সোমবার ২৩ জুন ২০২৫
৯ আষাঢ় ১৪৩২
২০২৫ সালের সাংস্কৃতিক অঙ্গন হোক উৎসবমুখর
ড. আরিফ হায়দার
প্রকাশ: রোববার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:০৯ এএম আপডেট: ০৫.০১.২০২৫ ১:৫৩ এএম |

 ২০২৫ সালের সাংস্কৃতিক অঙ্গন হোক উৎসবমুখর
২০২৫ সাল। নতুন বছর আসছে আগমনী বার্তা নিয়ে। কীসের বার্তা? কার বার্তা? কোন পথে আসছে? এমন প্রশ্ন হাজারো করা যায়। কিন্তু এই প্রশ্নগুলো কে, কাকে করছে সেটাই বড় বিষয়। তবে কাউকে না কাউকে তো প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হবে। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন। তাইতো মুখোমুখি হতে পিছ পা হয়নি কখনো। বাংলার মানুষ অনেক আগে থেকেই ভবিষ্যৎ দেখতে পায়, আর তাই বীজ বপন করতে থেমে থাকে না।
২০২৫ সাল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চা কেমন হবে তারই একটা ভাবনা মাত্র। আমাদের দেশ সবুজে ঘেরা। মাঠ-ঘাট, বাউল, রাখালের বাঁশির সুর এসবই যেন বাংলার সংস্কৃতি। সাদা মনের মানুষেরা নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়াতে নাকি সাংস্কৃতিক চর্চা করে। এমন কথা বাবা-মার কাছ থেকে শুনতে হয়েছে। তবু থেমে থাকেনি বাংলার সংস্কৃতি-সাংস্কৃতিক চর্চা।
অনেকগুলো ভাগে সাংস্কৃতিক চর্চা হয়ে আসছে সেই কবে থেকে, যুগের পর যুগ ধরে। কখনো কখনো সময়ের প্রয়োজনে বদলেছে সাংস্কৃতিক চর্চার শরীর। কিন্তু জারি-সারি ভাটিয়ালির সুর কেউ পাল্টাতে পারিনি। তার নিজস্ব সুর চলেছে আগামীর দিকে।
২০২৫ সালের সাংস্কৃতিক সুর থাকবে ছন্দে ছন্দে। যে ছন্দের মধ্যে কখনো বিরাজমান-যাত্রা, নাটক, নাচ, গান, আবৃত্তি, কবিতা, বাউলের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসবে বাংলার মাটির সোঁদা গন্ধের কথা। ২০২৫ শুরু হোক সত্য ভাষণ দিয়ে। সত্য হোক সাংস্কৃতিক চর্চার।
যদি আলাদা করে সাংস্কৃতিক চর্চার কথা বলা হয় তবে বলব যাত্রার কথা-যাত্রাশিল্পকে সুন্দর করে ঢেলে সাজাতে হবে। ইতিমধ্যে যাত্রা নিয়ে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। নীতিমালাকে কেন্দ্র করে শুরু করলে কতটুকু আসার পথ দেখা যাবে তা ভাববার বিষয়।
তবে যাত্রার মানুষদের নিয়ে একটা আলোচনা করা যেতেই পারে। আর এই আলোচনার মধ্যমণি হতে হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে। বছরের শুরুতেই একটা পরিকল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার যাত্রাশিল্পীদের নিয়ে যাত্রাপালা করা হবে এবং কী কী যাত্রাপালা হবে, যাত্রার দল স্থানীয় হবে নাকি অন্য কোনো জায়গা থেকে আসবে সবই পরিকল্পনায় থাকবে। যাত্রার পরিবেশ হতে হবে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল, যাত্রা করার জন্য বড় অর্থের বাজেট নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
এখানে একটা কথা বলে রাখতে হয় যে-যাত্রাশিল্পীরা শীত মৌসুমেই যাত্রার অভিনয় করে সারা বছরের খাদ্য, সংসার খরচ সংগ্রহ করে থাকে। ফলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই যাত্রা শিল্পকে নিয়ে সুন্দর একটা পরিকল্পনা করতে এগিয়ে আসতে হবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে।
এবার বলি মঞ্চনাটক, পথনাটক, শ্রুতি নাটক, টেলিভিশন নাটক, রেডিও নাটক, এনজিও নাটক ইত্যাদির কথা। প্রতিটি বিষয়ে তাদের নিজস্ব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান আছে। সেইসব প্রতিষ্ঠান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাইরে নয় এমনকি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির দায়বদ্ধতাও অনেক।
সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, পথনাটক পরিষদ, আবৃত্তির সমন্বয় পরিষদ, সাংস্কৃতিক জোট,  আরও আরও....। আমি বা আমরা ২০২৫ সালের নাট্যচর্চা নিয়ে একটা সুন্দর পরিকল্পনা আশা করি। সময়ের দাবিতে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্তি নাট্যদলগুলোর প্রযোজনার নামগুলো, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকে সরবরাহ করবে, এমনকি প্রতিটি বিভাগে, জেলায় কবে, কখন, কোন নাটক হবে সেটাও একটা খসড়া দেওয়া যেতে পারে। 
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থের বাজেট দেওয়া হয় তাও সঠিকভাবে বণ্টন করতে হবে এবং তার একটি হিসাব খাত ফেডারেশনকে দিতে হবে-যা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হিসাবের খাতায় সংরক্ষণ করা থাকবে এবং প্রতিটি নাটক ক্যামেরায় ধারণ করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আর সেইসব নাটক নিয়ে একটা আর্কাইভ তৈরি করা যায়, যাতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারে বাংলাদেশের নাটক সময়ের প্রয়োজনে কী কী করেছে।
