তাদের
হাতে থাকার কথা ছিল গ্লাভস আর প্রতিযোগিতার পদক। থাকার কথা ছিল দেশের গর্ব
হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে জ্বলে ওঠা। কিন্তু সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল
যুদ্ধের এক নির্মম আঘাতে।
সাম্প্রতিক ইসরায়েলি ড্রোন ও বিমান হামলায়
প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের দুই প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ-কারাতে খেলোয়াড় হেলেনা
গোলামি ও বক্সার রুহুল্লাহ সালেক। এই দুই নাম এখন ক্রীড়াজগতের ট্র্যাজেডির
প্রতীক।
লোরেস্তান প্রদেশের হেলেনা ছিলেন একজন পেশাদার কারাতে খেলোয়াড়,
যার প্রতিভায় ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখেছিল ইরান। তাকে হারিয়ে কারাতে
ফেডারেশন শুধু শোক প্রকাশ করেনি বরং ‘শহীদ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে তাকে। এ এক
বিরল স্বীকৃতি, যেখানে খেলাধুলার গণ্ডি ছুঁয়ে গেছে জাতীয় আত্মত্যাগের আবহ।
অন্যদিকে
আলবোরজ প্রদেশের বক্সার রুহুল্লাহ সালেক ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ।
যার ঘাম ঝরানো পরিশ্রম থেমে গেল হঠাৎই, এক নিষ্ঠুর আক্রমণে। গত কয়েক দিনের
মধ্যে তিনি তৃতীয় বক্সার যিনি এই সহিংসতায় প্রাণ হারালেন। এর আগে নিহত
হয়েছেন সেয়েদ আলী বাঘেরনিয়া ও রেজা বাহরামি। তাদের গল্পগুলোও একই রকম করুণ,
একই রকম অসমাপ্ত।
ইরানের ক্রীড়া ফেডারেশন ও বক্সিং সংস্থাগুলো একযোগে
প্রকাশ করেছে গভীর শোক ও প্রতিবাদ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এটা শুধু
খেলোয়াড়ের মৃত্যু নয়, এটা দেশের প্রাণ হারানো।’’
ইরান সরকার ও স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ১৩ জুন শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪
জন নিহত, যাদের মধ্যে ৭৪ জন নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা পেরিয়েছে ১ হাজার
৮০০। এদের মধ্যেই অন্তত ২৬ জন ছিলেন ক্রীড়াবিদ। যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের
মাঠ থেকে উঠে এসেছিলেন স্বপ্নের চোখে।
এই মৃত্যুগুলো শুধু সংখ্যা নয়।
এরা ছিল স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, যারা মাঠে যুদ্ধ করতেন শান্তির জন্য। আজ তাদের
হারিয়ে মাঠ নীরব, গ্যালারি স্তব্ধ, আর ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদয়ে রয়ে গেছে এক
অমোচনীয় শোকরেখা।