যেকোনো
দেশের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য আয়ের উৎস হচ্ছে দেশের এক বৃহৎ
কর্মজীবী শ্রেণিপেশার জনগণের নিকট হতে সংগৃহিত ‘আয়কর ব্যবস্থা'। কিন্ত সকল
আয়ের মানুষ সমানভাবে আয়কর প্রদান করেন না। এমনকি কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির
আয়ের মানুষদের জন্য রয়েছে বিশেষ করমুক্ত সুবিধা। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে,
সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কারা কারা করমুক্ত সুবিধা পান? কোন ধরনের সুবিধা
পেয়ে থাকেন তারা? কেনই বা দেয়া হয় এ ধরনের সুবিধা? করযোগ্য আয় করলে আয়কর
দিতে হয়। অর্থাৎ নিজে আয় করলে আয়ের একটি অংশ সরকারকে দিতে হয়। তবে, সরকারি
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু কিছু আয় আছে, যা করমুক্ত। আয়কর আইন ২০২৩
অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরজনিত সুবিধার উপর কোনো আয়কর
দিতে হয় না। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা,
শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ইত্যাদির উপর কোনো কর পরিশোধ করতে
হয় না। এছাড়াও বেশি কিছু খাত রয়েছে যেগুলোতে তাদের কর অব্যাহতি রয়েছে।
তবে, আয়কর আইনজীবীগণের
মতে, “নির্ধারিত কর দিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে করমুক্ত এসব সুবিধা বাতিল হবে। তখন এসব সুবিধার জন্যও তাদের কর দিতে হবে।”
এছাড়া
সরকারি চাকরিজীবী করদাতা যদি চাকরির দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো বিশেষ
সরকারি ভাতা, সুবিধা বা আনুতোষিক পান সেক্ষেত্রে সেটির জন্য কর দিতে হবে
না। এমনকি বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের বর্তমানে শুল্কমুক্ত সুবিধায় একটি গাড়ি
দেশে আমদানি করার অনুমতি রয়েছে। তবে, সম্প্রতি তাদের এই আমদানি করা গাড়ির
উপর (আমদানি শুল্ক ২৫%,ভ্যাট ১৫%, করভার ৩৩%) মোট ৪৩% শুল্ক আরোপের
সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আগামী বাজেটেই এই প্রস্তাব করা হতে
পারে। অথচ সাধারণ নাগরিকদের একটি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অনেক
বেশি শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের এই উচ্চহারে করমুক্ত
সুবিধা কি প্রকৃত অর্থেই জনগণের জন্য কল্যাণকর? বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে
অনেক কর্মচারীগণ সরকারের এই বিশেষ করমুক্তি সুবিধাকে নিজেদের স্বার্থেই
ব্যবহার করে আসছেন। ফলে, সরকার বিপুল অর্থ রাজস্ব হারাচ্ছে আর জনগণ তার
ন্যায্য প্রাপ্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় আসছে বাজেট
২০২৪-২৫ এ সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই করমুক্ত সুবিধা প্রত্যাখ্যান করছে।
দেশ বর্তমানে এক আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। দেশীয় মুদ্রার দরপতন,
রিজার্ভ সংকট, বৈদেশিক ঋণের বোঝা প্রভৃতি কারণে সরকারের আরো অধিক আয়কর
সংগ্রহ করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। আয়কর মুক্ত সুবিধা মূলত বৃহৎ পরিসরে জনগণকে
সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই সরকার তাঁর আমলাদের ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে থাকে।
কিন্তু এই সুবিধা বর্তমানে নানা মহলে সমালোচিত হচ্ছে। জনগণ তার প্রাপ্য
সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা আরো বেশি দৃশ্যমান
হচ্ছিল। তাই, সবদিক বিবেচনায় সরকার কর বৈষম্য দূরীকরণে বদ্ধ পরিকর এবং
সরাসরি জনসেবায় জড়িত এরূপ কর্মকান্ড ব্যতীত অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের ওপর
আয়কর মুক্ত সুবিধা সীমিত করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য একটাই যেন সরকারি বাজেটের
অর্থ অপচয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে রোধ করা সম্ভব হয় এবং সাময়িক অর্থ সংকটে একটি
যুগান্তকারী পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়।
শিক্ষার্থী: একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস্