ট্রেন
থেকে পড়ে নিখোঁজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের সোহেল
মোল্লা তানভীরের লাশ উদ্ধার হয়েছে। রোববার (২ জুন) দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে
সাত কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর রায়পুরা ও কুমিল্লার গৌরিপুর এলাকার মাঝামাঝি
স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তার লাশ বাড়িতে নিয়ে
আনা হয়।
তানভীরের বয়স ১৭ বছর। তবে প্রবাসে যাওয়ার স্বার্থে পাসপোর্ট
করতে গিয়ে কাগজে কলমে বয়স কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ৩১ মে বিকেলে সে
কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশন পার হওয়ার পর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে পড়ে
মেঘনা নদীতে ডুবে যায়।
তানভীরের আত্মীয় মো. হাসান জানান, সন্ধ্যা ছয়টার
দিকে বাড়িতে লাশ নিয়ে আসা হয়। লাশ আসার পর বাড়িতে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের
অবতারণা হয়। এক ভাই এক বোনের মধ্যে ছোট ছিল তানভীর। বোন আশা মণির বিয়ে হয়ে
গেছে। পরিবারটিতে বাবা-মা ছাড়া আর কেউ রইলো না।
সোহেলের মামা মো. ইমরান
হোসেন বলেন, আমার বোনের পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল না। ভাগিনা যেন জীবনের
প্রতি দায়িত্বশীল হয় সেজন্য তাকে প্রবাসে পাঠানোর চিন্তা করা হয়। এছাড়া
প্রবাসে যাওয়া ও প্লেনে উঠার খুব শখ ছিল তানভীরের। তার বাবা কখনো ছেলের শখ
অপূর্ণ রাখেননি। প্রবাসে যাওয়ার বিষয়টা এক রকম তার শখ পূরণ করার বিষয়ও কাজ
করেছে।
কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক
বলেন, গত তিনদিন নৌ পুলিশসহ আমরা লাশ উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করি। রোববার
দুপুরে রায়পুরা এলাকায় এক জেলে পানিতে লাশ ভাসতে দেখে সেখানকার পুলিশে খবর
দেয়। পুলিশের সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিবারের
লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাড়ে ছয় লাখ টাকা চুক্তিতে মালয়েশিয়ার
যাওয়ার কথা ছিল তানভীরের। ৩১ মে সকালে ঢাকায় যাওয়ার পর জানতে পারেন
তানভীরের জন্য বিমানের টিকিট ম্যানেজ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল
এজেন্সি। তাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আগামী পাঁচ সাতদিনের মধ্যে
টিকিট ম্যানেজ করে তানভীরকে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় তানভীর ও তার স্বজনরা
উপকুল এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ট্রেনটি ভৈরব রেলওয়ে
স্টেশন পার হওয়ার পর সিট থেকে উঠে দরজার সামনে যায় তানভীর। মুহূর্তেই সে
মেঘনা সেতুতে পড়ে যায়। সেখানে উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে সঙ্গে
থাকা স্বজনরা বুঝতে পারেন তানভীরই পড়ে গেছেন। এরপর থেকে তার লাশ খোঁজাখুজি
শুরু হয়। রোববার এক জেলে লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পরিবারের
লোকজন গিয়ে তানভীরকে শনাক্ত করে।