নিজস্ব
প্রতিবেদক : কোরবানির ঈদের আর পাঁচ দিন হাতে থাকলেও ঈদযাত্রা জমে ওঠেনি
পুরোদমে, তবে এর মধ্যেই বাস কাউন্টারগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পুরনো
অভিযোগ তুলছেন ঘরমুখো যাত্রীরা।
এবারের ঈদুল আজহার ছুটি ১৬, ১৭ ও ১৮
জুন। ছুটি শুরুর আগের দুদিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় টানা পাঁচ দিনের ছুটি
পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ফলে কাউন্টারগুলোতে আগামী বৃহস্পতিবার,
শুক্রবার ও শনিবারের টিকেটের চাহিদাই বেশি।
ট্রেনের আগাম টিকেট না পেয়ে
রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা ভিড়ছেন বাস কাউন্টারগুলোতে।
তবে বেশিরভাগই আগাম টিকেট না পাওয়ার কথা বলছেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদের
আগে সাপ্তাহিক ছুটির দুদিন যাত্রীর চাপ থাকবে বেশ; ‘বাড়তি ভাড়া আদায়ে’ সেই
দুই দিনের আগাম টিকেট বিক্রি করছে না কাউন্টারগুলো। মহাখালী বাস
টার্মিনালে মঙ্গলবারই বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অতিরিক্ত
ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বাস কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, ফেরার পথে
যাত্রী কম থাকায় ‘কিছুটা বাড়তি ভাড়া’ নিচ্ছেন তারা।
রাজধানীর সায়েদাবাদ
থেকে চাঁদপুরে যাওয়ার জন্য আল আরাফাহ বাসের শুক্রবারের টিকেট কিনতে এসছিলেন
রিশাদ ইসলাম। তবে কাউন্টার থেকে জানানো হয়, আগাম টিকেট বিক্রি হচ্ছে না।
শুক্রবারের যাত্রার জন্য সেদিনই টিকেট নিতে হবে কাউন্টার থেকে।
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্রিম
টিকিট থাকলেও এরা দেয় না। ওইদিন অনেক চাপ থাকে। তখন গাড়ি পথে বা কম আছে
বলে ১০০-১৫০ টাকা করে যাত্রী প্রতি বাড়তি ভাড়া নেয়।”
মহাখালী বাস
টার্মিনাল থেকে মঙ্গলবার দিনাজপুরে যাওয়ার জন্য শাহ ফতেহ আলী বাসের টিকেট
কাটেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আসাদুজ্জামান। এ রুটে অন্যসময় ৮০০ টাকায়
টিকেট বিক্রি হলেও আসাদুজ্জামান নিলেন ১ হাজার ১০০ টাকায়।
তিনি বলেন, “টিকিট অন্যসময়ে ৮০০ টাকা, ঈদ এলেই সেটা বাড়ে। কিছুই করার নেই। যেতে হবে তাই নিলাম।”
অতিরিক্ত
ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ ফতেহ আলী বাস কাউন্টারের টিকেট বুকিং
সহকারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, “ঈদের সময় দিনাজপুর থেকে ফেরার পথে যাত্রী
থাকে না। একদম খালি থাকে। চালক হেল্পারের বেতন ওঠে না ওই ট্রিপের। তাই একটু
ভাড়া বেশি। এটা যাত্রীরাও জানেন।”
সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি রেল
যোগাযোগের সুযোগ না থাকা এবং ট্রেনেও যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা
থাকায় ঈদের সময়ে বাস টার্মিনালগুলোতে ভাড়া বাড়ে বলে মনে করেন মহাখালী
টার্মিনালে আসা আরেক যাত্রী সোহেল রানা।
তার ভাষ্য, “সারা দেশে রেল
যোগাযোগ থাকলে বাসে চাপ কম থাকত। যেসব রুটে রেল চলাচল করে সেখানেও তো
পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না যাওয়ার। এই সুযোগেই বাস মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে নেয়।”
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে মঙ্গলবার ফরিদপুরে যাওয়ার টিকেট খুঁজছিলেন ইহতেশামুল হক।
গোল্ডেন
লাইন পরিবহনের টিকেট নিতে চাইলে ভাড়া বেশি চেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঈদ
এলেই এই এক সমস্যা। এত দিন খালি গেছে, এখন সেটার শোধ তুলবে। অন্য সময়ের
চাইতে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া চাইছে।”
যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “ঈদ
আগে-পরে বিআরটিএ ও আমাদের মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাড়তি ভাড়া না নেওয়ার
নির্দেশনা দেওয়া আছে। বিআরটিএ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও ব্যবস্থা নিচ্ছে।
“আমাদের নলেজে যদি এরকম তথ্য আসে, আমরা সেই পরিবহনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।”
ঈদ
উপলক্ষে এবার ট্রেনের ২ জুন থেকে আগামী টিকেট বিক্রি করে রেল কর্তৃপক্ষ।
ওই দিন দেওয়া হয় ১২ জুনের টিকেট। এরপর ৩ জুন বিক্রি হয় ১৩ জুনের টিকেট, ৪
জুন বিক্রি হয় ১৪ জুনের টিকে, ৫ জুন বিক্রি হয় ১৫ জুনের এবং শেষ দিন ৬ জুন
বিক্রি হয় ১৬ জুনের টিকেট।
তবে সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকেট ছাড়ার পরপরই সব রুটের টিকেট বিক্রি হয়ে শেষ হয়ে যায় বলে জানান যাত্রীরা।
অপরদিকে
ঈদের ফিরতি যাত্রায় ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি হয় ১০ জুন থেকে। সেদিন
বিক্রি হয় ২০ জুনের টিকেট, ১১ জুন দেওয়া হয় ২১ জুনের টিকিট, ১২ জুন বিক্রি
হবে ২২ জুনের টিকিট, ১৩ জুন দেওয়া হবে ২৩ জুনের টিকিট এবং ১৪ জুন বিক্রি
হবে ২৪ জুনের টিকেট।