প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪, ৪:৩২ এএম আপডেট: ২৩.০৮.২০২৪ ৪:৪৭ এএম |
‘কুমিল্লার দু:খ গোমতী’Ñ বৃহস্পতিবার রাতে এই কথা আবারো প্রমাণ করে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঁধে ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার দিকে বাঁধ ভেঙ্গে পানি জনপদে প্রবেশ করতে শুরু করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান ও স্থানীয় চেয়ারম্যান হাজী মো: বিল্লাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।প্রথমে একটি ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ শুরু হয় এবং তা ক্রমেই বড় আকার ধারন করে এবং গভীর রাতে অন্তত ৫০ ফুট বাঁধ ধ্বসে যায়। নদীর পাড় ভাঙ্গনের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনগণ প্রাণপন ছুটতে থাকেন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। কেউ দোতলা কোন বিল্ডিংয়ে কেউ স্কুল ভবনে আশ্রয় নেয়। এ ভাঙ্গনের ফলে অন্তত দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলে পানি বেড়েছে কুমিল্লার নদী ও খালগুলোতে। রুদ্রমূর্তি ধারন করেছে গোমতী নদী। বাঁধ ভাঙ্গার ভয় নিয়ে দিন রাত পাড় করছে নদীর তীরবর্তী মানুষ। সর্বশেষ বৃহষ্পতিবার রাতে বুড়বুড়িয়ায় বাঁধে ধ্বস নামার আগ পর্যন্ত বিপদসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। মঙ্গলবার রাতেই বেড়িবাঁধের ভেতর সবগুলো গ্রাম ডুবে যায়। অতিরিক্ত স্রোতের ধাক্কায় আদর্শ সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়। সেঁচের পাইপ যাবার পথগুলো চুঁইয়ে নদী থেকে প্লাবিত হচ্ছে নদী অববাহিকার এলাকাগুলো। বৃহষ্পতিবার দুপুর থেকে বাঁধের বিভিন্ন এলাকায় গর্ত দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হতে থাকে জনবসতি। বাঁধ মেরামত কাজে সমন্বিত ভাবে কাজ করে এলাকাবাসী ও স্বেচ্ছাসেবীরা।
এদিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারতীয় পানির ঢলে প্লাবিত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ব্যাহত হয়েছে যান চলাচলও। একই পানির প্রবাহে ফেণীর লালপুর এলাকা প্লাবিত হয়ে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামের সাথে -এরপর ৫ এর পাতায়
ঢাকামুখী সকল সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম। এছাড়া নাঙ্গলকোট উপজেলারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোমতি নদীর ডান পাশে ৬৫ এবং বাম পাশে ৭৬.৩ কি: মি: প্রতিরক্ষা বাঁধ আছে। উভয় তীরের বাসিন্দারা বাঁধ ভাঙ্গার আশংকায় চরম আতঙ্কে আছেন। বাঁধের ভেতরের ফসলি জমিসহ পুরো জেলায় ৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। কুমিল্লা জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত এলাকার সকল সরকারি স্কুল কলেজগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে জেলাপ্রশাসন। জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান জানান, দুর্গত এলাকাগুলো থেকে দ্রুত মানুষজনকে নিরাপদে সরে আসার আহ্বান করা হয়েছে। যেসব জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেখানে স্থানীয় মানুষের সাথে মেরামতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বুধবার রাত থেকেই গোমতী বাঁধের বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভাঙ্গার খবরে দিশেহারা পরিস্থিতি তৈরী হয়। বিভিন্ন এলাকা বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে এমন খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আতংক ছড়ায় কুমিল্লাবাসীর মাঝে। বৃহষ্পতিবার ভোরে কুমিল্লা গোমতী নদীর তীরবর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাঁধের উপর সড়কে অবস্থান নিয়ে আছে প্লাবিত হওয়া বাড়িঘরের লোকজন। গোমতী নদীর বাঁধের ভেতরের সব গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানির উচ্চতা ছাড়িয়ে গেছে বাসা বাড়ির ছাদ ও চালা। কোথাও কোথাও পানির তোরে ভেসে গেছে কাঁচা বাড়ি ঘর। স্রোতের তোড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই গোমতী পাড়ের মানুষের। আকষ্মিক বন্যায় পানি উঠে যাওয়ায় ঘর বাড়ি থেকে কিছুই সরিয়ে নিতে পারেননি অনেকে। জামাকাপড় - টাকা পয়সাও হারিয়েছেন বন্যার জলে।
গোমতী বাঁধের ভেতরে চাঁদপুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ বয়সের রহিমা বেগম জানান, ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। নতুন ঘর বানানোর মতো আর ক্ষমতা নেই আমার। কোনরকমে আমার মা আর ছেলের বউকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসেছি। একই এলাকার আব্দুল কালাম জানান, গত ২০ বছরে এত পানি দেখা যায় নি গোমতীতে। এবার যে এত পানি হবে কেউই বুঝতে পারেনি। যে কারণে বেশিরভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।