কবিতা আমার হারিয়ে যাওয়া সুখ
সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল ।।
কবিতা কি ?
কবিতা মানে মনের গভীরের গহীণে প্রবেশ,
সুপ্ত ভাবনাগুলো বিকশিত করা।
কবিতা মানে অভিব্যক্ত কথাগুলো ব্যক্ত করা,
ভাবনার জগতের শব্দগুলো গুছিয়ে সাজানো।
কবিতা কি ?
কবিতা মানে কল্পনার রাজ্যে খন্ড খন্ড শব্দগুলোর
সারি সারি বিন্যাস ঘটিয়ে বাক্য তৈরি করা।
কবিতা মানে মনের ব্যকূলতা প্রকাশ,
অজানাকে খুঁজতে ভাবনার জগতে ডুবে যাওয়া।
কবিতা কি ?
কবিতা মানে ইচ্ছে ঘুড়ির মতো দূর-বহুদূর উড়ে,
আপনার চেয়ে আপন যে জন তাকে অন্বেষন করা।
কবিতা মানে মনের মানুষকে না বলা কথাগুলো বলা,
ভাব তরঙ্গের ঢেউয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলা।
কবিতা কি ?
কবিতা মানে সবুজের সমারোহে প্রকৃতির সৌন্দর্য
অবলোকন করে, তার মাঝে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ।
কবিতা মানে জ্যোৎস্না রাতের অপরূপ লীলা,
ঘাঁসের মাঝে প্রিয়সীর কোলে মাথা রেখে স্বপ্ন বুনা।
কবিতা কি ?
কবিতা মানে রোদ্দুর দুপুরে ক্লান্ত শরীরে বটের ছায়ায় খানিক বিশ্রাম, গোধূলীর আকাশে ডানা মেলে উড়া।
কবিতা মানে পূর্ণিমা রাতে প্রিয়জনের হাত ধরে চলা, জোনাকির আলোয় প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হওয়া।
আসলে কবিতা কে ?
কবিতা আমার আস্থা, বিশ্বাস, হৃদয়ের স্পন্দন,
বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন, আমার প্রেয়সী।
কবিতা আমার ভালোবাসার ব্যকূলতা,
সেই হারিয়ে যাওয়া সুখ, উড়ে যাওয়া এক অচিন পাখি।
কালো মেয়েটা
জুবাইদা নূর খান ।।
মেয়েটি বড়ই লক্ষী মন্ত, রংটা একটু কালো
কালো মেয়ের নামটা আবার,আলেয়া বেগম 'আলো।'
আলো নামে ডাকে না কেউ, ডাকে তারে কালি
কালো মেয়ের বুকটা ফেটে, হয় যে ফালি ফালি।
বলেন পাড়ার বৌ-ঝিরা, মুখরা নর-নারী
বিয়ে দিতে কালো মেয়ের, লাগবে টাকার কাড়ি।
চোখ দু'টো তার বড় বড়,কী যে মায়া কাড়া!
পায়নি কিছু এই জীবনে,কেবল দুঃখ ছাড়া।
কোমর সমান লম্বা চুল তার,ঝর্ণা ধারার মতো
তেল জুটে না কালির চুলে; অভাব কত শত।
টিকালো নাকে দোল খেয়ে যায়,ছোট্ট সোনার নথ
ঘাসের উপর ফড়িং নাচে,শুকনো মেঠো পথ।
বাবার দেয়া কাঁচের চুড়ি, সরু হাতে বাজে
ঘুটঘুটে রাত, টিমটিমিয়ে কুপি জ্বলে লাজে।
ঢাকাই শাড়ি দু'খান মোটে, হাজার ছেড়া তালি
কালির মলিন মুখ দেখে চাঁদ,দেয় যে আলো ঢালি।
বয়েস ষোল, পাড়ার লোকে কানাকানি করে
সেসব কথা শুনে কালি, লাজে-ভয়ে মরে।
গরীব বাবার মেয়ে কালি, নয়তো জীবন সোজা
বাবার চোখের মনি কালি, এখন শুধুই বোঝা।
যায় না কালি পুকুর ঘাটে, কলসি কাঁখে নিয়ে
দেখলে তারে শুধায় সবে," কবে হবে তোর বিয়ে?"
