কুমিল্লার মুরাদনগরে রোহিঙ্গা যুবককে জন্ম নিবন্ধন করে দেওয়ার অভিযোগে উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতারের পর শুক্রবার (২১ জুন) বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেফতার ইসমাইল কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার গুনানন্দি গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা যুবককে ভুয়া ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন সনদ করে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইউপি সচিবকে গ্রেফতার ও কারাগারে প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ডিবি পুলিশের ওসি রাজেশ বড়ুয়া। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে এক রোহিঙ্গা যুবককে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করার কথা স্বীকার করেছেন ইউপি সচিব ইসমাইল। পরে তাকে শুক্রবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘোড়াশাল গ্রামের ভুয়া পরিচয়ে জন্মনিবন্ধন বানিয়ে পাসপোর্ট তৈরির জন্য কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যায় রোহিঙ্গা যুবক মো. ইয়াছিন। এ সময় কিছুটা সন্দেহ তৈরি হওয়ায় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা তাকে আটক করে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিন জানায়, সে মিয়ানমারের বলিবাজার এলাকার সৈয়দ হোসেনের ছেলে। চলতি বছর জানুয়ারিতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশে আসার পর কক্সবাজার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-৯ থাকতো সে। তার চাচাতো ভাই উসমান কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন মদিনা ট্রাভেলসের হাসান মাহমুদ ও মোশাররফ নামে ২ দালালের কাছে পাসপোর্ট করার চুক্তি করে। পরে চুক্তি অনুযায়ী, হাসান মাহমুদ ও মোশাররফ কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম ঘোড়াশাল গ্রামের ভুয়া ঠিকানায় রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিনের সকল কাগজপত্র তৈরি করে দেয়।
এই ঘটনায় সে সময় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করে গোয়েন্দা পুলিশ। রোহিঙ্গা যুবক কীভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেছেন এ বিষয়টির তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তে ইউপি সচিব ইসমাইল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পায় গোয়েন্দারা। তথ্য অনুসন্ধানের পর বৃহস্পতিবার ইউপি সচিব ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত সরকারি মামলায় ইউপি সচিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা চালু রাখার জন্য ভারপ্রাপ্ত হিসেবে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।