পরিবেশ রক্ষায়
রাজধানীসহ সারা দেশের গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠনে কেন নির্দেশনা দেওয়া
হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিবসহ
সংশ্লিষ্টদের আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ
সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৭ মে) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং
বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল
জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এর
আগে, ৫ মে পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারা দেশে গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে
হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায়
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এ
রিট দায়ের করে। এইচআরপিবির পক্ষে রিট পিটিশনারকারীরা হলেন– অ্যাডভোকেট মো.
ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী, মো. এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া এবং রিপন বাড়ৈ। মন্ত্রী
পরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু
পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের
রিটে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে দাবি করা হয়, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার
জন্য ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার তা দিন দিন কমছে। সম্প্রতি
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে, যে
কারণে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিক বনায়ন
চুক্তিতে সারা দেশে লাগানো গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ
প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে, যা বন্ধ না হলে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে
ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রিটে কয়েকটি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-
১.
গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে সাত
দিনের মধ্যে পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে
সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন, যারা প্রয়োজনে ঢাকা শহরে গাছ কাটার অনুমতি
দেবে।
২. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সাত দিনের মধ্যে একটি
সার্কুলার ইস্যু করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পরিবেশ অফিসার, সরকারি
কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা
সেক্রেটারি এবং সিভিল সার্জনের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেবেন, যাদের
অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না।
৩. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
সাত দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের
নেতৃত্বে কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ অফিসার,
অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ড এবং এলজিইডির এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারে
সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেবেন, যাদের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না।
৪.
কমিটি গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত সব বিবাদী নিজ নিজ এলাকায় যাতে কোনও গাছ কাটা
না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ চাওয়া হয় এবং দুই সপ্তাহের
মধ্যে আদালতে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়। গাছ কাটা
বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না,
ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা এবং উপজেলা শহরে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে
কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ এর বিধানে গাছ
লাগানোর চুক্তিভুক্ত পক্ষকে অর্থ দেওয়ার বিধান সংযুক্ত করার নির্দেশ কেন
দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।