তানভীর দিপু।।
কুমিল্লার
দাউদকান্দি পৌরসভার ৫ নম্বর ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু সংক্রমনের জন্য অতি
ঝুঁকিপূর্ণ বলে ‘রেডজোন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। গত এক মাসে ৬ নম্বর
ওয়ার্ডের দোনারচর গ্রামের ৩ নারীরও মৃত্যু হয়েছে। এমনকি প্রায় প্রতিটি ঘরে
ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৬ নম্বর
ওয়ার্ডকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ‘রেডজোন’ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন
দাউদকান্দি ভারপ্রাপ্ত পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদওয়ান
ইসলাম। তিনি জানান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাম্প্রতিক সময়ে তিন জন ডেঙ্গু
আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরনও করেছেন বলে জানা গেছে।
মৃত্যুবরণকারীরা
দাউদকান্িেদত আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চকিৎিসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান বলে
নিশ্চিত করছেনে দাউদকান্দি উপজলো স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, দাউকান্দিতে এই মৌসুমে যত জন আক্রান্ত হয়েছে তার আনুমানিক ৯০
শতাংশ রোগী পৌর এলাকার ৫ নম্বর এবং ৬ নম্বর এলাকা থেকে আসা। আমরা
স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে মৃত্যুবরণকারীদের পরিচয় পেয়েছি। তারা তিন জনই
নারী। তারা হলেন দোনারচর গ্রামের সালমা বেগম (৫৬), শাহীনূর আক্তার আক্তার
(২৪) এবং সবজিকান্দি গ্রামের জ্যোস্না বেগম(৬০)।
দাউদকান্দি উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাস থেকে এই পর্যন্ত
উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ১০৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি হয়েছে। তারমধ্যে
উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৮ জনকে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও
উপজেলার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রাপ্ত তথ্য মতে মোট ২৫৮ জন ডেঙ্গু
আক্রান্ত চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল মিলে
দাউদকান্দি উপজেলায় এ পর্যন্ত আনুমানিক ৭ শত জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে
বলে ধারণা স্বাস্থ্য বিভাগের।
এদিকে দাউদকান্দি পৌর এলাকার বাসিন্দাদের
সাথে কথা বলে জানা গেছে, পৌরসভার ৫ নং এবং ৬ নং ওয়ার্ডের দোনারচর,
সবজিকান্দি, দাউদকান্দি, সাহাপাড়া, বলদাখাল ও তুজারভাঙ্গা গ্রামগুলোতে
বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত শনাক্ত না হলেও প্রায় ঘরে ঘরেই
অনেককে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। ওয়ার্ড দুটিতে
আক্রান্তের সংখ্যা ৫ শ’ ছাড়িয়েছে বলে ধারণা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.
হাবিবুর রহমানের। মে মাসের শুরু থেকে এই পর্যন্ত এই দুই ওয়ার্ডের উপজেলার
সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৩ শতাধিক রোগী এবং রাজধানীতে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩ নারী।
৫নং ওয়ার্ডের সাহাপাড়া এলাকার
বাসিন্দা সংবাদকর্মী লিটন সরকার বাদল বলেন, মে মাসের শুরুতে যখন সংক্রমন
বেশি হচ্ছে ধারণা করা হয়- তখন কেউ সচেতন হয় নি। এর মধ্যে একবার বৃষ্টি হয়ে
আবার অনেকদিন বন্ধ থাকায়- বদ্ধ ডোবা-নালায় বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার
সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং জুনের শুরুতে ঈদের পর পর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
লিটন
সরকার বলেন, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দোনারচর এবং সাহাপাড়ায়। কেউ পরীক্ষা না
করালেও ঘরে ঘরে মানুষের জ¦র, হাত-পা ব্যাথাসহ নানান উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন।
মূলত শুরুতে সচেতন না হওয়ায় সংক্রমন বেড়ে গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য
কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ৫ নং এবং ৬নং ওয়ার্ডেও ড্রেনেজ সিস্টেম
ভালো না। ডোবা নালায় পানি জমে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে একটি
ক্লাস্টাওে পরিনত হয়েছে। সেখান থেকে অন্যান্য এলাকায়ও এখন ছড়াচ্ছে।
ক্ল্যাসিক্যাল(সাধারন) ডেঙ্গু চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা আমাদের উপজেলায় আছে,
তবে অবলিগ্যাটেড ( জটিল) ডেঙ্গুর জন্য উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা ঢাকায় রেফার করা হচ্ছে। তবে সংক্রমন কমিয়ে
আনতে সতর্কতা এবং সচেতনতার বিকল্প নেই।
দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক ও
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম বলেন, আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে
দুটি ওয়ার্ডকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছি। প্রতিদিন ডেঙ্গু মশার
বিস্তাররোধে মশক নিধন কর্মসূচি গ্রহণ করছি। ফগার মেশিনের মাধ্যমে
উচ্চমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করছি। আশা করছি খুব সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রনে আসবে।