স্ত্রী
ও দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল সোহাগের ছোট্ট সংসার। এক সময়ে ছোট মেয়েকে নিয়ে
পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায় সোহাগের স্ত্রী। পরিবারে নেমে আসে আসে
অন্ধকার। ভেঙে পড়েন মানসিক ভাবে। এরপর এই শোকে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে
সোহাগ। এক সময় পায়ে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে পঙ্গু হয়ে যান তিনি। প্রায় তিন
বছর পড়ে থাকেন বিছানায়। এরপর গ্রামের লোকজন এসে দাড়ায় সোহাগের পাশে। তাকে
বাঁচাতে ‘সোহাগকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন’ নামে খোলা হয় একটি ফেসবুক গ্রুপ। এই
গ্রুপের মাধ্যমে সংগ্রহ হয় ৫ লক্ষ টাকা। এই টাকা দিয়ে তাকে দুই দফা অপারেশন
করার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়সোহাগ। বড় মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে গ্রামের
লোকজন ৬০ হাজার টাকা কালেকশন করে বাকি ৮০ হাজার টাকা কিস্তিতে নিয়ে কিনেন
একটি অটোরিকশা। সেই অটোরিকশা দুর্ঘটনায় মারা যায় সোহাগ।
মঙ্গলবার (২৭
মে) বিকেল ৪টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবিদ্বার পৌর এলাকার
বারেরা বাস স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সানা উল্লাহ সরকার সোহাগ (৩৫)
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বাঙ্গুরী গ্রামের লিয়াকত আলী সরকারের ছেলে।
প্রত্যাক্ষদর্শী
বারেরা গ্রামের রিক্সা চালক আবুল ফজল বলেন, বিকেলে কুমিল্লাগামী একটি
মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে সোহাগের অটোরিকশাটি মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে
ঘটনাস্থলেই অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং গুরুতর আহত অবস্থায় সোহাগকে
উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে
মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের ভাই ইমাম হোসেন সরকার বলেন, “সোহাগ সকালে নাশতা
করে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিল। বিকেলে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি সে আর
বেঁচে নেই। আমার ভাই দুঃখের জীবন, সেই দুঃখ নিয়ে আজ তাকে চলে যেতে হলো।”
মীরপুর
হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পারভেজ আলী জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ
ঘটনাস্থলে যায় এবং বিষয়টি তদন্ত করছে। ঘাতক ট্রাকটিকে শনাক্ত ও আটকের
চেষ্টা চলছে। নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা
নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।