কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারসহ ৯৫ জনের বিরুদ্ধে আরো এক মামলা
|
কুমিল্লার ‘দানব’ খ্যাত সাবেক সংসদ সদস্য আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুলসহ অন্তত ৭০ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০/২৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে কুমিল্লায় কোতয়ালী মডেল থানায় সশস্ত্র হামলা ও গুরুতর জখম করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থা তালতলা চৌমুহনীর আতাউর রহমান হাকিমের ছেলে ব্যবসায়ী আহমেদ রাজিব ওরফে রাজিব বাদি হয়ে সোমবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম ও গুলি চালানো হয় বলে উল্লেখ করা হয়। কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ হোসেন মামলাটি গ্রহণ করেন। মামলায় বাদি অভিযোগ করেন, মামলার আসামীরা দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লার দানব, ১নম্বর আসামী খুনী বাহারের পালিত শুন্ডা বাহিনীর সদস্য হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস করে আসছে। তারা কোন আইন-কানুন মানে না। খুনী বাহারের ছত্রছায়ায় আসামীরা কুমিল্লার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারী অফিস আদালত, স্কুল কলেজে টেন্ডারবাজি - চাঁদাবাজি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আসামীদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। আসামীরা খুনী বাহারের পালিত গুন্ডা হিসাবে দিন-দুপুরে মানুষ খুন করে দিব্যি বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে গেলে আসামীরা মারধর করে হত্যা করতো কিংবা মিথ্যা মামলা দায়ের করে জেল খাটাতো। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ইতোপূর্বে সারাদেশে সরকারি চাকুরীতে কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে বাদী এ আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে নিজ তাগিদে তাদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকেন। আসামীরা খুনী বাহারের ছত্রছায়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে দমানো এবং এর সাথে জড়িত বাদীসহ অন্যান্যদের নিরীহ ব্যক্তিদেরকে হত্যা গুম করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বেলা ৪টায় বাদীসহ স্বাক্ষীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন কর্মসূচীকে সমর্থন জানানোর জন্য কুমিল্লা কান্দিরপাড় টাউনহল মাঠে আসার উদ্দেশ্যে রওনা করে ঘটনাস্থল তালতলা চৌমুহনীর রাস্তার উপর পৌছানো মাত্র ১নং আসামীর হুকুম ও নির্দেশে এজাহারনামীয় সকল আসামীগণসহ অজ্ঞাতনামা আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একই উদ্দেশ্যে হাতে পিস্তল, একনলা বন্ধুক, পাইপ গান, দা-ছেনী, ডেগার, লোহার রড ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাদীসহ স্বাক্ষীগণের পথরোধ করে। বাদী পথরোধের কারণ জিজ্ঞাসা