একইভাবে পথনাটক, আবৃত্তি চর্চার ক্ষেত্রেও করা যেতে পারে। কিন্তু প্রয়োজন নাট্যকার, কবি, নির্দেশক, অভিনেতা। ২০২৫ সালের শুরুতে নাট্যকার তৈরির জন্য বাংলা একাডেমি শুরু করতেই পারে নাটক রচনা কর্মশালা। সেখান থেকে পেতে পারি অনেক নতুন নাটক, নাট্যকার।
একইভাবে কবিতা লেখার কর্মশালা, গল্প লেখার কর্মশালা, এককথায় সাহিত্যের সব শাখা প্রশাখার কর্মশালা হতেই পারে। এমন পদক্ষেপ বাংলা একাডেমিকে গ্রহণ করতে হবে, তবেই আগামীতে তৈরি হবে নতুন মাত্রা।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আছে নাটক বিভাগ, সংগীত বিভাগ, চারুকলা বিভাগ। এসব বিভাগের দায়-দায়িত্ব কম নয়। শুধু সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে ইতিহাস গড়বো তা নয়, নিজেকেও তো বেঁচে থাকতে হবে সেই অর্থে প্রতিটি ক্ষেত্রে রেপার্টরি তৈরি করতে হবে এবং ২০২৫ এ তাই আশা করি একই সাথে রেডিও, টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে, সঠিক মানুষ খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের দিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে।
অন্যদিকে পথনাটক কোনোদিনই বাধাকে স্বীকার করেনি। সংকটের সময় রাস্তায় নেমেছে পথনাট্য দলগুলো। পথনাট্য দলের জন্য যারা নাটক লেখেন, আর যে দল নাটক প্রযোজনা করে তারা যেন সত্য ভাষণ হয়ে, সত্য কথা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করবে, এই আশা আগামীতে থাকবে। তবেই শক্তি ফিরে আসবে পথনাটকের।
বাংলাদেশ ঋতুভিত্তিক দেশ। সব ঋতুতেই মুখর হয়ে থাকবে সাংস্কৃতিক চর্চা। প্রতিটি ঋতু যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য নিয়ে শুরু হবে ২০২৫ সালের সাংস্কৃতিক চর্চা। এমন আশা আমরা করতেই পারি। কারণ আমরা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত-আমাদের সামনে হাজারো স্বপ্ন রেখে গেছেন এখন শুধু এগিয়ে যাওয়া আগামীর পথে।
এই পথ চলার মধ্যে আমরা যেন ভুলে না যায় পাহাড়ি সাংস্কৃতিক চর্চার কথা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক চর্চার কথা, সমতলের সাংস্কৃতিক চর্চার সাথে পাহাড়ি সাংস্কৃতিক চর্চার একটা মেলবন্ধন অতীব জরুরি।
এই বাংলার মানচিত্রে হাজারো সংস্কৃতির উপাদান আছে যা আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে তুলে আনবে আগামীতে নতুন বছরে। তাতে সমৃদ্ধ হবে জাতি। আমাদের মধ্যে মেলবন্ধনটা খুব প্রয়োজন। চিত্রশিল্পীদের আঁকা চিত্র প্রদর্শনী হোক রাস্তায়, মাঠে, পথে, গ্রামগঞ্জে।
অন্যদিকে শিশুদের মন গড়ার জন্য বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পদক্ষেপ হোক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে স্তরে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খোলা চোখে দেখুক তার বাংলাদেশকে। তার চোখে দেখুক সত্য ভাষণে বাংলাদেশ।
২০২৫ সালের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিষ্কার থাকবে তার পথযাত্রা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমিসহ সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সময়ের সাথে এক নতুন পথযাত্রায় মত্ত থাকবে আগামী ২০২৫ সালে।
নাটক হবে জনগণের, প্রতিবাদের, প্রতিরোধের ভাষা। কবিতা হবে সত্য উচ্চারণ, চিত্রশিল্পীদের ছবি হবে সময়ের শক্তি, এসব নিয়ে সুন্দর হয়ে ২০২৫ কে স্বাগত জানাই বাংলার ছয় ঋতুর দেশে-বাংলাদেশে।
লেখক: অধ্যাপক, নাট্যকলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়













সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় করোনা ও ডেঙ্গুতে দুইমৃত্যু
কুমিল্লায় সরকারি তথ্যের সাথে ডেঙ্গু সংক্রমণের বাস্তবতার মিল নেই
সাবেক সিইসি নূরুল হুদা পুলিশ হেফাজতে
কুমিল্লা জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে
চান্দিনায় পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে এনজিও কর্মকর্তার বাড়িতে ডাকাতি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় করোনা ও ডেঙ্গুতে দুই জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় এয়ারসফট পিস্তল ওয়াকিটকি ও ধারালো অস্ত্রসহ যৌথবাহিনীর অভিযানে দুই যুবক আটক
৫৮ লাখ টাকার অপচয়ে আকাশমুখী লিফট
প্রধানমন্ত্রী পদে কেউ ১০ বছরের বেশি থাকতে পারবেন না: ডা. তাহের
সাবেক সিইসি নূরুল হুদা পুলিশ হেফাজতে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২