স্বপ্ন দেখে কালো মেয়ে শ্বশুর বাড়ি যাবে
সবার মত সুখের খনির, সেও দেখা পাবে।
মুখটি বুজে কালো মেয়ে, অপেক্ষাতে থাকে
যে বানালো কালো, তাকেই মনে মনে ডাকে।
দুখী বাবার কালো মেয়ে, মরতে ভীষণ ভয়
চুপচাপ তাই মুখটি বুজে, গঞ্জনা সব সয়।
কুড়ে ঘরের সামনে জোনাক, ভাঙা বেড়ার ফাঁকে
কালো মেয়ের জীবন কালো,কালোয় ঢাকা থাকে।
নৈঃশব্দের সংকেত
মশিউর রহমান রিপন ।।
মহাকালে
তুমি, আমি, শব্দ, জন্ম, নাম
কেউ না।
যেমন নেই কোনো উচ্চারণ সূর্যডোবার আগে,
যেমন গর্ভাশয়ে শিশু শুধু সম্ভাবনা,
তেমনি আমরা
ব্যাখ্যাতীত
অথচ অনুপস্থিতিরও আগে।
এই যে ছায়া,
এই যে স্পন্দনের অভাবে কেঁপে ওঠা তন্ত্র,
এই যে অনস্তিত্বের গায়ে
সময়ের জমে থাকা নুড়িপাথর
সবই অজর, অথচ বিলীন।
আমরা একে অপরের দিকে তাকাইনি কখনো।
তাকিয়েছিল
স্মৃতির অবচেতন সীমানায় ছুঁয়ে থাকা
কিছু পর্দাহীন রূপরেখা।
সেখানে স্পর্শ নেই, শব্দ নেই,
আছে শুধু
‘থাকার আগে’ এক গভীর প্রস্তুতি।
ভাষা আমাদের ছুঁতে পারেনি।
ভাষা থেমে গেছে
তুমি আর আমি-র মাঝখানে যে অন্ধকার রেখা,
সেখানে।
শব্দেরও বয়স ফুরোয়
তবু শূন্যতা চিরকালীন।
তুমি যদি বলো
“আমরা কিছু ছিলাম,”
আমি বলব
আমরা শুধু সম্ভাবনার ছায়া ছিলাম,
যা কোনো দিন নিজের মুখ দেখেনি।
তুমি যদি চুপ থাকো
আমি বলব,
এই চুপটাই সবচেয়ে সত্য,
যা সময় ও মহাশূন্যের ভাষায় লেখা
প্রথম কবিতা।
ছুঁয়ে দেই শুন্যতা
জোহরা জ্যোতি ।।
নির্জলা মরুভুমির
তপ্ত শিখায়
বহমান নিস্প্রাণ নদী ।।
কোথায় খুজেঁ পাব
জলজ পদ্ম
কোথায় শিশির।।
দগ্ধ বালিয়ারীর গৃহে
বশত গড়ে চোরা মরিচীকা
বিভ্রম ঘটে পিপাসিত চোখ
এক ফোঁটা জলের আশা য়
বিভীষিকায় ।।
উরন্ত চাতকীর কাতর দৃষ্টি
এক ফোঁটা জল,
ঝর্ণা ধারা বহে ঝর ঝর
অবাধ্য প্লাবনে ভাসে
মাঠ ঘাট প্রান্তর
চাতকী নীড়ে ফেরে
তৃষিত কাতরে।।
খোলা জানালায় ছুঁয়ে দেয়
অশান্ত হাওয়ার ঝাপটা
নীড়ে ফেরে পরিজাত পাখীরা ,,,,,
তৃষিত আমি, তোমার তৃষ্ণা
ছুঁয়ে দেই শুন্যতায় ।।
বৃষ্টি ও স্বর্ণলতা
মনসুর হেলাল ।।
যদি তাকে বৃষ্টি বলো
যদি বলো নিরন্তর জলধারা
ঘামের শিশির তবে ছুঁয়ে যাক
আষাঢ়স্য কদমের তরুতন্ব^ী
ঘৃত স্বর্ণলতা।
যদি তাকে বৃষ্টি বলো
যদি বলো সমার্থের পাঠ, তবে
প্রাণান্তে ধারণ কর মেঘের তর্জমা।
অনিবার্য সূত্রিতায়
মধ্যরাত কেঁপে ওঠে এক উদ্ভিন্ন উল্লাসে।
কৌমার্যের ধ্রুপদী বর্ষণে
বারবার সিক্ত হও তুমি
তবু বলো বৃষ্টি, বৃষ্টি
কেবলই বৃষ্টির অপেক্ষা তোমার!