করে পথ ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। ২নং আসামী আমিনুল ইসলাম টুটুল কোটা বিরোধী আন্দোলনের মজা বুঝাইতেছি বলে তার হাতে থাকা ছেনি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীর মাথা লক্ষ্য করে কোপ দিলে এ কোপ বাদীর মাথার বাম পাশে পড়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। ৩নং আসামী মাসুদ তার হাতে থাকা ছেনি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বানীর মাথার ডান পাশে স্বজোরে কুপ দিয়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৪নং আসামী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ তার হাতে থাকা ডেগার দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীর বুক লক্ষ্য করে ঘাই দিলে উক্ত ঘাই বাদী বাম হাত দিয়ে ঠেকালে তা বাদীর বাম হাতে পড়ে মারাত্মক রগ কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। ৫নং আসামী আতিক উল্লাহ খোকন হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে বাদী জীবন বাঁচানোর জন্য একটু সরে গেলে উক্ত গুলি প্রচন্ড জোর বিস্ফোরিত হয়ে লক্ষ্যভেদ হয়। মামলায় যাদের আসামী করা হয় তারা হলেন, (১) আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন বাহার (৭০) পিতা মৃত মো: আব্দুল সালাম, সাং- ৪০১ মনোহরপুর মুন্সেফবাড়ি, কোতয়ালী মডেল, কুমিল্লা, (২) আমিনুল ইসলাম টুটুল (৫৮), পিতা: রফিকুল ইসলাম, সাং: ধর্মপুর, থানা: কোতয়ালী; (৩) মাসুদ (৪২) সাবেক কাউন্সিলর, পিতামৃত: আব্দুল আজিজ, সাং: ছোটরা; (৪) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ (৫৭), পিতা: মেতু মিয়া, সাং: ২য় মুরাদপুর, (৫) আতিকুল্লাহ খোকন (৫৮), পিতামৃত: নুরুল ইসলাম, সাংঃ ঝাউতলা, (৬) আহম্মেদ নিয়াজ পাভেল (৪৬), পিতামৃত: আলী মিয়া, সাং: শাসনগাছা বড় বাড়ি; (৭) জহিরুল ইসলাম রিন্টু (৪৮), পিতামৃত: সিরাজুল ইসলাম, সাং মির্জানগর, পো: আগানগর, থানা: বরুড়া, হালসাং: ছোটরা, বিষ্ণুপর; (৮) হাবিবুল আল-আমিন সাদী (৪৫) ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পিতামৃত: সালেহীন মিয়া প্রকাশ বকু মিয়া, সাং: মুন্সেফ বাড়ি; (৯) সরকার মাহমুদ জাবেদ (৫০) ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পিতামৃত: আব্দুর রব মোক্তার, সাংঃ রেইসকোর্স, (১০) আজিজুল হক শিহানু (৩৬), পিতামৃত: হেলাল উদ্দিন, সাং: ৪০১ মনোহরপুর, মুন্সেফ বাড়িঃ (১১) কাজী মনি (৪৫), পিতাঃ প্রফেসর মিয়া, সাং: কাজী বাড়ি, দক্ষিণ চর্থা: (১২) তপ্ত (২৫), পিতাঃ অপু মিয়া, সাংঃ দক্ষিণ চর্থা, (লুতফুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে); (১৩) শাওন (৩৫) ওরফে মামা শাওন: (১৪) সানি (২৮) ওরফে পিস্তল সানি, উভয়পিতা: সিরাজ মিয়া, সাং: দক্ষিণ চর্চ্চা (কালু মিয়ার মসজিদের পার্শ্বে পীর বাড়ী); (১৫) মোস্তাক ওরফে বডি মোস্তাক, পিতামৃত: কাদের মিয়া, সাং: দক্ষিণ চর্থ, বড় পুকুর