এবারের ঈদুল আযহায় কোরবানিকৃত পশুর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ থাকবে কুমিল্লায়। ঈদের দিন থেকে শুরু করে ১০দিন পর্যন্ত কোন চামড়া যাতে জেলার বাহিরে যেতে না পারে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে মৌসুমী কিংবা ফড়িয়া এবং স্থায়ীভাবে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণকারী ব্যক্তিদের সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রশাসন। তবে ১০দিন যাবত এই কাঁচা চামড়া সংগ্রহের জন্য বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। সেজন্য ইতোমধ্যে তোড়জোড় চলছে। তালিকাও করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে চামড়া ক্রয়ের পর যে সকল প্রতিষ্ঠান চামড়া সংগ্রহ করবেন তারাই মূলত পাবেন বিনামূল্যের এ কাচা লবণ। তবে অগ্রাধিকার পাবেন জেলার মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো। যে সকল প্রতিষ্ঠান চামড়া সংগ্রহ করবেন তবে শুধুমাত্র তারাই পাবেন সরকারি ভাবে বিতরণকৃত বিনামূলের এ লবণ।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের তথ্য বলছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ জেলার ১৫ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে এ লবণ। সরকারিভাবে এ জেলায় লবণ ক্রয়ের জন্য ৩৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। প্রতি মন লবণ ক্রয় করা হবে ১৩ হাজার টাকায়। তবে ব্যাট, ট্যাক্সসহ প্রতি মন লবনের মূল্য দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৯৫০ টাকায়।
কুমিল্লায় বরাদ্দকৃত এই টাকার লবন ক্রয় করা হবে চট্টগ্রামের চারটি লবণ প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান থেকে। সেগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামে শি এস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সেলিম সল্ট ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ, নূর এ মদিনা সল্ট ও মেসার্স হারুন সল্ট ক্রাশিং ফ্যাক্টরী।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, চামড়া সংরক্ষণকারী ব্যক্তিদের তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বিনামূল্যে লবণ বিতরণ করবেন। সরকারিভাবে কুমিল্লা জেলার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ চাহিদা মোতাবেক বন্টন করে দেয়া হবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে। এবং সে অর্থ অনুযায়ী মন প্রতি টাকা ধরে মিল মালিকরা স্ব-স্ব উপজেলায় লবণ সরবরাহ করবেন। তিনি বলেন, চান্দিনা এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় চামড়া সংরক্ষণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সেখানে কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে না। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে এ লবণ বিতরণের কার্যক্রম।
তিনি আরও বলেন, সরকার বিনামূল্যে এ লবণ বিতরণের উদ্যোগ নেয়ার কারণ হচ্ছে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে জেলা থেকে কোরবানি ঈদের দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত রাজধানীতে কোন কাঁচা চামড়া ঢুকতে দিবেন না। তাই আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঈদের দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত যাতে কোনো চামড়া জেলার বাহিরে যেতে না পারে সেজন্য কঠোর ভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। আর যারা এই আইন অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। আইন মানতে গিয়ে যাতে কোন ব্যবসায়ী লোক ছাড়া না পড়েন সেজন্য সরকার বিনামূল্যে লবণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এদিকে, এদিকে বংশ-পরম্পরায় চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িত কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত বছরগুলোতে সংরক্ষণকৃত চামড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেও এখন পর্যন্ত পুরো টাকা হাতে পাননি। বকেয়া পরিশোধে তাল বাহানা করছেন ট্যানারি মালেকরা।
তারা জানান, ঈদুল আযহা আসলেই চামড়া ক্রয় এবং সংরক্ষণের জন্য নানানভাবে ঋণ এবং ধারদেনা করে মাঠে নামেন চামড়া সংগ্রহের। নানা খাটা খাটনি শেষে একটু মুনাফার উদ্দেশ্যে ঢাকার ত্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করেন কিন্তু বছরের পর বছর অতিক্রম করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাননা চামড়া বিক্রির টাকা। সে বিষয়ে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান চামড়া ব্যবসায়ীরা।