গেল
বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচের দায়িত্ব পান
মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। জাতীয় দলের কোচ হয়ে তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট শুরু হয়
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে। সেই সফরে দলের সঙ্গে ছিল না বিশেষজ্ঞ কোনো
ব্যাটিং কোচ। যে কারণে ব্যাটারদের দেখভালের দায়িত্বও পান স্থানীয়ভাবে
জনপ্রিয় কোচ সালাউদ্দিন। কিন্তু টাইগার ব্যাটারদের লাগাতার ব্যর্থতার কারণে
তিনি প্রশ্নের মুখে পড়েছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন ফরম্যাটের সিরিজ
দিয়েই ব্যাটারদের দায়িত্ব নেন সালাউদ্দিন। এরপর একে একে চ্যাম্পিয়ন্স
ট্রফি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ, আরব আমিরাত এবং পাকিস্তানের
বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তিনি ব্যাটারদের দেখভাল করেছেন। তারই
ধারাবাহিকতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ওই দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশের সিনিয়র কোচ
সালাউদ্দিন। অথচ তার অধীনে ব্যাটিংয়ে অধারাবাহিকতাই ব্যাটারদের
ধারাবাহিকতায় পরিণত হয়েছে!
এমন ছন্নছাড়া ব্যাটিং দেখে প্রশ্ন উঠছে
ব্যাটিং কোচের ভূমিকা নিয়ে। সবশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের কোনো
ম্যাচেই ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি বাংলাদেশি ব্যাটাররা। অফফর্ম চলমান
রয়েছে লিটন দাসের। তানজিদ তামিম, তাওহীদ হৃদয়রাও ব্যাট হাতে ধারাবাহিক হতে
পারছেন না। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত পাঁচটি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ, যেখানে
সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংসটি ২৪৮ রানের। সর্বনিম্ন ১৬৭। ওয়ানডেতে এখন সহজেই
রানতাড়ায় ৩০০ পেরোনোর অনেক নজির দেখা যায়, সেখানে আড়াইশ’র গণ্ডিতে আটকে আছে
বাংলাদেশ।
এই বছর স্রেফ একটি ম্যাচেই পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে
পেরেছে শান্ত-মিরাজদের দল। রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগে
ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান তোলে সেই ম্যাচে। বাকি চার ম্যাচে ইনিংস শেষ
হওয়ার দুই বল আগে থেকে শুরু করে ১৪ ওভার আগেও অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। এমন
অবস্থায় ব্যাটারদের সামর্থ্য ও মনোযোগ নিয়ে তো প্রশ্ন উঠছেই, কোচ তাদের
দুর্বলতা কাটাতে কী ভূমিকা রাখছেন তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
সাধারণত
শিষ্যরা ভালো করলে কোচরাও বাহবা পান। দলীয় সাফল্যের পেছনেও অবশ্যই কোচের
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। খেলোয়াড়দের দক্ষতা বৃদ্ধি, কৌশল প্রণয়ন এবং
পরিস্থিতি অনুসারে কার্যকর দিকনির্দেশনা দিয়েও কোচ খেলার মোমেন্টাম
পাল্টাতে রাখেন বড় প্রভাব। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ দলের বাজে ব্যাটিংয়ের জন্য
চিন্তিত বিসিবি পরিচালক আকরাম খানও। তিনি বলেছেন, ‘ব্যাটিংটা যেভাবে হচ্ছে
এটা আসলে নরমাল ব্যাটিং না। ভালো পরিকল্পনা করে যে ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং
করতে হয়, সেটার দেখা মিলছে না।’
এক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাটারদেরও দায় দেখছেন
সাবেক এই অধিনায়ক, ‘ক্রিকেটারদের এর থেকে উত্তরণের পথ হলো সেন্সিবেল
ব্যাটিং করতে হবে। আপনি দেখবেন সবাই মনে হচ্ছে অনেক প্রেসার নিয়ে খেলতেছে।
রান হচ্ছে না–উইকেট পড়ে যাচ্ছে, এটার জন্য সবাই অনেক চিন্তিত। নরমাল যে
ক্রিকেট সেটা হচ্ছে না, নরমাল ক্রিকেট না খেললে এখান থেকে বের হওয়া কঠিন।
প্রথম সারির তিনজন ব্যাটসম্যান যে ভালো খেলবে সেই জিনিসটা হচ্ছে না,
টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে যাই বলেন।’
ব্যাটাররা ভালো না করায় ব্যাটিং
কোচ সালাউদ্দিনকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রসঙ্গে আকরাম বললেন, ‘ব্যাটিং কোচের
কথা বলছেন এটা বোর্ডের ব্যাপার, ক্রিকেট অপারেশন্সের বিষয়। আর ক্রিকেটাররা
আছে, সালাউদ্দিন দেখছে ব্যাটিংয়ের বিষয়। এখন ব্যাটাররা কীভাবে চাচ্ছে ওদের
কিসে কমফোর্ট হয় সেটাও দেখতে হবে। টিম ম্যানেজমেন্ট আছে তারা বিষয়টি
দেখবে।’
অন্যদিকে, দলের সঙ্গে থাকা প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন
লিপুও ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না যে তা স্বীকার করেছেন। ডাম্বুলা থেকে তিনি
জানালেন, দ্রুত ব্যাটিংয়ে ছন্দ ফেরার কথা। সবশেষ ম্যাচে জাকের আলি অনিককে
না খেলানোর ব্যাপারে বলেছেন, তিনি ইনজুরিতে ছিলেন। সে কারণে একাদশে জায়গা
হয়নি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের।
ব্যাটার ও ব্যাটিং কোচের পারফরম্যান্স
ভালো না হওয়ায় নতুন করে এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কোচ খুঁজতে যাচ্ছে বিসিবি। ঢাকা
পোস্টকে বিসিবির এক পরিচালক নতুন কোচ খোঁজার কথা জানিয়েছেন। তবে কখন
কীভাবে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।