কুমিল্লায়
গেল ২৪ ঘন্টায় মওসুমের সর্বোচ্চ ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করেছে
আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিরামহীনভাবে
ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণে নগরীর সড়ক অলিগলিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ
জলাবদ্ধতা। হাটু সমান পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা,
ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন গণপরিবহন। পানিতে ডুবে বিকল
হচ্ছে যানবাহন। সড়ক ডুবে পানি প্রবেশ করেছে বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট,
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মসজিদ মাদ্রাসা ও বাসাবাড়িতে। এতে চরম
ভোগান্তিতে বাসিন্দারা। প্লাবিত হওয়া এলাকাগুলোতে রান্নাবান্নার দুর্ভোগে
মানুষ।
এদিকে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে উপজেলা এবং বিভিন্ন জেলা থেকে
কুমিল্লা জেলা শহরে আসা মানুষ এবং পথচারীরা এই জলবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি
বিপাকে পড়েছেন। স্থবির হয়ে পড়েছে সড়কের স্বপ্ল আয়ের মানুষের আয় রোজগারে।
তবে মৌসুমী এ বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলবদ্ধতা নিরশনে দেখা যায়নি সিটি
কর্পোরেশনের কোন কার্যক্রম। এতে সড়কে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়া বাসিন্দারা
ক্ষুব্ধ।
এদিকে, সৃষ্ট জলবদ্ধতায় ডুবে যাওয়া গর্ত, নালা ও ড্রেনে পড়ে
বেশ কিছু নারী ও পুরুষ আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে
পড়েছে ড্রেনে পড়ে আহত এক নারীর ভিডিও চিত্র। এ নিয়ে বাসিন্দারা সিটি
কর্পোরেশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
শুক্রবার
সকাল থেকে নগরীর বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরীর লাকসাম রোডের
শিক্ষাবোর্ড থেকে সড়ক ও জনপথ ভবন, টমছম ব্রিজ থেকে ইপিজেড, কান্দিরপাড় থেকে
রাণীরবাজার সড়ক, পুলিশ লাইন্স থেকে ফৌজদারি মোড় সড়কের মতো এসব
গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছাড়াও নগরীর ঠাকুরপাড়া, অশোকতলা, বাগিচাগাও, কালিয়াজুরী,
মহিলা কলেজ রোড ও শাকতলাসহ নগরীর বেশিরভাগ নিচু এলাকার সড়ক অলিগুলিতে
জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ভোগান্তির সৃষ্টি হয় মানুষের।
কুমিল্লা নগরীর
ঠাকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোকলেছুর রহমান বলেন, বছরের প্রায় প্রতিটি সময়
দেখি নগরীর সড়ক ও পানি নিষ্কাশনের ড্রেনের উন্নয়ন ও সংস্কার এক কাজ করতে
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন। বাজেটের অধিকাংশ অর্থই ব্যয় করা হয় সড়ক নালা ও
ড্রেন নির্মাণে। অথচ বর্ষা মৌসুমী আসলেই সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে
সড়ক ও অলিগলিতে। টেকসই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সে পানি
জলবদ্ধতায় রূপ নেয়। বছরজুড়ে উন্নয়ন করলেও অপরর্কিত ড্রেনের ব্যবস্থার কারণে
নগরবাসী ফলপ্রসু কোন ফল না পেয়ে উল্টো ভোগান্তিতে পড়েন সেটির উদাহরণ আজকের
জলবদ্ধতা।
আব্দুল হাই নামে কুমিল্লা নগরীর এক সিএনজি চালিত অটো
রিক্সাচালক বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে।
টানা বৃষ্টির কারণে শুক্রবার সকালে সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরেন বিপাকে।
টমছম ব্রিজ থেকে যাত্রী নিয়ে নিউ হোস্টেলের সামনে আসলে পানি প্রবেশ করে
গাড়ি বিকুল হয়ে পড়ে। পরে যাত্রীদের গাড়ির ভিতর রেখে অনেকটা টেনেহিঁচড়ে
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড পর্যন্ত আসেন। বৃষ্টি হলেই এই শহরের সড়কে গাড়ি
চালানো অনেকটা কষ্ট হয়ে পড়ে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার
সিটি কর্পোরেশনের।
এদিকে লাকসাম থেকে চাকরি পরীক্ষায় অংশ নিতে
কুমিল্লায় আসেন হুমায়ুন কবির। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা সকাল দশটায়।
কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে চালিত অটোরিক্সায় উঠেই কান্দিরপাড়ের
উদ্দেশ্যে। সড়ক ভবনের সামনে আসতেই পানি প্রবেশ করে বিকুল হয়ে পড়ে অটোরিকশা।
সেখান থেকে হেঁটে রওনা দেন। মাঝখানে বেশ কিছু জায়গায় অটোরিক্সা এবং
রিক্সার খোঁজ করছিলেন, কিন্তু ভয়াবহ সংকট ছিল গণপরিবহনের। পেলেও অতিরিক্ত
ভাড়ার কথা শুনে অনেকটা পথ পানি মাড়িয়ে কান্দিরপাড়ে এসে পৌঁছান। এভাবেই
তিনি তার দুর্ভোগের কথাটি তুলে ধরেন।
হুমায়ুন কবিরের মত এমন শত শত মানুষ শুক্রবার দুর্ভোগ এবং দুর্দশার মধ্য দিয়ে দিনটি পার করেছেন কুমিল্লা নগরীতে।
নগরীর
জলবদ্ধতা নিরসনে কি উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়ে জানতে নগরভবনের
বেশকয়েকজন কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব
হয়নি।
এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় কুমিল্লায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত ও
ঝড়ো হওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ট্রান্সফরমারসহ ভেঙ্গে পড়েছে বৈদ্যুতিক
খুঁটি, গাছপালা ও বসতঘর। নষ্ট হয়েছে শাকসবজিসহ মাঠের বিভিন্ন ফসল।