পাড়: (১৬) আনিছ মিয়া (৪৮), পিতা: ছাত্তার মাস্টার, সাং: দক্ষিণ চর্থা; (১৭) জাহিদ মিয়া (৪৫) ওরফে চোরা জাহিদ, পিতা: অজ্ঞাত, সাং: সদর হাসপাতাল রোড, পারভেজ মিয়ার বাড়ির - পার্শ্বে, (১৮) নজরুল (৪০) ওরফে ওয়ার্ড মাস্টার নজরুল, পিতা: অজ্ঞাত, সাং: জগন্নাথপুর, (১৯) রতন (৫২), পিতামৃত: সুরুজ মিয়া, সাং: অশোকতলা চাপরাশি বাড়ি, (২০) হাসান (৫১), পিতা: আমির হোসেন, সাং: চম্পকনগর দক্ষিণ পাড়া; (২১) রিংকু মিয়া (৪২), পিতামৃত: ওম্মেম মিয়া, সাং- কাপ্তান বাজার; (২২) আবুল কালাম ওরফে বুলেট কালাম (৫৬), পিতামৃত: সুন্দর আলী, সাং ধনুয়া খোলা, হালসাং: উত্তর রেইসকোর্স, (২৩) ছালাম মিয়া (৪২), পিতামৃত। সুন্দর আলী,সাং: ধনুয়া খোলা, হালসাং: উত্তর রেইসকোর্স; (২৪) জাকির হোসেন (৪৮), পিতামৃত: রুহুল আমিন, সাং: ধনুয়া খোলা; (২৫) মো: সুজন ড্রাইভার (৩৭), পিতামৃত: খোকন ড্রাইভার, সাং: ধর্মপুর, (২৬) ইয়াকুব আলী (৪৫), পিতা: ফজলুর রহমান, সাং- ২নং দূর্গাপুর উত্তর, দিঘীর পাড়: (২৭) আলমগীর হোসেন (৫৪), পিতামৃত মালেক মিয়া, সাং: কৃষ্ণনগর, ২নং দূর্গাপুর (২৮) বালু খায়ের (৪২), পিতামৃত: সামাদ মিয়া, সাং: বার ছন্না, , দূর্গাপুর, গোমতী হাউজিং, (২৯) নজরুল রহমান (৫২), পিতামৃত: বজলুর রহমান, সাং। কমলাপুর কালীর বাজার ইউনিয়ন, কোতয়ালী; (৩০) আব্দুল আলিম, পিতামৃত: বজলুর রহমান, সাং: কমলাপুর কালীর বাজার ইউনিয়ন, কোতয়ালী; (৩১) মো: হুমায়ুন মেম্বার (৪০), পিতামৃত: নায়েব আলী, সাং: দূর্গাপুর উত্তর বারছনা; (৩২) জসিম (৪০) ওরফে কান কাটা জসিম, পিতা: অজ্ঞাত, সাং: দক্ষিণ চর্থা কাজী বাড়ি (৩৩) আহহ্লাদ মিয়া (৪২), পিতা: রায়হান মিয়া, সাং দক্ষিণ চর্থা, কাজী বাড়ি; (৩৪) রাজু ওরফে গ্যারেজ রাজু ওরফে কুত্তা রাজু, পিতামৃত: মুকসুদ মিয়া, সাং: দক্ষিণ চর্থা (৩৫) জাহিদুল মিয়া, পিতা: ফুলু মিয়া, সাং: ২য় মুরাদপুর, মুরগী বাড়ি: (৩৬) রাব্বু (৩৫) (শহিদ মিয়া ভাগিনা), পিতা: অজ্ঞাত, সাং: ২য় মুরাদপুর; (৩৭) ছোটন (৩৫) ওরফে কসাই ছোটন, পিতা: অজ্ঞাত, সাং: দক্ষিণ চর্থা, মাসুক মিয়ার বাড়ির পিছনে; (৩৮) কাউছার খন্দকার (৪৫), পিতামৃত: মনু চেয়ারম্যান, সাং: দক্ষিণ চর্থা, (৩৯) স্বপন মিয়া (৩৪), পিতাঃ তোতা মিয়া, সাং: ২য় মুরাদপুর; (৪০) ফয়সাল (৪০), পিতা হাফেজ মিয়া, সাং: চর্থা, সৈয়দ বাড়ি (৪১) সৈকত (৪০), পিতাঃ ফারুক মিয়া, সাং: ২য় মুরাদপুর, (৪২) জসিম মিয়া (৪৬), পিতাঃ আমির আলী, সাং: মুরাদপুর, (৪৩) শ্বেত কাদের (৫০), পিতা: অজ্ঞাত, সাং: কেটিসিসির পার্শ্বে, (৪৪) মাছুম (৪২), পিতা: পেটলা মিয়া, সাং: দক্ষিণ চর্থা, মাসুক মিয়ার বাড়ির পার্শ্বে (৪৫) মীর হোসেন (৩৪), পিতা: সুলতান মিয়া, সাং: দক্ষিণ চর্থ বড় পুকুরপাড়, কবরস্থানের পার্শ্বে, (৪৬) মাহাবুব হাসান (৫২), পিতাঃ সুলতান মাস্টার, সাং: ধনুয়া খোলা, (৪৭) আব্দুল হান্নান সোহেল (৪৪), পিতা: আ. লতিফ, সাং: ধর্মপুর, কলেজ রোড, (৪৮) আশিকুর