কোরবানি ইসলামে একটি
গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআনে আল্লাহ তাআলা নামাজের সাথে যুক্ত করে কোরবানি
করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি তোমাকে কাওসার দান করেছি।
সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো। নিশ্চয় তোমার
প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ। (সুরা কাওসার: ১-৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ
বলেন, আর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন
বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান
অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর যখন সেগুলি কাত হয়ে পড়ে যায়
তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে
বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি;
যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও
রক্ত; বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সে সবকে তোমাদের
অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি
তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও।
(সুরা হজ: ৩৬, ৩৭)
কোরবানি করার জন্য সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত পশু
নির্বাচন করা আবশ্যক। বড় ধরনের ত্রুটি আছে এমন পশু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয়
না। নিজে হেঁটে জবাইয়ের জায়গায় যেতে পারে না এমন অসুস্থ, শুকনো বা দুর্বল
পশু দিয়েও কোরবানি শুদ্ধ হয় না।
এই বিধানের কারণে অনেকে আবার মনে করেন,
পশুর মধ্যে যে কোনো ত্রুটি থাকলেই কোরবানি শুদ্ধ হয় না। এ ধারণাও ঠিক নয়।
ছোটখাট ত্রুটি আছে এমন পশু দিয়েও কোরবানি করা যায়। এখানে আমরা এ রকম কিছু
ত্রুটি তুলে ধরছি যেসব ত্রুটি পশুর মধ্যে থাকলেও কোরবানি শুদ্ধ হয়:
১. দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া
কোনো
পশুর যদি এক চোখ বা উভয় চোখ পুরোপুরি অন্ধ হয়, তাহলে তা দিয়ে কোরবানি করা
যায় না। পুরোপুরি অন্ধ না হলে দৃষ্টিশক্তি কিছুটা দুর্বল হলেও ওই পশু
কোরবানি করা যায়।
২. একটু খোঁড়া হওয়া
পঙ্গুত্বের কারণে
স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম, এক বা একাধিক পা দিয়ে ঠিকভাবে হাঁটতে
পারে না এমন পশু কোরবানি করা যায় না। কোনো পশু যদি কিছুটা খুঁড়িয়ে হাঁটে
কিন্তু পুরোপুরি পঙ্গু না হয়, নিজের পায়ে হেঁটে কোরবানি করার জায়গায় যেতে
পারে, তাহলে ওই পশু কোরবানি করা যায়।
৩. কিছু দাঁত না থাকা
সব দাঁত
পড়ে গেছে বা এত অধিক পড়ে গেছে যে খাবার চিবিয়ে খেতে অক্ষম এমন পশু কোরবানি
করা যায় না। কোনো পশুর যদি কিছু দাঁত পড়ে যায়, কিন্তু অবশিষ্ট দাঁত দিয়ে
নিজে চিবিয়ে খাবার খেতে পারে, তাহলে ওই পশু কোরবানি করা যায়।
৪. লেজ বা কান একটু কাটা থাকা
লেজ
বা কান অর্ধেক বা তার বেশি অংশ কাটা পড়েছে এমন পশু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয়
না। কোনো পশুর লেজ বা কান যদি অর্ধেকের কম কাটা পড়ে, তাহলে ওই পশু কোরবানি
করা যায়।
৫. কান জন্মগতভাবে ছোট হওয়া
কান জন্মগতভাবে ছোট এমন পশু কোরবানি করা যায়।
৬. শিং ভেঙে যাওয়া বা না ওঠা
যে
পশুর শিঙ গোড়া থেকে ভেঙে গেছে এবং সে কারণে মস্তিস্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,
ওই পশু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয় না। কিন্তু শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি
আঘাত না পৌঁছে, তাহলে ওই পশু কোরবানি করা যায়। যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু
শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি, ওই পশুও কোরবানি করা যায়।