প্রান্তজন
কতটুকু পেলে তুমি
কতটুকু পেলে
ধেতাং ধেতাং বলে কাঁপাবে পৃথিবী?
অপেক্ষায় ছিলে বহু দিন
বহু দিন নিরিক্ষিত হলো
বাহুল্যের ক্লেদ-ক্লিষ্ট তোমার ভূগোল।
জলের জমিনে লেখা রিক্ত দিনলিপি
বিবর্জিত হলো সব সামাজিক ক্ষতে
তবু তুমি মনোযোগী
অন্য চাষাবাদে!
দ্রোহ
দ্রোহের অগ্নিতে দাউ দাউ
প্রজ্বলিত তুমি
নীরন্ধ্র অন্ধকারের বিপরীতে
একটি তামাটে শিখা।
জ্বলে জ্বলে হয়ে গেছো একা
একাকী মানুষ।
কিছু উচ্চারণ সবসময় কষ্টের
সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া
কবিতার মতো
ভাবনাগুলো উঁকি দেয়,
হঠাৎ হঠাৎ নস্টালজিক হয়ে পড়ি!
রক্তে-মজ্জায়,
শব্দে-ছন্দে, রঙে-রূপে
আলো আর অন্ধকারের নীরব কান্না...
হারিয়ে যাওয়া পৃষ্ঠার গন্ধের মতো প্রেম!
অন্তহীন এক যন্ত্রণা!
নিংসঙ্গতার তীব্র দহন...
সত্যিকার অর্থে
ভালোবাসা ছাড়া থাকা যায় না।
আছে ক্ষুধা, নেই সক্ষমতা।
জীবনের বহতা নদীতে
ভালোবাসা স্রোত হয়ে আসে...
ডুবে আর ভাসে...
অসময়ে,
বেদনার প্রতিধ্বনিতে হাসে...
তবে,
সুখী ভালোবাসা
মানুষকে কখনো নিঃস্ব করে না।
জন্মান্ধ
জহির শান্ত ।।
এখানে এখনো আকাশ থেকে বিদ্যুৎ নামে
মানুষের পরাণ নিয়ে যায় কান্নার রোলের ভেতর।
যে যায় মাঠে ফসল কাটতে,
সে’ও ভয়পায় কখন জানি বিদ্যুৎএসে
রোহানি জগতে নিয়ে যাবে কোন প্রকার ব্যাখ্যা ছাড়া।
আমি তো ফসল কাটতে অথবা মাছ ধরতে অথবা গরুর পাল ঘরে ফিরে নিতে এসে ছিলাম
এখানে মানুষ মরে বিদ্যুতের গতির আগে মানুষের দ্বারা প্রস্তর যুগের দৃশ্যময়তায়
এখানে ইমাম কতল হয়ে যায় ইস্পাতের তড়িৎ ব্যবহারে, একটি শব্দের ওজন
না বুঝে অথবা অতিমাত্রায় বুঝে, পরমত্ব কী করে প্রাণের চেয়ে বড় হয়ে যায়?
