প্রেম,
দ্রোহ ও সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন সৃষ্টিতে এক অনন্য অধ্যায়
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কবিতীর্থ দৌলতপুর। এখানেই নার্গিসের ভালবাসার
আগুনের পরশমানিকের ছোঁয়ায় বেজেছিল নজরুলের ‘অগ্নিবীণা’। ১৯২১ সালে কবি কাজী
নজরুল ইসলাম বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুর গ্রামে আসেন। এখানকার
সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণ ভাবে আচ্ছন্ন করে। এখানে কবি রচনা করেছেন
বহু কবিতা, গান ও ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। এখানে
রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোন প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবছর নজরুল
জন্মজয়ন্তিতে এখানে ছোটখাট অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এবারও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে
১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ মে (সোমবার) বিকেলে কবিতীর্থ দৌলতপুরের
নজরুল মঞ্চে এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা
প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার প্রধান অতিথি ও পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান
বিশেষ অতিথি থাকবেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন, উপজেলার সহকারী
কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাছান খাঁন।
কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক
ধরে ৮ কি: মি: সামনে এগুলেই কবিতীর্থ দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই হাতের
ডান পাশে চোখে পড়বে ‘নজরুল তোরণ’। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো
রঙের টুকরো টুকরো ব্লকে সাদা কালিতে লেখা কবির পঙ্কিমালা। ওই পথ ধরে আধা
কিলোমিটার ভিতরে গেলেই খাঁন বাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন
ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের
গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বি-তল
বাড়ি। এ বাড়িতেই থাকতেন কবি নজরুল। বাড়িটির পলেস্তরা খসে গেছে। দীর্ঘদিন
ধরে কোন প্রকার সংস্কার হচ্ছে না। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পাড় হলেই কবির
বাসরঘর। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও
ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের
সিন্দুক। অযত্ন ও অবহেলার কারণে সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে তা কেউ
বলতে পারে না। এক সময় ওই ঘরে বাসর খাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা
পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।
নজরুল গবেষক অধ্যাপক শ্যামা প্রসাদ ভট্টাচার্য
বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর
খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বি-তল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবিপত্মী
নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
আমরা কবিতীর্থ দৌলতপুরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে মর্যাদাপূর্ণ স্থান হিসেবে
স্বীকৃতি পেতে চাই।
মুরাদনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান
আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুর গ্রামে
কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ কবিতীর্থ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে
দুই মাস ১১ দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেমও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও
গান লিখেছেন। কবিতীর্থ দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক
কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
কবিপত্নী নার্গিস বংশের উত্তরসূরী বাবলু
আলী খান বলেন, এ বাড়ির পুকুর ঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতল পাটিতে
বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খান বাড়ির ছেলে- মেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র
বাজানো শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো
দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য কবিতীর্থ
দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সাদামাটাভাবে
পালন করে উপজেলা প্রশাসন।