শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
৩ ফাল্গুন ১৪৩১
চোখে অস্ত্রোপচার ২৭৮ জনের, চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ জন
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪, ১২:২১ এএম |


কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলিতে চোখে আঘাত পেয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ জন। এর মধ্যে চোখের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ২৭৮ জনের। অস্ত্রোপচার করা বেশির ভাগ রোগীর চোখে ছররা গুলির আঘাত ছিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্দোলন চলাকালে বুধবার থেকে গত শনিবার (১৭ থেকে ২২ জুলাই) পর্যন্ত ছয় দিনে ওই রোগীরা হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে যান। এর মধ্যে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত ৩১৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে মঙ্গলবারের মধ্যে তাঁদের অধিকাংশই চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। অনেকেই এখনো চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে অবস্থান করছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কারও কারও চোখে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। চোখের আলো ফিরবে কি না—এমন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন অনেক রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষের পাশেই পর্যবেক্ষণ কক্ষের একটি বিছানায় শুয়ে ছিলেন হাবিবুর রহমান। তাঁর চোখে কালো চশমা ও মাথায় ব্যান্ডেজ। চশমা সরাতেই চোখের ক্ষত স্পষ্ট দেখা গেল। চোখের কালো ও সাদা অংশও পুরোটাই গাঢ় লাল হয়ে আছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মাঝরাতে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে হাবিবুরকে ভর্তি করানো হয়।
হাবিবুর রহমান ডেমরা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ডেমরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজমেন্ট) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর ডান চোখে ও মাথায় ছররা গুলি লেগেছে। এতে হাবিবুরের চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন চোখের দৃষ্টি ফিরে পাবেন কি না, সে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
হাবিবুর রহমান  বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে তিনি যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজারের সামনের সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিল করছিলেন। সঙ্গে তাঁর সহপাঠী ও বন্ধুরা ছিলেন। হঠাৎ পেছন দিক থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে কিছু লোক এসে এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়। তখনই তিনি মাথায় ও চোখে গুলিবিদ্ধ হন।
হাসপাতালে হাবিবুরের সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা মর্জিনা আক্তার। তিনি  বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ছেলেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। খবর পেয়ে আমরা সেখানে ছুটে যাই। ছেলের মাথায় ছররা গুলি লেগেছিল। তাই ঢাকা মেডিকেল থেকে ছেলেকে মালিবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে মাথায় অস্ত্রোপচারের পর চোখের চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
মর্জিনা আক্তার আরও বলেন, ‘এখানে শনিবার ছেলের একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে চোখে এখনো রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ কারণে চিকিৎসকেরা মঙ্গলবার বিকেলে আরেকটি অস্ত্রোপচার করবেন বলে জানিয়েছেন। এখন সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি।’
হাসপাতালটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স  জানান, গত কয়েক দিনে আন্দোলন-সংঘর্ষে চোখে আঘাত নিয়ে অনেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের কারও কারও চোখ গুলিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হয়তো এঁদের অনেকেরই আঘাতপ্রাপ্ত চোখে আর আলো ফিরবে না।
দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কায় হাসপাতালটির চতুর্থ তলায় ৪৫১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বরিশাল সদরের নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল আহসান। তিনি বিএম কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় রাকিবুলসহ আরও অনেক শিক্ষার্থী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। বিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর একদল লোক হামলা চালায়। সেখানেই ডান চোখে গুলি লাগে রাকিবুলের।
রাকিবুল আহসান  জানান, বুধবার পর্যন্ত বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এখানে ভর্তি করা হয়। পরদিন চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়।
রাকিবুল আহসান আরও বলেন, ‘ডান চোখে এখনো ঝাপসা দেখি। মঙ্গলবার সকালে বড় ডাক্তাররা ভিজিটে এসেছিলেন। তাঁরা আরও তিনটি পরীক্ষা করতে দিয়েছেন।’ চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘আমার চোখে আলো ফেরার অর্ধেক-অর্ধেক সম্ভাবনা রয়েছে।’
আন্দোলনকারী ছাড়াও পথচারী, কর্মজীবী, সাধারণ মানুষসহ অনেকেই গত কয়েক দিনের বিক্ষোভ-সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ছররা গুলিতে কিংবা ইটপাটকেলে চোখে আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের একজন মিরপুর-১ নম্বরের বাসিন্দা জিহাদ মাহমুদ। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে মিরপুর-২ নম্বর এলাকায় সহিংসতার মধ্যে তাঁর চোখে ও শরীরে ছররা গুলি লাগে বলে জানান তিনি। একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থী জিহাদ হাসপাতালের ৪১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন।
জিহাদ মাহমুদ জানান, মিরপুর-২ নম্বরে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে তিনি বিক্রয়কর্মীর কাজ করেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) পরিস্থিতি খারাপ থাকায় দোকানে ক্রেতা একেবারেই ছিল না। তাই তাঁদেরও বিকেলের মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দারুস সালাম থানা এলাকা দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। গন্ডগোল দেখে তিনি একটি বাসের পেছনে গিয়ে লুকান। তখনই তাঁর শরীরে ও চোখে ছররা গুলি লাগে।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক গোলাম মোস্তাফা মুঠোফোনে  বলেন, চোখে বিভিন্ন ধরনের আঘাত নিয়ে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ছররা গুলিতে আহত। তাঁদের প্রাথমিক অস্ত্রোপচার যেটা প্রয়োজন, সেটা দেওয়া হয়েছে। অনেকে অস্ত্রোপচারের পর ছাড়পত্র নিয়ে চলেও গেছেন। ওই রোগীরা প্রতি সপ্তাহে ফলোআপের জন্য আসবেন। তবে আস্তে আস্তে বোঝা যাবে দৃষ্টি কতটুকু ফিরছে। (সূত্র: প্রথম আলো)













সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় মাদকসহ তিন নারী আটক
শবে বরাত উপলক্ষ্যে বেড়েছে গরু ও মুরগির মাংসের দাম
কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে আদানি
অর্থাভাবে নীড়ের বিশ্ব দাবার টুর্নামেন্টে খেলা অনিশ্চিত
সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ গ্রেপ্তার ৫৬৬ জন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক এমপি বাহারসহ ৪৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কুমিল্লায় অটোরিক্সার ধাক্কায় মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থী নিহত
কুমিল্লায় পাঁচদিনে গ্রেফতার ৪১
সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে চার মামলা
কুমিল্লায় মাদকসহ তিন নারী আটক
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২