিলেই বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকরা থাকেন অভিভাবকের জায়গায়।
এখন শিক্ষকরা যদি শান্তিতে না থাকে, বৈষম্যের শিকার হয়, হেনস্তার শিকার হয়
এবং সেটি উপাচার্য স্যারকে বারবার বলার পরও যেহেতু উপাচার্য স্যারের কাছ
থেকে কোনো প্রতিকার আসতেছে না সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা
ফিরিয়ে আনার জন্যই শিক্ষক সমিতির এ কর্মসূচি।'
শিক্ষার্থীদের ক্ষতি এবং
সেশন জটের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের সাময়িক যে ক্ষতি হচ্ছে সেটা
আমরা পুষিয়ে দেব। রাতে-দিনে এমনকি অনলাইনে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও তাদের এ
ক্ষতি পুষিয়ে দেব, এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।'
এ
ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, 'শিক্ষকদের
যুক্তিযুক্ত দাবিদাওয়া থাকলে সেগুলো নিয়ে বসে সৌহার্দপূর্ণ আলোচনা করতে
পারে। এগুলোর সাথে ক্লাস বর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। এতে আমাদের
শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পাঁচটি বিভাগ
অ্যাকাডেমিকভাবে পিছিয়ে আছে। আমি আসার শুরু থেকেই অ্যাকাডেমিক প্লান
অনুসারে এগুলো নিরসনে কাজ করছি। আমি শিক্ষকদের আবারও আহবান করছি আপনারা
ক্লাসে ফিরে যান।'