আমি এক বৃহত্তম রোদন ভূমিতে মাছ ও বিদ্যুৎ, ইস্পাত ও প্রাণের সংহার দেখি।
তারপর অন্ধকার নামে, আঠার মত অন্ধকার, আঙুল ছুঁয়ে দুচোখে লেপ্টে
কালো রঙের ভেতরের লাসা দশ আঙুলে লেপ্টে যায়।
চোখে মাখতে গিয়ে টের পাই,
হীরাবানের পুত আমি অনেক আগেই অন্ধ হয়ে গেছি।
যাকে অন্ধ বলে না। বলে জন্মান্ধ।
পাশে কেউ মরে পরে থাকলেও আমি আমাকে টের পাই না
হায় জন্মান্ধ কবি তোমার মুক্তির কোন উপায় তুমি জানো না,
তোমার উপর সাদা আকাশ, নীল আকাশ,কালো আকাশ,
কারবালার খুনে লাল আকাশ, আর তুমি অন্ধ। করুন জন্মান্ধ।
অপেক্ষা
জয়াশিস বণিক।।
আজ
১৭ সেপ্টেম্বর। আজ হিমার জন্মদিন। হিমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
দিন।প্রতিবছর এই দিনে অফিস থেকে ছুটি নিবেই।ছুটি না পেলে সব কাজ শেষ করে
দুপুরের মধ্যেই অফিস থেকে বেরিয়ে যাবে।শুধু জন্মদিন বলেই এই দিনটা হিমার
কাছে বিশেষ দিন নয়।আজ হিমার ভালোবাসার দিন, আজ হৃদয় ভাঙার দিন,আজ অপেক্ষায়
প্রহর গুণার দিন।
নিজেকে বড্ডরকম ভালোবাসে হিমা।তাই অন্য কাউকে
ভালোবাসার প্রয়োজন অনুভব করেনি।স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে তাই
বিশ্ববিদ্যালয়ের চির বসন্তে ঘিরে থাকা ক্যম্পাসেও তার জীবনে কোন পুরুষের
আগমন ঘটেনি।ক্লাস,গল্প,আড্ডা,থিয়েটারে নাটক কিংবা সিনেপ্ল্যাক্সে রঙিন
সিনেমা সবকিছুই আছে হিমার জীবনে।এত আনন্দের মাঝে বিশেষ কোন পুরুষের শূন্যতা
সে কখনো অনুভব করেনি।আড্ডার বাইরে নিজেকে সময় দিতেই বেশি ভালোবাসে হিমা।
সেদিন
ছিলো রবিবার।রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ।রোদ চশমায় চোখ ঢেকে ছাতা মাথায় রিক্সার
জন্য অপেক্ষা করছে হিমা।এমন সময় হঠাৎ করেই রিক্সা নিয়ে হাজির রবি।রিক্সা
থামিয়ে বললো রিক্সায় ওঠো।
হিমা কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।
আরে বাবা রোদে পুড়ে কালো না হয়ে চটপট রিক্সায় উঠে পড়।তোমার জন্যই রিক্সা নিয়ে এসেছি।আমার তো গাড়ি নেই,তাই রিক্সাই সম্বল।
হিমাও রিক্সায় উঠে বসলো রবির সাথে।
তোমাকে কিন্তু এই সানগ্লাসে মানিয়েছে বেশ।খুব উৎফুল্লভাবে মিহি কণ্ঠে বললো রবি।
হিমা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে।
রবি হুট করে কোথা থেকে উদয় হলো, কেনই বা সে তার রিক্সায় উঠে বসলো।কেমন একটা ঘোরের মাঝে আছে হিমা।
একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় উত্তর দিলো- সানগ্লাস পড়লে যে কোন মেয়েকেই সুন্দর লাগে।
এই ক্যম্পাসে এই মুহুর্তে সানগ্লাস পরা কয়েকশ মেয়ে আছে।কাউকেই এতটা সুন্দর লাগছে না, যতটা তোমায় লাগছে।
কি সব সস্তা মার্কা কথা।আমাকে ইমপ্রেস করার হ্যাংলা চেষ্টা বাদ দাও।এখন আসল কথা বলো।কী হেতু রিক্সা নিয়া আসিয়াছ, কহ বিস্তারিয়া।
কোনো কারণ নাই।রোদে পুড়ে যাচ্ছ দেখে মায়া হলো, তাই...
