শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
ব্রাহ্মণপাড়ায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সফল পাঁচ জয়িতার সফলতার গল্প
ইসমাইল নয়ন।।
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১:০০ এএম |



কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সফল পাঁচ জয়িতা শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল জননী, অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী যে নারী, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে সফল হয়েছেন যে নারী,সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী তাদের পাঁচ জয়িতার হিসেবে নির্বাচিত করেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতা লুৎফা ইয়ামিন।
শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী যে নারীঃ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া মালাপাড়া গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন মোসাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসী। ছিল যৌথ পরিবার। ছয় বোনসহ অনেক বড় সংসার ছিলো বাবার। দরিদ্র হওয়ায় লেখাপড়া সংসার চালানো খুব কষ্ট হতো। কিন্তু থেমে থাকেনি সে। নিজের যোগ্যতায় নিজে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। ডিগ্রিতে পড়া অবস্থায় উপবৃত্তির টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন ক্রয় করে সামান্য রোজগার হয়। ২০০৯ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। কিন্তু শশুড় বাড়ি থেকে তেমন সহযোগিতা পায়নি। শশুড় বাড়ি থেকে এম.বি.এস ২য় বিভাগ পাশ করার পর ২০১০ সালে নিজের যোগ্যতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি পায়। বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার দড়িকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি করছে সে। সে একজন
শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যে অর্জনকারী যে নারীঃ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া শশীদল ইউনিয়নে জন্মগ্রহন করেন মেহেরুন্নেছা স্বপ্না। মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। কিন্তু সৎ মা ভালো ছিলো না। তাদের ভাইবোনদের উপর অত্যাচার চালাতো। অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে সেলাই মেশিন কাজ শিখে। সেলাই মেশিন কাজ শিখে শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতো। এরই সুযোগে কুমিল্লা বিসিকে একটি কুটির শিল্পে মাসিক বেতনে চাকুরি শুরু করে। কিন্তু বেশিদিন চাকুরি করা যায় নাই। স্বামী ছিলো বেকার। এরই মধ্যে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। মার্কেট থেকে কাটা কাপড় এনে ব্লাউজ পায়জামা ১০/২০ টাকা করে কাজ করে পেতো। পরবর্তীতে হাতের কাজ ভালোভাবে শিখে কিছু টাকা রোজগার করতে পারা যায়। এভাবে নিজেকে উদ্যেক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে কাজ করতে থাকে। ২০০৮ সালে যুব উন্নয়ন থেকে ঋন নিয়ে কাপড় ক্রয় করে কাতুয়া বানিয়ে বিক্রি শুরু করে লাভবান হতে থাকে। তারপর একে একে থ্রি-পিচ, বাটিকের কাজ শুরু করে লাভবান হতে থাকে। সবশেষে ২০১৭ সালে ২ টি মেশিন নিয়ে ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পূর্বাশা টেইলার্স নামে ব্যবসা চালু করে। এছাড়া পূর্বাশা যুব মহিলা সংস্থা আছে। এই রোজগার দিয়ে লেখাপড়ার খরচসহ মাসে ৩০/৩৫ হাজার টাকা রোজগার করা যায়। তাই মেহেরুন্নেছা স্বপ্না একজন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যে অর্জনকারী নারী।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্দ্যেমে জীবন শুরু করেছেন যে নারীঃ কুমিল্লার দেবিদ্বার ভবানীপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন মোসাঃ হুল চাঁন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিলো বেশ ভালো। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর থেকেই অশান্তি শুরু হয় শশুড় বাড়িতে। দেবর ননস জা সকলেই অত্যাচার করতো তাকে। কিন্তু স্বামী কখনো প্রতিবাদ করেনি। এভাবে জীবন অত্যাচারের মধ্য দিয়ে কেটে যাচ্ছিল। একদিন মরিচ বাটা চোখে দিয়ে দেয় শশুড় বাড়ির লোকজন। এরকম অনেক অত্যাচার করে শশুড় বাড়ির লোকজন। এরই মধ্যে ৩ সন্তানের জন্ম হয় এবং স্বামী মারা যায়। আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ হয়। তখন তার দেবর একটি সেলাই মেশিন কিনে দেয় এবং কাজ শিখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাপড় বিক্রি করে। এসব আয় দিয়েই সংসার লেখাপড়ার খরচ চালানো হতো। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাপড় বিক্রি করতে গিয়ে প্রতিবেশির অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু সে থেমে থাকেনি। সকল বাধা উপেক্ষা করে লেখাপড়া সন্তানদের করিয়েছে। ১ম ছেলে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে দোকান নিয়েছে, ২য় ছেলে টাইটেল পাশ করে মসজিদের ইমাম ও মেয়ে এসএসসি পাশ করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্দ্যেমে জীবন শুরু করেছেন মোসাঃ হুল চাঁন।
সফল জননী যে নারীঃ
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া ধান্যদৌল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক খান চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আর্শেদা খাতুন। ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে ৬ সন্তানের জননী হন তিনি। এরই মধ্যে স্বামী আব্দুর রাজ্জাক খান চৌধুরীর মৃত্যুর পর আর্শেদা খাতুন ৬ সন্তানকে নিয়ে পারিবারিক জীবনে ব্যাপক বিপত্তির মধ্যে পতিত হন। স্বামীর মৃত্যুর পর সরকারি চাকরি পেলেও তিনি তা করেননি। তার স্বপ্ন ছিল ছেলেমেয়েদের লালন-পালন করা। তখনকার পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে সন্তানকে লেখাপড়া থেকে বিচ্যুত হতে দেন নাই। আর যার দরুন তার ৬ সন্তান একে একে গ্র্যাজুয়েট সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে মাতা হিসাবে আর্শেদা খাতুন এর শতভাগ নিরলস পরিশ্রম অন্তর্নিহিত হয়েছে। তার সন্তানদের মধ্যে মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী একজন সফল প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি।  তিনি একজন সফল জননী।
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারীঃ
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন শিরিনা বেগম। পাঁচ ভাই ও চার বোনসহ পরিবারে বড় সংসার। পিতার রোজগারে সংসার চলতো। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাকে বিয়ে দেয়া হয় সেখানেও অভাব অনটনে জীবন যাপন চলছিল কিন্তু ছোটবেলা থাকতেই তারপরের উপকার করতে ভালো লাগতো। মানুষের বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়তো, সেজন্য এলাকায় নির্বাচন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় তাকে। এতে টানা দুইবার ইউপি মহিলা মেম্বার নির্বাচিত হয়েছে সে। তার ওয়ার্ডে বাল্যবিবাহ হলে সে তা প্রতিরোধ করে এখন পর্যন্ত ২৫টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে। মানুষের সেবা করাই তার একমাত্র নেশা। সমাজ উন্নয়নে সে একজন সফল নারী।












সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আন্দালিভ রহমান পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft