৭২
বছর বয়সে কে আর নতুন স্বপ্ন দেখে? বেশিরভাগ মানুষ যেখানে বিশ্রাম নেন,
সেখানে কুমিল্লার সদর উপজেলার পাচথুবী ইউনিয়নের ভারতের কোল ঘেষে অবস্থিত
একটি গ্রাম শরিফপুর। আর ঐ গ্রামের কৃষি বিদ ৭২ বছর বয়সী সাবেক বিআরডিসির
কর্মকর্তা সামছুল হক মজুমদার যেন নতুন করে কৃষির ইতিহাস লিখছেন!
সাবেক
বিআরডিসি কর্মকর্তা এই মানুষটি একযুগ ধরে ধান, পেপে, আনারস ও ড্রাগন, ফল ও
বিষ মুক্ত সবজি চাষে সাফল্য অর্জনের পর এবার নাম লিখিয়েছেন থাই ও পাহাড়ি
জাতের আদা চাষে- তাও আবার “বস্তা পদ্ধতিতে”।
সরজমিনে দেখা গেছে, তিনি
প্রথমে সরকারি সহায়তায় ২০ বস্তা আদা রোপণ করেন। ফলাফল আশানুরূপ হওয়ায় নিজ
উদ্যোগে ৩,০০০ বস্তা আদা রোপণ করেছেন। প্রতি বস্তায় চাষের খরচ মাত্র ৩০
থেকে ৪০ টাকা, আর বিক্রয়মূল্য ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ফলে খরচ বাদেও প্রায় ৫০
শতাংশের বেশি লাভের আশায় উচ্ছ্বসিত এই উদ্যমী কৃষক।
বস্তা পদ্ধতিতে
চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা-এতে পরিত্যক্ত জমি বা বসতবাড়ির ফাঁকা জায়গাও
অনাবাদি জমি কাজে লাগানো যায়। এ বিষয়ে সামছুল হক বলেন কৃষিতে নতুন কিছু
করতে চাই। বয়স নয়, ইচ্ছাই আসল শক্তি।
কুমিল্লার কৃষি অফিসাররা জানিয়েছেন, তার এই উদ্যোগ শুধু এলাকায় নয়, কুমিল্লা জেলাতেও নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
অবসরে
এসে সামছুল হক তার পৈতৃক ৪০ শতক জমি বিক্রি করে সেই অর্থে একটি নান্দনিক
পরিবেশ বান্ধব বাংলো নির্মাণ করেন। পরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শিকড়’ নামে কৃষি
উৎপাদন ফার্ম ও রিসোর্ট, যেখানে তিনি বিষমুক্ত ধান ও সবজি উৎপাদন করে
চলেছেন। তার দু মেয়ে এক ছেলে, ছেলে টি কর্পোরেট জব করেন,বড় মেয়ে কুমিল্লার
নামকারা গাইনী চিকিৎসক, ছোট মেয়ে শিক্ষার্থী, স্ত্রী তার একমাত্র সাথী।
শহরের মুরাদপুরে আরেকটি নান্দনিক পরিবেশ বান্ধব বাড়ি রয়েছে। তিনি তার
পরিবার নিয়ে ওখানে থাকেন,সকাল ১০ টা বেজতেই বাইক নিয়ে ছোটে আসেন শহরের
বাহিরে পত্রৈক বাড়ি শরিফ পুর মজুমদার বাড়িতে। এসেই তার কৃষি জমি আর
রিসোর্টে কাজে লেগে যান।
এবার তিনি থাই ও পাহাড়ি জাতের আদা রোপণ করেছেন
পুরোপুরি বিষমুক্ত উপায়ে। তার বিশ্বাস-কম খরচে, পরিশ্রমে এবং জায়গা বাঁচিয়ে
এই চাষ দেশের অনেক বেকার মানুষের নতুন সম্ভাবনা খুলে দিতে পারে।
৭২ বছর বয়সেও হাসিমুখে সামছুল হক পতিবেদককে বলেন,আমার শরীর ক্লান্ত হতে পারে, কিন্তু কৃষির প্রতি ভালোবাসা এখনও তরুণ।
তিনি
এখন নতুন পরিকল্পনায় ব্যস্ত - ‘শিকড় একাডেমি সমন্বিত শিক্ষা পার্কভিউ
রিসোর্ট’ নামে কুমিল্লার প্রথম সৃজনশীল বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার কাজে নেমেছেন।
তিনি কৃষি তে অনেক অবদান রেখেছেন, তার কৃতিত্বে গ্রামের অনেক মানুষ খুশি
এছাড়া তাকে সহোযোগিতায় আছে এক তরুণ তার নাম মোঃতরিকুল ইসলাম, দীর্ঘ দিন
যাবত তার রিসোর্টের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন বুড়ো কৃষকের অনুপস্থিতিতে ।
এছাড়া ৭২ বয়োসে এই কৃষক বিভিন্ন রকমের প্রযুক্তি র মাধ্যমে নিজ বডি সুঠাম
সুন্দর রাখতে ব্যায়াম করে যাচ্ছে। এতো ব্যস্ততার মাঝেও দেশীয় হাঁস-মুরগি
পালনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছেন বিশটি
পরিবার কে।তাও আবার সুদ মুক্ত, শুধু মাত্র দেশীয় হাঁস-মুরগি পালনে
প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসার কারনে।