আহারে আমার মায়াবান দিলদরিয়া মানুষ।তা হঠাৎ এত এত মেয়ে থাকতে আমার জন্য মায়া জন্মানোর কারণটা জানতে পারি?
আরে
কারণ তেমন বিশেষ কিছু না।দেখলাম রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছো।তাই ভাবলাম
সুযোগটা কাজে লাগাই।সুন্দরী রমনীর সাথে ভর দুপুরে রিক্সায় রৌদ্রবিলাস।আহা
এমন তপ্তরোদেও হিমেল অনুভূতি।
ওরে বাব্বা।রৌদ্রবিলাস! কিন্তু আমি তো গন্তব্যে পৌঁছে গেছি।আমাকে নামতে হবে।
আমাকে এত চমৎকার হিমশীতল রৌদ্রবিলাসের সুযোগ দেওয়ার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ। আরো এমন রৌদ্রবিলাস কিংবা বৃষ্টি বিলাসের অপেক্ষায় রইলাম।
হাসতে হাসতে হলের দিকে চলে গেলো হিমা।
রবির সাথে প্রথম কবে, কোথায় দেখা হয়েছিলো মনে নেই হিমার।পাশাপাশি ডিপার্টমেন্ট, তাই কোন না কোন ভাবে পরিচয়, গল্প, আড্ডা ইত্যাদি।
প্রায়ই হিমার ক্লাস শেষে হুট করেই রবির আগমন ঘটতো।কখনো রিক্সায়, কখনো হেঁটে কখনো বা পাশের কোনো ক্যান্টিনে আড্ডা গল্প খুনসুটি।
মাঝেমধ্যে হুট করেই উধাও হয়ে যাওয়া রবির এক অদ্ভুত রোগ।
ফোন বন্ধ করে কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেনো হারিয়ে যায়।আবার কয়েকদিন পর এসে হাজির।
গত কয়েকদিন রবি লাপাত্তা।
পরিচয়ের শুরুর দিকে রবির এমন লাপাত্তা হওয়া খুব অদ্ভুত লাগলেও এখন আর অবাক লাগেনা হিমার।
রবির ফোনের আওয়াজে হিমার ঘুম ভাঙে। হ্যাঁ বলো।
এখনো ঘুমাচ্ছ?
রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছি।
এখনো ওঠো।তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।খুব ক্ষুধা পেয়েছে।একসাথে নাস্তা করবো।
এত সকালে কেনো? এখন তো মাত্র ছয়টা বাজে।
আরে বাবা আসবে নাকি চলে যাবো?
ইস মাঝেমাঝে কি যে যন্ত্রনা দাও তুমি।আচ্ছা দাঁড়াও আসছি।
এতদিন পর কোথা থেকে উদয় হয়েছ? আর এত সকালে কি এমন ঘটলো যে আমার সাথে নাস্তা না করলে খাবার হজম হবে না।
চলো আগে খাই, তারপর সব বলবো।
নাস্তা শেষে দুজন চুপচাপ পাশাপাশি হাঁটছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।
হঠাৎ
করেই এই সকালবেলা ফুল নিয়ে লালচে চুলের ছোট্ট একটা মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে
বললো- ভাইয়া ভাবিরে ফুল কিননা দেন।একটা মালা ভাবির চুলে বাইন্ধ্যা
দেন।ভাবিরে খুব মানাইবো।
একটা ফুলের মালা কিনে টাকা দিতেই মেয়েটা হাসি
দিয়ে হিমাকে বললো-ভাবি এই একটা ফুল আফনেরে দিলাম।টেকা দেওন লাগবো না।আফনে
অনেক সুন্দর।তাই দিলাম।
হ্যাঁ না কিছু বলার আগেই একটা গোলাপ হিমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে মেয়েটা চলে গেলো।
আবার দুজন চুপচাপ হেঁটেই চলেছে।
কি হলো কিছু বলছো না যে? হলের কাছাকাছি পৌঁছেই জিজ্ঞেস করলো হিমা।
কত কথাই তো বলতে চাই,কিন্তু বলতে তো পারি না।
ওমা তোমার এমন কি কথা আছে যা বলতে পারো না।আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?
