শনিবার ১৭ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ
প্রজ্ঞাপন জারি ॥ ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ ঘোষণা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৫১ এএম |

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত’ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকা-’ চালানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী জামায়াত এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াতকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে তারা রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়।
দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল তখন থেকেই। চার দশক পর সেই দাবি পূরণ হল, যদিও যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতের বিচারের দাবি এখনও অপ্র্ণূ রয়ে গেছে।
সরকারের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই- ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
পাশাপাশি হাই কোর্ট এক রিট মামলার রায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও তা বহাল রেখেছে। যেহেতু, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রহিয়াছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল; এবং যেহেতু, সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সহিত জড়িত রহিয়াছে; সেহেতু, সরকার, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করিল।”
সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
যেভাবে এল নিষেধজ্ঞা:
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আলোচনায় থাকলেও বিষয়টি গতি পায় সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার পর।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জুনের শেষে হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা ফের মাঠে নামে। জুলাইয়ে তা সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে একপর্যায়ে তা সহিংসতায় গড়ায়।
এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা শুরু হয়। রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাংচুর করে আগুন দেওয়া হয় এক্সপ্রেসওয়ের মহাখালীর টোল প্লাজা এবং মেট্রোরেলের দুইটি স্টেশনে। এই আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের মধ্যে এক সপ্তাহে ১৫০ মানুষের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছে সরকার, যদিও সংবাদমাধ্যমের খবরে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে নাশকতা করেছে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী, আর তাতে মদদ দিয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপি।
এই প্রেক্ষাপটে গত সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। এরপর মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে এবং কোন আইনি প্রক্রিয়ায় তা করা হবে, তা চূড়ান্ত করা হবে বুধবারের মধ্যে।
বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত- শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, “এই সবকিছু (আন্দোলনে সহিংসতা) তো ছাত্ররা করেনি। ছাত্রদের পেছনে রেখে পেছন থেকে যারা করেছে সেগুলো জামায়াত-শিবির-বিএনপি। অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। এটাই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। সেজন্য অনেক দিনের যে চাহিদা ছিল যে, জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করার, আজকে সেই প্রক্রিয়াটি চলছে।”
জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বুধবারই জারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া সারতে একদিন সময় লেগে যায়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে নথি পাঠিয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং করে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ‘কিছুক্ষণের মধ্যে’ প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এরপর বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরপাত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
যে আইনে নিষিদ্ধ: 
জামায়াত এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারার ক্ষমতাবলে।
সেখানে বলা হয়েছে, “এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।”
আইনে সন্ত্রাসী কাজের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশের অখ-তা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোন সত্তা বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করার চেষ্টা করে, এ ধরনের কাজের জন্য অন্য কারো সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোনো সম্পত্তির ক্ষতি করে বা করার চেষ্টা করে; অথবা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বা নিজ দখলে রাখে, কোনো সশস্ত্র সংঘাতময় দ্বন্দ্বের বৈরি পরিস্থিতিতে অংশ নেয়, তাহলে তা ‘সন্ত্রাসী কাজ’ বলে গণ্য হবে।
এ আইনে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে।















সর্বশেষ সংবাদ
বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়
‘আসিফ নজরুল স্যার দায় এড়াতে পারেন না’
সড়কে পড়েছিল ‘৪৫ লাখ’ টাকা
‘নির্বাচনের পূর্বেই কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে’
মুরাদনগরে গোমতী নদীর তীরথেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন
কুমিল্লায় মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
কুমিল্লায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিদের বিক্ষোভ, সাংবাদিককে ছরিকাঘাত
এ সরকারের হাতে দেশের ভূখণ্ডনিরাপদ নয়
কুমিল্লায় ঘুষ ছাড়াই নিয়োগ পেলেন ৭৫ কনস্টেবল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২