মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম
নাজমুল
হাসান মিয়াজী(১৮)। ছয় বছর বয়সে বাবা ফটিক মিয়াজী মারা যান। পাঁচ ভাই-বোনের
মধ্যে নাজমুল সবার ছোট। সে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের
লুদিয়ারা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মিয়াজী বাড়ির বাসিন্দা। নাজমুল হাসান মিয়াজী
মা, ভাই-বোন ও পাড়া প্রতিবেশির চেষ্টায় বর্তমানে মহিপাল কলেজের দ্বাদশ
শ্রেণীর ছাত্র। বড় ভাইয়ের ইচ্ছে ছিল প্রশাসনে চাকরি করার। মাত্র ১২০ টাকা
দিয়ে আবেদন করে সে কনষ্টেবল পদে বিভিন্ন পরীক্ষায় চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ
হয়েছে। এমন খবর শুনে নাজমুল হাসান মিয়াজীর মা নাছিমা বেগমসহ পরিবার ও বাড়ির
সবাই আপ্লুত।
অপরদিকে একই ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক মুকবুল
আহমেদের ছেলে সাজ্জাতুল ইসলাম রাপি(১৯)। পাশ^বর্তী বসন্তপুর গ্রামে নানার
বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেছে সে। মামাদের উৎসাহে সে পুলিশ, সেনা ও নৌবাহিনীর
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কখন দেয়-সে বিষয়ে নিয়মিত খবর রাখতো। এরই অংশ হিসেবে
কয়েকমাস আগে পুলিশের কনষ্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ১২০ টাকা দিয়ে
আবেদন করে। সম্প্রতি পরীক্ষা দিয়ে কনষ্টেবল পদে চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়।
খুশিতে আত্মহারা রাপির বাবা মুকবুল আহমেদ ও মাতা রাবেয়া আক্তার রুনাসহ
আত্মীয় স্বজনরা।
শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, নাজমুল হাসান
মিয়াজী ও সাজ্জাতুল ইসলাম রাপির পরিবার টিনসেড ঘরে বসবাস করছে। কোনরকম চলছে
তাদের সংসার জীবন। সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়ে পুলিশের কনষ্টেবল পদে নিয়োগ
পাওয়ায় খুশি তাদের আশ-পাশের মানুষও।
নাজমুল হাসান মিয়াজী ও সাজ্জাতুল
ইসলাম রাপির মতো কুমিল্লা জেলার মোট ৭৫ জন কনষ্টেবল পদে চুড়ান্তভাবে
উত্তীর্ণ হয়। তারা প্রত্যেকেই ঘুষ ছাড়া শুধুমাত্র ১২০ টাকা দিয়ে আবেদন করেই
কনষ্টেবল পদে যাবতীয় পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ চুড়ান্ত হয়। বর্তমান সরকারের সময়ে
শতভাগ স্বচ্ছ এ নিয়োগে উত্তীর্ণরা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করেছে।
কৃষক মুকবুল আহমেদ বলেন, আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করছি।
সামান্য কৃষি কাজ করে পরিবারের ভরণ পোষণ নির্বাহ করি। সাজ্জাতুল ইসলাম রাপি
নানার বাড়িতে থেকেই বেশিরভাগ পড়ালেখা করেছে। আগে জানতাম-ঘুষ ছাড়া সরকারি
কোন চাকরি হয় না। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে দেখেছি-ভিন্যতা। আমার ছেলে
১২০টাকায় আবেদন করে বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কোন প্রকার ঘুষ ছাড়াই
পুলিশের কনষ্টেবল পদে উত্তীর্ণ হয়েছে। জেলা পুলিশ তাকেসহ উত্তীর্ণ সকলকে
সংবর্ধনা দিয়েছে।
সাজ্জাতুল ইসলাম রাপি বলেন, কুমিল্লার পুলিশ সুপার
মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শতভাগ
মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার একটি নিয়োগ দেখলাম। এ নিয়োগে আমি কনষ্টেবল পদে
উত্তীর্ণ হতে পেরে সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ঘুষ ছাড়াও যে পুলিশে
নিয়োগ হয়-এ নিয়োগ তাঁরই প্রমাণ।
নাজমুল হাসান মিয়াজী বলেন, আগ্রহ ছিল
প্রশাসনে চাকরি করে মানুষের সেবা করবো। আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করেছে।
শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগে কোন প্রকার ঘুষ ছাড়াই আমিসহ জেলার ৭৫ জন কনষ্টেবল পদে
চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।
অপরদিকে শতভাগ স্বচ্ছ, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে কনষ্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে জেলা পুলিশ।
কুমিল্লা
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ‘সেবার ব্রতে চাকরি’-এই শ্লোগানে কুমিল্লা
জেলায় নিয়োগ যোগ্য শূণ্য পদের বিপরীতে শতভাগ মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার
মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল(টিআরসি) পদে নিয়োগ
পরীক্ষা-২০২৫ এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলার নিয়োগ
বোর্ডের সভাপতি, পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন পুলিশ লাইন্স
ড্রিল শেডে আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরসি নিয়োগ কার্যক্রমের পিইটি এর সকল ইভেন্টে
কৃতকার্য প্রার্থীদের লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত
নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুযায়ী গত ১৫ মে বৃহস্পতিবার চূড়ান্তভাবে
উত্তীর্ণ ৭৫ প্রার্থীর নাম ও ফলাফল ঘোষণা করেন এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এসময় শতভাগ মেধা, যোগ্যতা, স্বচ্ছতা
এবং শতভাগ দূর্নীতিমুক্ত, পরীক্ষার্থীদের ফি বাবদ মাত্র ১২০ টাকার মাধ্যমে
নিয়োগ পাওয়ায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আবেগপ্রবণ হয়ে তাৎক্ষণিক
অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্যে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ
প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দেশসেবার
মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার আহবান জানান। এ সময় ট্রেইনি
রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত
ছিলেন। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন
করে প্রশিক্ষণে প্রেরন করা হবে।
এ ব্যাপারে শনিবার বিকেলে চৌদ্দগ্রাম
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইজিপি
স্যারের নির্দেশে কুমিল্লা সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁনের ঐকান্তিক
প্রচেষ্টায় শতভাগ স্বচ্ছ, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে কনষ্টেবল পদে
চৌদ্দগ্রামের তিনজনসহ জেলার ৭৫ জন চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। এতে পুলিশের
মর্যাদা আরও বাড়বে। এছাড়া ঘুষ ছাড়া নিয়োগ পাওয়া সবাই দেশের মানুষের
কল্যাণে আন্তরিকভাবে কাজ করবে’।