বলো তো শুনি, কি তোমার অব্যক্ত কথা।যা বলার জন্য এই সাতসকালে হাজির।
আরে না তেমন কিছু না।কথায় কথায় তোমায় উইশ করতেই ভুলে গেছি।শুভ জন্মদিন।
অবাক চোখে রবির দিকে তাকিয়ে রইলো হিমা।
তুমি জানো! আজ আমার জন্মদিন? বিস্ময়মাখা চোখে প্রশ্ন করলো হিমা।
তোমায় কী উপহার দেবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।তাই ফুলের মালাটা কিনে নিলাম।
তুমি কি ঐ ফুলওয়ালি মেয়েটার ভাবি হবে? হিমার হাতে ফুলের মালাটা গুঁজে দিলো রবি।
প্রপোজ কিভাবে করতে হয়, তাও জানো না?এখন যাও।আমি হলে যাবো, বলেই হলের দিকে হাঁটতে শুরু করলো হিমা।
সারা
পৃথিবীর অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা যেনো ঘিরে ধরেছে রবিকে।সব যেনো অচেনা মনে
হতে লাগলো তার।হতাশা আর গ্লানি নিয়ে নিজের অজান্তেই নিরুদ্দেশে হাঁটতে শুরু
করলো সে।
হলের গেইটে পা রেখেই হিমা বললো, এই শোনো।বিকেলে ফ্রী আছো?একটু ঘুরতে বের হবো।পারলে এসো।
আর কিছু না বলেই হলের ভিতরে চলে গেলো হিমা।
অল্প
একটু সময়ের মধ্যে রবির জীবনে কত কি যে ঘটে গেলো, সে কিছু বুঝে উঠতে পারলো
না।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।হাসবে নাকি কাঁদবে? চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে
উঠবে নাকি চুপ করে চলে যাবে? কিছুই বুঝতে পারছে না রবি।
এভাবে সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা একটু আড্ডা, খুনসুটি,মান-অভিমান সবমিলিয়ে দুজনের ভাবনা চিন্তা জুড়ে কেবল দুজন।
পুরনো অভ্যাস এখনো ছাড়তে পারেনি রবি।হুট করেই না বলে উধাও।কয়েকদিন দিন পর আবার হাজির।
অনেকবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর না পেয়ে হিমা এখন জিজ্ঞেস করেনা, অবাকও হয়না।
রবি যেখানে যেই অবস্থায় থাকুক না কেনো হিমার জন্মদিনে ঠিকই এসে হাজির হবেই।
দেখতে দেখতে পড়ালেখা শেষ।এখন চাকরির চিন্তা, ভবিষ্যতের চিন্তা।
ছোট্ট একটি চাকরি নিয়ে অন্য শহরে চলে যায় রবি।হিমাও একটা চাকরিতে যোগদান করে।এখন কেবল সময় সুযোগ করে সংসার করার অপেক্ষা।
ভোর ৬টায় ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙে হিমার। শুভ জন্মদিন প্রিয়।
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে হিমা জানতে চায়- তুমি আজ আসবে না?
তোমার জন্মদিনে আমি আসবো না তাকি হয়?অফিসে গিয়েই বের হয়ে যাবো।তারপর ট্রেন ধরবো।বিকেল নাগাদ পৌঁছে যাবো।
আচ্ছা। সাবধানে এসো।
অফিসের কাজ শেষ করে সময় মতো স্টেশনে চলে আসে হিমা।
ট্রেনও সময়মতো আসে। কিন্তু..
রবির ফোন বন্ধ।কোনোভাবেই তারসাথে আর যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রতিবছর
এইদিনে নিয়ম করে হিমা স্টেশনে আসে।সন্ধ্যায় ফিরে যায়।আবার একবছর অপেক্ষায়
থাকে।হিমা জানে রবির পুরনো অভ্যাসের মতো রবি ঠিকই একদিন ফিরবে।