রহমান (৩৫), পিতা মো: সহিদ মিয়া, সাং: ধর্মপুর কলেজ রোড; (৪৯) মো: সেলিম মিয়া (৫০), পিতা: ইসমাইল মিয়া, সাং: সুবর্ণপুর পাঁচতুবী (৫০) আলাউদ্দিন মিয়া (৪৫), পিতামৃত: সুরুজ মিয়া, সাং: অশোকতলা, (৫১) ইব্রাহিম খলিল জনি (৪৫), পিতামৃত: হোসেন ড্রাইভার, সাং: ধর্মপুর; (৫২) সালাউদ্দিন ওরফে কালু সালাউদ্দিন, পিতামৃত: মোসলেম মিয়া, সাং: ধর্মপুর, (৫৩) জয়নাল আবেদীন (৪২), পিতামৃত: আ. রউফ সওদাগর, সাং: বিষ্ণুপুর; (৫৪) শেখ সাদী (৪৫), পিতা: আব্দুল মিয়া, সাং: অশোকতলা (৫৫) বরিশাইলা রুহুল আমীন (৪৫), পিতা: অজ্ঞাত, সাং: অশোকতলা (৫৬) মো: আব্দুল হান্নান (৪৫), পিতামৃত: হারুন মিয়া, সাং বানাওয়া; (৫৭) আক্তার হোসেন (৪৮), পিতামৃতঃ সফিক মেম্বার, সাং: অলিপুর, কালির বাজার; (৫৮) সাইফুল ইসলাম ওরফে পিলে সাইফুল (২২), পিতা: আক্তার মোল্লা, সাং- কাউতলা, জালু মিয়ার বাড়ির পাশে। (৫৯) আব্দুল হান্না চৌধুরী অপু (৩৭); পিতামৃত: আব্দুল মান্নান চৌধুরী, সাং- পুরাতন চৌধুরীপাড়া, (৬০) আবু ইউসুফ বাবু (৫৬), পিতামৃত: মোহাম্মদ আলী, সাং মোঘলটুলী (৬১) আনোয়ার হোসেন মিঠু (৪২), পিতামৃত: আমির হোসেন, সাং: মোঘলটুলী (৬২) রাজু ওরফে দেখা রাজু (৩৫), পিতা: অজ্ঞাত, সাং হাউজ, ২য় মুরাদপুর, (৬৩) হুমায়ুন কবির (৫০) পিতামৃত: আব্দুল সালাম, সাং বালুধুম (৬৪) জসিম মিয়া (৪০), পিতা: ফিরোজ মিয়া (৬৫) বোরন মিয়া (৩৫), পিতা: সহিদ মিয়া: (৬৬) মুন্না মিয়া (২৮), পিতা: কাউসার মিয়া (৬৭) আজিম মিয়া (২৫), পিতা: সেলিম মিয়া সর্বসাং। কাসারিপট্টি (৭৮) খায়রুল মাসুদ ডালিম (৪২), (৬৯) খায়রুল মামুন (৩৮), উভয়পিতা মৃতঃ আব্দুল বাতেন, সাং। পুরাতন কাস্টম গোডাউন রোড, ঠাকুরপাড়া, (৭০) ভুটু মিয়া (৪২), পিতামৃত: সুলতান মিয়া, সাং: দক্ষিণ ঠাকুরপাড়া, সর্বথানাঃ কোতয়ালী মডেল, জেলাঃ কুমিল্লাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জন। মামলার পূর্ণ বিবরণ: মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদী একজন সহজ, সরল, নিরীহ, আইনমান্যকারী ব্যক্তি বটে। পক্ষান্তরে সকল আসামীগণ একদলভূক্ত দুষ্ট, দূর্দান্ত, সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, বোমাবাজ, আইনঅমান্যকারী ব্যক্তি বটে। বাদী পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং রাজনীতি সচেতন একজন ব্যক্তি বটে। আসামীগণ দীর্ঘদিন যাবত কুমিল্লার দানব, ১নং আসামী খুনী বাহারের পালিত শুন্ডা বাহিনীর সদস্য হইয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস করিয়া আসিতেছে। তাহারা কোন আইন-কানুন মানে না। খুনী বাহারের ছত্রছায়ায় আসামীগণ কুমিল্লার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারী অফিস আদালত, স্কুল কলেজে টেন্ডারবাজী - চাঁদাবাজী করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিয়া আসিতেছে। আসামীগণের ভয়ে কেহ মুখ খোলার সাহস পায় না। আসামীগণ খুনী বাহারের পালিত গুন্ডা হিসাবে দিন-দুপুরে মানুষ খুন করিয়া দিব্যি বুক ফুলাইয়া চলা-ফেলা করে। কেহ তাহাদের বিরুদ্ধে গেলে আসামীগণ তাহাকে মারধর করিয়া হত্যা করত; কিংবা মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়া জেল খাটায়। আসামীগণের এহনে অত্যাচার নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছে। ইতোপূর্বে সারা দেশে সরকারি চাকুরীতে কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হইলে বাদী উক্ত আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়া নিজ তাগিদে তাহাদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে সক্রিয় ভাবে জড়িত রাখেন। আসামীগণ খুনী বাহারের ছত্রছায়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে দমানো এবং এর সাথে জড়িত বাদীসহ অন্যান্যদের নিরীহ ব্যক্তিদেরকে হত্যা গুম করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করিতে থাকে। ঘটনার দিন, তারিখ ও সময়ে অর্থাৎ গত ১৯-০৭-২০২৪ তারিখ রোজ শুক্রবার বেলা অনুমান ০৪:০০ ঘটিকার সময় বাদীসহ কতেক স্বাক্ষীগণ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন কর্মসূচীকে সমর্থন জাননোর জন্য কুমিল্লা কান্দিরপাড় টাউনহল মাঠে আসার উদ্দেশ্যে রওনা করিয়া ঘটনাস্থল তালতলা চৌমুহনীর রাস্তার উপর পৌছানো মাত্র ১নং আসামীর হুকুম ও নির্দেশে এজাহারনামীয় সকল আসামীগণসহ অজ্ঞাতনামা আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে একই উদ্দেশ্যে হাতে পিস্তল, একনলা বন্ধুক, পাইপ গান, দা-ছেনী, ডেগার, লোহার রড ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হইয়া বাদীসহ স্বাক্ষীগণের পথরোধ করে। বাদী পথরোধের কারণ জিজ্ঞাসা করিয়া পথ ছাড়িয়া দেওয়ার জন্য অনুরোধ করিলে আসামীগণ ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে। ২নং আসামী কোটা বিরোধী আন্দোলনের মজা বুঝাইতেছি বলিয়া তাহার হাতে থাকা ছেনি দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীর মাথা লক্ষ্য করিয়া কোপ দিলে উক্ত কোপ বানীর মাথার বাম পাশে পরিয়া মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। ৩নং আসামী তাহার হাতে থাকা ছেনি দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে বানীর মাথার ডান পাশে স্বজোরে কুপ দিয়া মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৪নং আসামী। তাহার হাতে থাকা ডেগার দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীর বুক লক্ষ্য করিয়া ঘাই দিলে উক্ত ঘাই বাদী বাম হাত দিয়া ঠেকাইলে তাহা বাদীর বাম হাতে পড়িয়া মারাত্মক রগ কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। ৫নং আসামী তাহার হাতে থাকা পিছল। দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীকে লক্ষ্য করিয়া গুলি ছবিলে বাদী জীবন বাঁচানোর জন্য একটু সরিয়া গেলে উক্ত গুলি প্রচন্ড জোর বিস্ফোরিত হইয়া লক্ষ্য এ হয়। তখন বাদীর শোর চিৎকারে ১নং স্বাক্ষী আগাইয়া আসিলে ৬নং আসামী হত্যার উদ্দেশ্যে তাহার হাতে থাকা ককটেল উদ্দেশ্যে ১নং স্বাক্ষীকে উদ্দেশ্য করিয়া চুরিয়া মারিলে ১নং স্বাক্ষী কাত হইয়া সরিয়া গেলে উক্ত ককটেল মাটিতে পড়িয়া প্রচন্ড জোরে বিস্ফোরিত হয়। ৭নং আসামী হত্যার উদ্দেশ্যে তাহার হাতে থাকা আপ্পায়ার দিয়া বাণীকে লক্ষ্য করিয়া ছরা গুলি ছরিলে তাহার কতেক স্প্রিন্টার বাদীর বাম পায়ে বিদ্ধ হয়। ৮নং আসামী তাহার হাতে থাকা আপ্পায়ার দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে ১নং স্বাক্ষীকে গুলি করিলে ১নং স্বাক্ষী জীবন বাঁচানোর জন্য মাটিতে শুইয়া পড়িলে তাহা লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া মাটিতে পড়িয়া প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। উক্ত গুলির কতেক স্প্রিন্টার ১নং স্বাক্ষীর পায়ে বিদ্ধ হয়। ৯নং আসামী তাহার হাতে থাকা ককটেল দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে ১নং স্বাক্ষীর দিকে চুরিয়া মারিলে ১নং স্বাক্ষী সরিয়া গিয়া জীবনে রক্ষা পায় এবং উক্ত ককটেল মাটিতে পড়িয়া প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বাদী ও ১নং স্বাক্ষীর শোর চিৎকারে ২নং থাকা তাহাদেরকে রক্ষা করার জন্য আগাইয়া আসিলে ১০নং আসামী তাহার হাতে থাকা আগ্নায়াস্ত্র দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে ২নং স্বাক্ষীকে লক্ষ্য করিয়া গুলি চুরিলে ২নং স্বাক্ষী মাটিতে শুইয়া জীবনে রক্ষা পায় এবং উক্ত গুলি মাটিতে পরিয়া প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বাদীসহ ১নং ও ২নং স্বাক্ষীগণকে রক্ষা করার জন্য অপরাপর স্বাক্ষীগণকে আগাইয়া আসিতে দেখিয়া ১১নং ও ১২নং আসামী তাহাদের দিকে ককটেল ডুরিয়া মারে যাহা মাটিতে পড়িয়া প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বাদী, ১নং ও ২নং স্বাক্ষী মারাত্মক ভাবে জখম প্রাপ্ত হইয়া মাটিতে পড়িয়া থাকিতে দেখিয়া ১৩নং আসামী তাহার হাতে থাকা আগ্নায়াস্ত্র দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীর মাথায় প্রচন্ড জোরে কয়েকটি বারি মারে। ১৪নং আসামী তাহার হাতে থাকা পিল দিয়া ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে ৫/৬টি ফাঁকা ঠগুলি করে। এতে করিয়া ছাত্র-জনতা জীবন বাঁচানোর তালতলা চৌমুহনী হইতে দিক-বিদিক ছুটাছুটি করিতে থাকে। ১৫নং আসামী ২নং স্বাক্ষীকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিত্তাল দিয়া গুলি ছুরিলে তাহা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়ায় ১নং স্বাক্ষী জীবনে রক্ষা পায়। ১৬নং, ১৭নং ও ১৮নং আসামীগণ তাহাদের হাতে থাকা প্লাস্টিকের ব্যাগ হইতে কতেক ককটেল ১৯নং, ২০, ২১নং আসামীর হাতে দিলে তাহারা উক্ত ককটেল বিস্ফোরন ঘটাইয়া ত্রাস সৃষ্টি করে। ২২নং আসামী তাহার হাতে থাকা পিছল দিয়া ও ২৩নং আসামী তাহার হাতে থাকা আগ্নাযান্ত্র দিয়া ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১০/১২ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে উক্ত গুলি প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হইয়া লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৪নং ও ২৫ নং আসামীগণ ২নং স্বাক্ষীকে একা পাইয়া তাহাদের হাতে থাকা লোহার রড দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতারী পিটাইয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা-ফুলা জখম করে। ২৬নং, ২৭নং, ২৮নং, ২৯নং, ৩০নং ও ৩১ নং আসামীগণ তাহাদের হাতে থাকা দা-ছেনি ও আগ্নায়াস্ত্র প্রদর্শন করিয়া অপরাপর স্বাক্ষীগণ যাহাতে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করিতে থাকা বাদীসহ ১নং ও ২নং স্বাক্ষীগণকে উদ্ধার করিয়া - হাসপাতালে না নিতে পারে তার জন্য বাধা প্রদানসহ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। ৩২নং আসামী বাদীর পকেট হইতে ৪৫০০/- টাকা ছিনাইয়া লইয়া যায়। ৩৩নং আসামী ১নং স্বাক্ষীর পকেট হইতে ৮০০০/- টাকা ছিনাইয়া লইয়া যায়। ৩৪নং, ৩৫নং, ৩৬নং, ৩৭নং ৩৮নং, ৩৯নং, ৪০নং ও ৪১নং আসামীগণ তাহাদের নিকট রক্ষিত কতেক কাপড়ের ব্যাগ হইতে ককটেল ও আগ্নায়ারের বুলেট অপরাপর আসামীগণকে আগাইয়া দিয়া ও নিজেরা ককটেল বিস্ফোরন ঘটাইয়া বাদীসহ ১নং ও ২নং স্বাক্ষীগণকে মারাত্মক জখম ও ছাত্র-জনতাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টিতে সহায়তা করে। ৪২নং আসামী হইতে ৭০নং আসামীগণসহ অজ্ঞাতনামা আসামীগণ হাতে লাঠি-সোটা ও পিঙ্কল, বন্দুক, পাইপগান লইয়া ১নং আসামী খুনী বাহারের নির্দেশে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করিয়া এহনে জখন্যতম ঘটনা ঘটাইতে সহযোগিতা করিয়াছে। সকল আসামীগণসহ অজ্ঞাতনামা আসামীগণ হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীসহ ১নং ও ২নং স্বাক্ষীকে মারাত্মকভাবে আঘাত করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম করিয়াছে। পরবর্তীতে ছাত্র জনতাসহ এলাকার স্থানীয় লোকজন আগাইয়া আসিতে দেখিয়া আসামীগণ দ্রুত চলিয়া যায়। স্বাক্ষীগণ বাদীসহ ১নং ও ২নং স্বাক্ষীকে উদ্ধার করিয়া দ্রুত কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়া গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার জখমীগণকে চিকিৎসা প্রদান করেন। চিকিৎসাকালে বাদীর মাথার জখম মারাত্মক ধরনের হওয়ায় উক্ত জখমী স্থানে কতেক সেলাই প্রদান করা হয় এবং বাদীর অবস্থা আশংকা জনক দেখিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাদী চিকিৎসা গ্রহণ করিয়া শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হইয়া অত্র মামলা দায়েরে কিছুটা বিলম্ব হয়। বাদীর স্বাক্ষী আছে। মামলার বিচারকালে তাহা প্রমান করিবেন। অতএব, জনাব অনুগ্রহ পূর্বক আমার মামলা গ্রহণ করিয়া আসামীগণের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া সুবিচার করিতে মর্জি হয়। |