কুমিল্লার
লালমাইয়ের স্বপ্নবাজ তরুণ মহসিন হাসান। শূন্য থেকে শুরু করে, প্রতিকূল পথ
ধরে এই তরুণ এবং উদীয়মান ব্যক্তি সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে, কঠোর
পরিশ্রম ও সত্যনিষ্ঠার সাথে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তার লক্ষ্য অর্জন করেছেন।
দেশের তরুণ প্রজন্ম যখন মাসিক উপার্জন নিয়ে অব্যাহতভাবে চাকরির নিরাপত্তা
অর্জনের জন্য কঠোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তখন মহসিন উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী
হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও সহজতর
করে চলেছেন। প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে নিজেকে বদলে ফেলার এক অন্যতম
মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে অনলাইন প্লাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়া। অনেক স্মার্ট
তরুণ-তরুণীরা এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন উদ্যোক্তা, একই সাথে
উপার্জন করছেন অর্থ। এমনই একজন উদ্যমী এবং তরুণ উদ্যোক্তা হলেন মহসিন
হাসান। যিনি পড়াশোনা শেষ করে ইতিমধ্যে তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে
নিজেকে গড়ে তুলছেন।
মহসিন ১৯৯৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর কুমিল্লার লালমাই
উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের উত্তর জয়কামতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷
সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন। তার বাবার নাম আবুল হাশেম এবং মায়ের নাম রহিমা
বেগম।মহসিনের নেশাই ছিল নিজে কিছু করার। ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহ দিন দিন
বাড়তে থাকে। তাই গ্রামের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মাত্র ২০ বছর বয়সে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে শুরু করেন
তার ব্যবসা৷
উদ্যমীদের মতো মহসিনেরও প্রবল ইচ্ছে থাকায় সব সময় তার মাথায়
বিভিন্ন ব্যবসার আইডিয়া ঘুরে বেড়াত। একসময় তিনি নিজেই একটি অনলাইন ব্যবসা
প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেন এবং মাত্র ২১ বছর বয়সে ‘বিষমুক্ত আমঘর ও
অর্গানিক ফুড’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজ তৈরি করেন।
মহসিন হাসান বলেন,
‘বিষমুক্ত আমঘর ও অর্গানিক ফুড’ হচ্ছে একটি অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান। শুরু করেন অনলাইনভিত্তিক আমের ব্যবসা। এর মাধ্যমে আমি
গ্রাহকদের ফর্মালিনমুক্ত আম সরবরাহ করি৷ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে
নিজে কিছু করার চিন্তা থেকে ফেসবুকে ‘বিষমুক্ত আমঘর ও অর্গানিক ফুড’ নামে
একটা পেজ খুলে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী সরাসরি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে
কুরিয়ারে পৌঁছে দেই। প্রথম বছর মাত্র ৩৭৫০ টাকার আম বিক্রি করতে পারলেও
আমি থেমে যাইনি৷ পরের বছর প্রায় দেড় লক্ষ টাকার আম বিক্রি করি। তেমনি ভাবে
২০২১ সালে আড়াই লক্ষ, ২০২২ সালে সাড়ে চার লক্ষ, ২০২৩ সালে আট লক্ষ ও
সর্বশেষ ২০২৪ সালে চৌদ্দ লক্ষ টাকার আম বিক্রি করি৷ এবং এ বছর গত ১০ দিনে
প্রায় আট লক্ষ টাকার আম বিক্রি করেছি। আশা করছি এ বছর ২২-২৫ লক্ষ টাকার আম
বিক্রি করতে পারব৷
আমের পাশাপাশি আমি সিজনাল খেজুর গুড়,খাঁটি মধু,ঘি,খাঁটি সরিষার তৈল, আখের গুড়, চিয়াসিডসহ বিভিন্ন অর্গানিক পন্য বিক্রি করি।
আম
চাষের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় লিজ নিয়েছেন বাগান, এছাড়া
সাতক্ষীরা, রাজশাহী,রংপুর, নওগাঁয় নিয়েছেন চুক্তি ভিত্তিক বাগান যেখান থেকে
তিনি আম সংগ্রহ করে সারা দেশে কুরিয়ার এ মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য পাঠিয়ে
থাকেন। তিনি এই পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ৪৭ জেলায় আম বিক্রি করেছেন।
নতুন
উদ্যােক্তাদের উদ্দেশ্যে মহসিন বলেন, শুরুতে অনেকেই আমার এই চিন্তা নিয়ে
হাসি তামাশা করতেন কিন্তু আমি থেমে থাকিনি বরং যারা তখন হাসি তামাশা করতো
তারাই এখন আমার কাছ থেকে পন্য কিনে এবং এই উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসংশা করেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের আমি পাইকারিতে পন্য দিয়ে সাহায্য করি, আমি চাই আমার
এলাকায় আরো এমন নতুন উদ্যোক্তা তৈরী হউক। আমার স্বপ্ন বিষমুক্ত আমঘর ও
অর্গানিক ফুড এ এক সময় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী হবে। এটাই আমার
প্রত্যাশা।